""

চলে গেলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা

সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অনন্ত বিহারী খীসা। ফাইল ছবি


না ফেরার দেশে চলে গেলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত
  বিকাশ খীসার পিতা অনন্ত বিহারী খীসা। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১) দুপুরে খাগড়াছড়ি সদরের অনন্ত মাস্টার পাড়ার নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর শূণ্যতা সৃষ্টি হলো।

আগামীকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় অনন্ত মাষ্টার পাড়া শ্মশানে তাঁর দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে বলে পারিবারিকভাবে জানা গেছে।

অনন্ত বিহারী খীসা ১৯৩৭ সালের ১ নভেম্বর মহালছড়ির খুলারাম পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি খাগড়াছড়ির খবংপুড়িয়া স্কুলে নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষা ((শিশু শ্রেণী, প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণী), খাগড়াছড়ি এম,ই স্কুলে (Middle English School) তৃতীয় থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় (High English School) হতে ৭ম শ্রেণী থেকে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় (বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষার তকালীন নাম) উত্তীর্ণ হন। তারপর ঢাকার জগন্নাথ কলেজে দু’বছর পড়ার পর চট্টগ্রামের কানুনগো পাড়া স্যার আশুতোষ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে বি,এ পাশ করার পর ছাত্রজীবনের ইতি টানেন। (সূত্র: অনন্ত বিহারী খীসার সাক্ষাতকার)।

অনন্ত বিহারী খীসা ছাত্র জীবনে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের কানুনগো পাড়ার শ্রীপুর গ্রামে এক ছাত্র-অভিভাবক সম্মেলনের মাধ্যমে Chittagong Hill Tracts Students’ Association গঠিত হয়। এতে তিনি সভাপতি ও মৃণাল কান্তি চাকমা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এরপর তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন।

পরে তিনি শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬০ সালের ২০ এপ্রিল খাগড়াছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সাল থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেটের কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ির রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ’৯৫ সালের ১ নভেম্বর তিনি অবসরে যান।

শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকে আমৃত্যু তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক ও সমাজসেবামূলক নানা কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।

তাঁর মৃত্যুতে সিএইচটি নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।

আমরা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রজতজয়ন্তি স্মরণিকায় প্রকাশিত তাঁর একটি সাক্ষাতকার এখানে পুন:প্রকাশ করছি। নীচে তাঁর সেই সাক্ষাতকরটি দেওয়া হলো:

 

“পার্বত্য চট্টগ্রাম ভীষণভাবে অসুস্থ”

- অনন্ত বিহারী খীসা

১। আপনার জন্ম কোথায় হয়েছে? আপনার শৈশব জীবন, বেড়ে ওঠা ও সে সময়কার পাহাড়িদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কিছু বলুন।

এ. বি. খীসা: আমার জন্ম হয়েছিল বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত মহালছড়ি উপজেলার খুলরাম পাড়া নামক এক অজ পাড়াগাঁয়ে। শৈশবের প্রথম অংশটা কেটেছে ব্রিটিশ আমলে। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক, রাজনৈতিক শাসনতান্ত্রিক অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। নিরাপত্তা রক্ষা কবচের বদৌলতে জুম্মদের জীবন ছিল স্বাধীন স্বচ্ছন্দ। জীবন-জীবিকা ছিল সহজ সরল, সম্পূর্ণ নিজেদের সামাজিক রীতি-রেওয়াজের ছাঁচে ঢালা। জীবনযাত্রার মান উন্নত ছিল না, কিন্তু ছিল অনাবিল সুখ শান্তি স্বাচ্ছন্দ্য।

২। আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন? আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

