ঢাকা, সিএইচটি নিউজ ।। শ্রমজীবী ফ্রন্ট ও ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান ও মুক্তির দাবিতে ঢাকায় সংহতি সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের চার গণসসংগঠন, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(শ্রমজীবী ফ্রন্ট), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
আজ শুক্রবার (২৮ জুন ২০১৯) বিকাল সাড়ে
তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে জাতীয় রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনসমূহের
নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমজীবী ফ্রন্টের
কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা।
সংহতি সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির
সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সরকার-রাষ্ট্র মাইকেল চাকমাকে সন্ধান দেবে,
কিন্তু নিখোঁজের ২ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এখনো কোন সন্ধান দিতে পারেনি যা খুবই
উদ্বেগজনক। মাইকেল চাকমাকে সন্ধানে রাষ্ট্র চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, মাইকেল চাকমার নিখোঁজের ঘটনা গণতান্ত্রিক ও মানবিক
সম্পন্ন কোন মানুষ মেনে নিতে পারেনি। সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট
কোন শক্তি তাকে অপহরণ করেনি। নতুবা সন্দেহ তাদের উপর পড়বে।
তিনি বলেন, যদি তাকে রাষ্ট্রীয় শক্তি দ্বারা তুলে নেয়া হয়ে থাকে
এবং তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে কোর্টে হাজির করা হোক। যে কোন মানুষের বিচার পাবার অধিকার
রয়েছে। রাষ্ট্র বিচার ছাড়া কোন মানুষকে অপহরণ করে রাখতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে
নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সোহেল তাজের ভাগ্নে উদ্ধার তার উৎকৃষ্ট
উদাহরণ।তিনি সরকারকে অবিলম্বে মাইকেল চাকমাকে তার পরিবার ও সংগঠনের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার
জোর দাবি জানান এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেন তাকে ফিরিয়ে না দেয়া পর্য্ন্ত তার মুক্তির
লড়াই চলবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ
কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল রশিদ ফিরোজ বলেন, একদিকে
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অন্যদিকে ব্যক্তি সন্ত্রাস চলছে। রিফাতকে বর্বরভাবে দিন
দুপুরে হত্যার মাধ্যমে বুঝতে অসুবিধা হয় না মানুষের নিরাপত্তাহীনতা কোন পর্যায়ে চলে
গেছে।
তিনি বলেন, মাইকেল চাকমা কোথায় আছে তা জানার অধিকার দেশবাসীর রয়েছে।সরকার যদি
মাইকেল কোথায় আছে তা না জানায় তাহলে দেশবাসী মনে করবে তাকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা দ্বারা
গুম করা হয়েছে। তিনি খুন-গুম-অপহরণে বিরুদ্ধে এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ
আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
বাসদ মার্কসবাদী কেন্দ্রীয় পরিচালনার
সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, মাইকেল চাকমার সন্ধান ও মুক্তি কেবল পাহাড়ি ৪ সংগঠনের
না। এই দাবি সারা দেশবাসীর।আমরা মনে করি মাইকেলের অপহরণের পিছনে রাষ্ট্রীয় কোন না কোন
শক্তি দায়ী।যদি তারা অপহরণ না করে থাকে তাহলেও মাইকেলের সন্ধান দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই, পরিস্থিতি এমন, যে কোন সময় যে কেউ গুমের শিকার হতে পারে।
তিনি আরো
বলেন, তথাকথিত বন্ধুক যুদ্ধ-ক্রসফায়ারের নামে যে ভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তা পৃথিবীতে
নজীর বিহীন।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল
হাকিম বলেন, হাইকোর্ট মাইকেল চাকমাকে সন্ধান দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সরকার
এখনো তার সন্ধান দেয়নি। তিনি বলেন, সমস্ত দেশে নৈরাজ্য চলছে। এর জন্য দায়ী এদেশের শাসক
গোষ্ঠি। শাসকগোষ্ঠী আইনের কথা বলে কিন্তু নিজেরা আইন মানেনা।জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন
ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে শাসকগোষ্ঠি।
লেখক ওমর তারেক চৌধুরি বলেন, মাইকেল
চাকমা অপরাধী না তিনি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতা।রাজনৈতিক ভাবে যারা প্রভাবশালী তাদেরকে
ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু যারা প্রভাবশালী না তাদেরকে গুম করা হয়।তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের
মানুষের অধিকারের কথা বলার কারণে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে।
সংহতি সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন,
নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, জাতীয় গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান,গার্মেন্স
শ্রমিক সংতির সভাপতি তসলিমা আখতার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব
রুমন, ছাত্র ফেডারেশনের, সাংগঠনিক সম্পাদক
মিতু সরকার, গণমুক্তি গানের দল সাধারণ সম্পাদক ফারহানা হক শ্যামা, শ্রমিক হত্যা প্রতিরোধ
কমিটির নাহিদ সুলতানা লিসা প্রমুখ।
সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি
নিরুপা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরাসহ চার সংগঠনের
নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গত ৯ এপ্রিলে মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হন। এদিন বিকালে
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে ঢাকা রওনা দেয়ার পর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
---------------
---------------