""

সন্ত্রাসী সুলেন-নবীন-সূর্য-এলিন গংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকাবাসীর

মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা এলাকাবাসী সন্ত্রাসী সুলেন-নবীন-সূর্য-এলিন গংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

‘সচেতন মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকাবাসী’ নামে প্রচারিত একটি লিফলেটে তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি এ দাবি জানান। লিফলেটটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ রয়েছে ০৯ জানুয়ারি ২০২১।

লিফলেটটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিলি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলাকার অনেকে লিফলেটটি পেয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

সন্ত্রাসী সুলেন-নবীন-সূর্য-এলিন গংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিন’ শিরোনামের উক্ত লিফলেটটি আমাদের হাতে এসেছে। পাঠকদের সুবিধার্থে লিফলেটটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো এখানে তুলে ধরা হলো:

প্রচারিত লিফলেটে বলা হয়, ‘আমরা মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার জনগন শান্তিতে জীবন যাপন করতে চাই। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, একটি বিশেষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আমাদেরকে সুখে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। তারা মাত্র কয়েকজন দলবদ্ধ হইয়া অস্ত্রশস্ত্র সহ এলাকায় জনগনের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। খুন, অপহরণ, মুক্তিপন আদায়, মারধর করা ইত্যাদি কার্যকলাপ করে তারা আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছে। আমরা মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগন এখন সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি’।


সন্ত্রাসীরা ‘মাটিরাঙ্গায় মাছের বাজারে আব্দুর রশিদ বিল্ডিং-এ অবস্থান করে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে’ উল্লেখ করে লিফিলেটে কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘২০১৮ সাল থেকে সন্ত্রাসীদের দ্বারা দুই ইউপিডিএফ সদস্য খুন, ১০ জন গ্রামবাসী অপহরণ, ৪ জন গ্রামবাসী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন’। এছাড়াও সন্ত্রাসীরা জনগণকে নিয়মিত ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জীবননাশসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে থাকে এবং তারা ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত রয়েছে বলে লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছে।

লিফলেটে প্রশ্ন রেখে বলা হয়, ‘আমাদের প্রশ্ন, মাত্র কয়েকজন যুবক কিভাবে প্রশাসনের সদর দপ্তর এলাকায় থেকে ২০১৮ সাল থেকে গত ৩ বছর ধরে দিনে-দুপুরে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজ চালাতে পারে? প্রশাসন কি এসব জানে না, দেখে না? নাকি তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে? নাকি দেখেও বিশেষ কারনে না দেখার ভান করে থাকে? তবে যেই হোক, আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, আমরা মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকার জনগন সহজ সরল হতে পারি, কিন্তু আমরা এত বোকা নই। আমরা জানি, কোন একটি প্রভাবশালী বা শক্তিশালী মহলের আশির্বাদ না থাকলে সন্ত্রাসীরা এতসব করতে পারতো না। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, কেন এই প্রভাবশালী মহলটি সন্ত্রাসীদের খুন, অপহরণসহ সন্ত্রাসী কাজে মদদ যুগিয়ে যাচ্ছে? আমরা মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকার জনগন কি অপরাধ করেছি, যে তারা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের জীবন থেকে শান্তি কেড়ে নেবে? আমাদের কি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নাগরিকদের মতো শান্তিতে বসবাস করার অধিকার নেই? আর যদি সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে তাদের কুকর্ম চালাতে পারে, তাহলে এলাকায় প্রশাসন থাকার মানে কি, পুলিশ থাকার মানে কি? আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার মানে কি? তাদের দায়িত্ব কি জনগনের নিরাপত্তা দেয়া নয়? তাহলে কেন তারা এখানে রয়েছে এবং জনগনের দেয়া ট্যাক্সের টাকা প্রতিমাসে বেতন হিসেবে নিচ্ছে? প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনী যদি সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায় হয়, তাদের দমন করার শক্তি না থাকে, তাহলে তারা তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিক, জনগনকে বলুক এবং মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকা থেকে চলে যাক’।

প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অপারগ হলেও, ঘটনা বিষয়ে সংবাদপত্রে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিপোর্ট করা হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের শাসানো হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি যে, সর্বশেষ গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপন চাকমাকে অপহরনের সংবাদ পত্রিকায় ছাপানোর কারনে কালেরকণ্ঠ পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতাকে প্রভাবশালী মহলের গালাগাল শুনতে হয়েছে। উক্ত পত্রিকার সংবাদদাতা মোঃ দিদারের সাথে সাক্ষাতকারে সন্ত্রাসী নবীন চাকমা অপহরনের দায় স্বীকার করেছিল। (রিপোর্টটি পড়ুন: https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2021/01/03/991787) নবীন চাকমা আরো বলেছে যে, স্বপন চাকমা ইউপিডিএফের সক্রিয় সদস্য এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। নবীন চাকমা জানায় ‘এ সব বিষয়ে জানার জন্য তাকে আটক করে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসা শেষ হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। যেন কোন র‌্যাব বা পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য!
আমাদের প্রশ্ন হলো, নবীন চাকমা কে? কি তার পরিচয়? স্বপন চাকমাকে আটক করার ক্ষমতা সে কোথায় পেলো?  তাহলে কি মাটিরাঙ্গা
গুইমারা এলাকায় আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব নবীন চাকমার মতো সন্ত্রাসীদের হাতে দেয়া হয়েছে? যদি তাই না হয়, তাহলে সে ও তার সহযোগীরা লোকজনকে ‘আটক করে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ধৃষ্টতা পায় কিভাবে? তাদের এই বেআইনী, রাষ্ট্রবিরোধী ও চরম ধৃষ্টতাপূর্ন কার্যকলাপ সত্বেও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? আমরা সাধারন জনগন এসব প্রশ্নের জবাব চাই।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি সম্পর্কে লিফলেটে বলা হয়, ‘মাটিরাঙ্গা-গুইমারা এলাকায় সন্ত্রাসীদের দ্বারা জনগনের উপর এত উপাত চালানো হচ্ছে, অথচ তারপরও আওয়ামী লীগ, বিএনপি একেবারে নিশ্চুপ রয়েছে। এটা খুবই রহস্যজনক। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দূরের কথা, তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দ পর্যন্ত করছে না। এর মানে কি? আওয়ামী লীগ, বিএনপি দলের নেতারা কেবল ভোটের সময় জনগনের কাছে ভোট চাইতে আসে। তারপর নির্বাচনে জিতলে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জনগনের কথা তারা মোটেই ভাবে না। জনগনের দুঃখের সময়, দুর্দশার সময় তাদের পাওয়া যায় না। তারা কেবল নির্বাচনের সময় জনগনের বন্ধু সাজতে আসে। কিন্তু আমরা এখন তাদের হাড়ে হাড়ে চিনে ফেলেছি। ভবিষ্যতে তারা আর আমাদেরকে বোকা বানাতে পারবে না’।

লিফলেটে সরকার, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন। সন্ত্রাসী সুলেন-নবীন-সূর্য-এলিনগংদের দমন করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে দিন। এছাড়া সন্ত্রাসী কাজে সহায়তা দেয়ার অপরাধে ভাই ভাই বোর্ডিং ও আব্দুর রশিদ বিল্ডিং-এর মালিকসহ সন্ত্রাসে মদদদাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিন’।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।





0/Post a Comment/Comments