এ. বি. খীসা: আমাদের পাড়ায় তখন কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকাতে আমার শিক্ষাজীবন শুরু করতে হয়েছিল ১৪মাইল দূরবর্তী খবংপুড়িয়া গ্রামে গিয়ে। সেখানে মামার বাড়িতে থেকেই সে গ্রামের স্কুলে নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করি। আমার এই নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষা (শিশু শ্রেণী, প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণী) প্রসঙ্গে আমি পরম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সহকারে স্মরণ করি সেই সময়কার সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্যাতিমান শিক্ষক বিমল চন্দ্র দেওয়ানের কথা, যিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পাকিস্তান আমলে বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। সরকার কর্তৃক তাকে “সনদ-ই-খিদমত” উপাধি প্রদান করা হয়েছিল। তার বিস্ময়কর প্রতিভা ও যাদুকরী হস্তের সংস্পর্শে না এলে আমার জীবনের মোড় বোধহয় অন্যদিকে ঘুরে যেত। খবংপুড়িয়া নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে আমি খাগড়াছড়ি এম,ই স্কুলে (Middle English School) গিয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে (High English School) গিয়ে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে যথাসময়ে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা (বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষার তকালীন নাম) পাশ করি। তারপর ঢাকার জগন্নাথ কলেজে দু’বছর পড়ার পর কানুনগো পাড়া স্যার আশুতোষ কলেজে এসে পড়তে থাকি এবং সেখান থেকে বি,এ পাশ করার পর ছাত্রজীবনের ইতি টানি।

৩। কোন পরিস্থিতিতে ১৯৫৬ সালে Chittagong Hill Tracts Students’ Association গঠিত হয়েছিল? গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করুন। আপনি সভাপতি ও মৃণাল কান্তি চাকমা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন কমিটিতে আর কারা কারা ছিলেন, তাদের মধ্যে কার কার কথা মনে আছে বলুন।

এ. বি. খীসা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই আমার মধ্যে বইপত্র পড়ার নেশা জন্ম নেয়। পাঠ্যবই বাদ দিয়ে অন্যান্য বই বেশি পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। বই পড়ার মাধ্যমে স্কুল জীবনেই আমার মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটে। কলেজ জীবনে তার ব্যাপক ব্যাপ্তি ঘটে এবং তাতে সমাজ-সচেতনতাও যুক্ত হয়। অবহেলা বঞ্চনার তীব্র দংশন যন্ত্রণা-প্রসূত পূঞ্জীভূত ক্ষোভের তাগিদে কলেজ জীবনের দুর্জয় তারুণ্য আমাকে সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কাজে নেমে পড়ার দুর্দান্ত সাহস যুগিয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাপদ জুম্ম সম্প্র্রদায় সমূহের নীরব কান্নাকে আর্তচিকারে পরিণত করতে। তাই বড়সড় ঝুঁকি নিয়েই আমি ১৯৫৬ সালে শ্রীপুরে এক বিরাট ছাত্র-অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলাম। তাতেই Chittagong Hill Tracts Students’ Association প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক আগ্রহী শিক্ষার্থীই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। দেখা গিয়েছে পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতি, স্থানীয় রাজনীতি, সমাজসেবামূলক নানা কর্মকাণ্ডে তারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

৪। পাকিস্তান আমলে কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও কিভাবে সংগঠন করলেন? পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারি তপরতা এবং আপনাদের পেছনে সরকারি চর লেগে থাকত সে সম্পর্কে কিছু বলুন।

এ. বি. খীসা: পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অধিকার, সাংগঠনিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এসব কোনো কিছুই ছিল না। ভারত বিভাগের সময় পাকিস্তান বিরোধিতার কারণে তখন জুম্ম সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের উপরই গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। রাজনৈতিক ব্যাপারে প্রত্যেকেরই ছিল ত্রস্ত-সন্ত্রস্ত জীবন।

রাঙ্গামাটি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমার উপরও গোয়েন্দা নজরদারি ছিল যথেষ্ট রকমের। একবার কোলকাতা থেকে পার্শ্বেলযোগে আনা আমার কয়েকটা বইও গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করে ফেলে এবং আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বারা অনেকটা হেনস্তাও করে।

আমাদের প্রতি সরকারি বৈরি মনোভাবের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে সম্মেলন বা সংগঠন করা সম্ভব ছিল না। আমাদের সেই ছাত্র সম্মেলনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে করেছি বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। আমাদের উপর সরকারি শ্যেনদৃষ্টি অবশ্যই ছিল তবে প্রত্যক্ষভাবে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি।

৫। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রামের কানুনগোপাড়ায় প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্র-অভিভাবক সম্মেলন সম্পর্কে কিছু বলুন। ব্রিটিশ আমল থেকেই কানুনগোপাড়ার বিপ্লবী ঐতিহ্য ছিল। এখান থেকে ক’জন ব্যক্তি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাদের মধ্যে কে কে আপনাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

এ. বি. খীসা: কানুনগো পাড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহের বিপ্লবী ঐতিহ্য সকলকেই অনুপ্রাণিত করে। কিংবদন্তিতুল্য সেই দত্ত পরিবারের কাহিনী কারও বিস্মৃতিতে চলে যায় না কখনও। আমার মনে পড়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর সেই দত্ত পরিবারের সুবিমল দত্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যে শ্রীপুর গ্রামে আমরা সম্মেলন করেছিলাম, সেই শ্রীপুরেই জন্ম হয়েছিল ভারতের প্রখ্যাত বিপ্লবী ও রাজনীতিক কল্পনা দত্তের।

৬। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদার দাবি জানিয়ে আপনারা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান দপ্তর করাচী থেকে আপনাদের পত্রের প্রত্যুত্তরও দেয়া হয়েছিল। সে সম্পর্কে কিছু বলুন।

এ. বি. খীসা: উল্লেখ্য যে, Excluded Area  বা শাসন বহির্ভূত এলাকা হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম তখন শাসিত হতো কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা। সে কারণে আমরা রাজধানী করাচিতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের স্মারকলিপিখানা রেজিষ্টারী ডাক যোগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাসময়ে তার একটা প্রত্যুত্তর পাওয়া গিয়েছিল। ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিধায় তার কিছু কথা এখনও আমার স্মরণে আছে। উত্তরে লেখা হয়েছিল- we shall try to devise ways and means. তখন সরকারি কাজে ইংরেজিই শুধু ব্যবহৃত হতো। আমাদের স্মারকলিপিটিও ছিল ইংরেজিতেই এবং উত্তরও দেওয়া হয়েছিলো ইংরেজিতেই অল্প কয়েকশব্দে। আমার অত্যন্ত খারাপ লাগে যে সেসব কাগজপত্র এখন আর কারও কাছে নেই। কারণ ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর আমার বিভিন্ন কাগজপত্র, বইপত্র একটি স্টীল ট্রাঙ্কে পুড়ে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেই ট্রাঙ্কটিই হারিয়ে যায়, আমি অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হই।

৭। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত রাজধানী মস্কোতে অনুষ্ঠেয় ৬ষ্ঠ বিশ্ব ছাত্র-যুব উসব (World Festival of Youth and Students) অংশগ্রহণের জন্য সারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে দু’জন মনোনীত হয়েছিলেন, তার মধ্যে আপনি একজন। সে সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করুন।

এ. বি. খীসা: কালীন জুম্ম যুব ও ছাত্র সমাজের মধ্যে একমাত্র আমিই বোধহয় পূর্বপাকিস্তান যুবলীগের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত হয়ে পড়েছিলাম। ছাত্রনেতা হিসেবে আমার বেশ খ্যাতি থাকায় আর সম্ভবত জুম্ম সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার করণে যুবলীগে আমি বেশ সমাদৃতই ছিলাম। সে কারণেই বোধহয় মস্কো যুব উসবে যোগদানের জন্য আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তকালীন বিরূপ পরিস্থিতির কারণে এবং পরে পরে সামরিক শাসন জারি হওয়াতে সবকিছুই ভেস্তে যায়। স্মর্তব্য যে, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ ছিল সম্পূর্ণভাবে বামঘেঁষা (অর্থা মস্কো ঘেঁষা) একটি আদর্শবাদী সংগঠন। যুবলীগের তখনকার সেই ১৪ দফা দাবি ও গঠনতন্ত্রের কপি এখনও আমার কাছে আছে।

৮। পাকিস্তানের সামরিক শাসনামলে কিভাবে বিপ্লবী ধারার বইপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছিলেন? সে সব সংগ্রহে রাখা তো সে সময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

এ. বি. খীসা: সামরিক শাসনের সময় তেমন কোনো কিছুই করা সম্ভব ছিল না। আমি বইপত্র সংগ্রহ করেছিলাম তার আগে ও পরে। তখন সংশ্লিষ্ট বইয়ের এজেন্ট থেকে নামমাত্র মূল্যে মস্কো ও পিকিংএর বইপত্র কেনা যেত অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে সরাসরি কোলকাতা ও পিকিং (বেইজিং) থেকেও বইপত্র আনানো যেত। ইস্টার্ণ ব্যাঙ্কের চট্টগ্রাম শাখার মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে সরাসরি কোলকাতা থেকে এবং চট্টগ্রামের ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে পিকিং থেকে আমি বেশ কয়েকবার ডাকযোগে বইপত্র এনেছিলাম। ঝুঁকি নিয়ে হলেও নেশার তাগিদে আমি বইপত্র সংগ্রহ করতাম। অতি সাবধানে সংরক্ষণ করতে হতো।

৯। ছাত্র জীবনে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক বইপত্র ডাকযোগে পার্শ্বেল আনাতে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসবাদ করেছিল, মহালছড়ি পোস্ট অফিস অনেক পুরানা–সে সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করুন।

এ. বি. খীসা: রাঙ্গামাটি স্কুলে পড়ার সময় কোলকাতা থেকে ডাকযোগে কয়েকটি বই আনাতে গিয়ে আমি ফ্যাসাদে পড়েছিলাম। গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ বইগুলি জব্দ করে ফেলে এবং আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে নানা জিজ্ঞাসাবাদের পর সাবধান করে দেয়। ঠিক সেভাবে আমাদের পাড়ার আমার এক বন্ধুর নামে যখন কোলকাতা থেকে ডাকযোগে কয়েকটি বই আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করি, তখন মহালছড়ি ডাকঘরে পার্শ্বেলটি পৌঁছার পর পরই গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বইগুলি বাজেয়াপ্ত করে এবং যার নামে পার্শ্বেলটি এসেছিল তার বাড়িতে (আমাদের গ্রামে) গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং হুমকি ধমকি দেয়। ফলে ভদ্রলোক অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। আমি ছিলাম রাঙ্গামাটিতে।

১০। পাকিস্তান আমলে যুবলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছিল না। এটি মূলত বাম প্রগতিশীলদের একটি যুব সংগঠন। এ সংগঠনের সাথে আপনার যোগাযোগ সম্পর্কে কিছু বলুন।

এ. বি. খীসা: মস্কো যুবউসব প্রসঙ্গে ৭নং প্রশ্নের উত্তরে আমি যুবলীগ প্রসঙ্গে আমার কথাগুলো বলে ফেলেছি।

১১। ১৯৭২-এ আপনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। আটক করবে এমন আভাস পেয়েও আত্মগোপন করেন নি। আপনাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি স্কুলসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশীরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মঘট করেছিল। রাঙ্গামাটিতে কলেজ ছাত্রদের জঙ্গী মিছিল হয়েছিল। পোস্টার ও লিফলেট ছেপেছিল। কারাগারে ছাত্ররা আপনার সাথে সাক্ষাতও করেছিল, সে সম্পর্কে বলুন। তখনকার ছাত্র রাজনীতির সাথে এখনকার ছাত্র রাজনীতির মৌলিক পার্থক্য আছে কি?

এ. বি. খীসা: আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন আভাস ইঙ্গিত পাওয়ার পরও আমি আত্মগোপনে যাইনি দুটো কারণে। প্রথমত, আমাকে গ্রেফতার করা হবে এটা আমি একেবারে বিশ্বাসই করতে পারিনি যেহেতু সেরকম কোনো কারণই তখন ছিল না। দ্বিতীয়ত, ভয়ে পালিয়ে যাওয়া কাপুরুষের লক্ষণ ভেবে আমি সেপথে পা বাড়াইনি।

গ্রেফতারের পর থেকে মুক্তি পর্যন্ত সময়কালের নানা ঘটনা, নানা দৃশ্যপট আমার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল। স্বল্পকালীন কারাজীবনটা আমার জীবনের এক অনন্য অধ্যায়, আনন্দ-বেদনার এক ছোটখাট মহাকাব্য বিশেষ। স্বল্প পরিসরে সে সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলা সম্ভব নয়। এক কথায় বলব খাগড়াছড়ির এক ঘৃণ্য অপশক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলখানার নারকীয় পরিবেশে কাটানো আমার সেই বেদনাবিধুর দুর্বিসহ দিনগুলি আমাকে পীড়া দিয়েছে, আহত করেছে, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু তার বিপরীতে আমার অর্জনও কম ছিল না বলে মনে করি। আমার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে, ছাত্র সমাজের মধ্যে তখন যে জাগরণ, যে একতা, সমাজ চেতনার যে উন্মেষ বহিঃপ্রকাশ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠের যে স্ফুরণ আমি দেখতে পেয়েছিলাম সেটা আমাকে যুগপৎ  পুলকিত, উদ্দীপিত ও অভিভূত করে ফেলেছিল। আমি সেই ছাত্র সমাজ ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ।

আমার দৃষ্টিতে তখনকার ছাত্র রাজনীতি আর বর্তমানের ছাত্ররাজনীতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে যে, তখনকার ছাত্ররাজনীতি ছিল একমুখী এবং নীতিঘনিষ্ট আর বর্তমান ছাত্ররাজনীতি হচ্ছে বহুমুখী এবং ক্ষেত্রবিশেষে সুবিধাবাদ-ক্লেদাক্ত।

১২। রাঙ্গামাটিতে অন্তরীণ থাকাকালে মানবেন্দ্র লারমা আপনার সাথে সাক্ষাত করে রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছিলেন। লারমা আপনাকে জনসংহতি সমিতিতে প্রধান দায়িত্ব গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতি করেও আপনি পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন নি। আন্দোলন বিষয়ে এম. এন. লারমার সাথে কোন মত পার্থক্য ছিল কি, যার কারণে আপনি পরবর্তীতে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েননি?

এ. বি. খীসা: সেই ছাত্র জীবন থেকেই এম,এন লারমার সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্টতা ছিল। তার সাথে বিভিন্ন সময়ে অনেককিছুই আলোচনা হয়েছে। নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে খাগড়াছড়িতে আমার বাড়িতে বসেই। জোর আহ্বান সত্ত্বেও আমি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত হইনি দুটো কারণে। প্রথমত, আমার ভঙ্গুর স্বাস্থ্য রাজনীতির সেই অনিয়ম-ভারাক্রান্ত অনিয়ন্ত্রিত জীবনের ধকল একেবারেই সইতে পারবে না সেই ভয়, দ্বিতীয়ত, শিক্ষকতা পেশাটা একেবারে শুরু থেকেই নেশায় পরিণত হয়ে যাওয়াতে সেটা ছাড়াও সম্ভব ছিল না। তবে যতদূর সম্ভব আমি তাদের সাথে পরোক্ষভাবেই ছিলাম।

১৩। জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠাকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বলে উল্লেখ রয়েছে। এর ভিত্তিতে ৪২ বর্ষপূর্তিও পালন করেছে। আমরা জানি, ঐ তারিখে ঢাকায় শেখ মুজিবের নিকট স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল। ঐ দলে প্রধান ছিলেন মঙ চিফ,  মানবেন্দ্র লারমা ও বিনীতা রায় ছিলেন সদস্য। একই দিনে ঢাকায় মুজিবের নিকট স্মারকলিপি প্রদান আর রাঙ্গামাটিতে জনসংহতি সমিতি গঠন কিভাবে সম্ভব, তথ্যগত এতবড় ভুল সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কেউ কথা না বললেও ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য তা বিভ্রান্তির জন্ম দেবে।

যতদূর জানি, আপনি ’৭২-এর মে কারামুক্তি লাভ করেছিলেন। তারপরেই রাঙ্গামাটিতে ইন্দ্রপুরি সিনেমা হলে এক সম্মেলনে জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়েছিল। তাহলে ১৫ ফেব্রুয়ারি তো জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠা দিবস ধরা ভুল। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য।

এ. বি. খীসা: এই মুহূর্তে আমার হাতে তথ্য-প্রমাণ-সমৃদ্ধ কোনো কার্যকর হাতিয়ার না থাকায় আমি আপাতত এই বিতর্কে নিজেকে জড়িত করতে চাই না।

১৪। আমরা জানি আপনার সমাসময়িক সুধাকর খীসাও সে সময় ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মুক্তি নিয়ে ভাবতেন। তিনি বাড়িতে থাকার সময় পানিতে ডুবে মারা যান। তার সম্পর্কে কিছু বলুন।

এ. বি. খীসা: সুধাকর খীসা আমার অনেক জুনিয়র ছিলেন। নানা কারণেই তার সাথে আমার নৈকট্য ছিল অনেক বেশি এবং সঙ্গত কারণেই তার উপর আমার ভরসা প্রত্যাশা ছিল ততোধিক। তার মত একজন প্রতিশ্রুতিশীল অপার সম্ভাবনাময় উদীয়মান তরুণকে হারিয়ে সমাজ অশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

১৫। আপনি শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন কি করছেন? পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে কোন বই লেখার চিন্তা ভাবনা আছে কি?

এ. বি. খীসা: অবসর জীবনের শুরু থেকেই আমি জেলা পর্যায়ের কয়েকটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তবে এখন বয়সজনিত শারীরিক অসামর্থ্যরে কারণে সেসব কাজও অনেক কমাতে বাধ্য হয়েছি।

লেখালেখি আমি তেমন একটা করি না। সেই যোগ্যতাও বোধহয় আমার নেই। উদ্যোক্তাদের নাড়োরবান্দা তাগিদে এখানকার কয়েকটি সংকলন বা ম্যাগাজিনে কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছি মাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কোনো বই লিখার চিন্তাভাবনা আমার আপাতত নেই। তবে শিক্ষা ব্যবস্থা, বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে কিছু প্রবন্ধ লিখার কথা ভাবছি।

১৬। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

এ. বি. খীসা: আমি দেখি যে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ কথাটাই বর্তমানে একটি বড় misnomer. কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বলে কোনো ভূখণ্ডের অস্তিত্ব এখন বাংলাদেশের মানচিত্রে দেখতে পাওয়া যায় না। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নামক সংস্থাটিই অনেকটা জোর করেই এই কথাটা ধরে রেখেছে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বদলে ‘পার্বত্য ভূমি’ কথাটাকেই আমিও বেশি যুতসই মনে করি। যাহোক এখনও অনেকক্ষেত্রেই সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে বোঝাতে কথাটা চালু রয়েছে বিধায় এখানেও সেভাবেই চলুক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক ভূখণ্ডটা সরকারিভাবে বিলুপ্ত হওয়ার বহু পূর্বেই আমাদের চেনা-জানা সেই  পার্বত্য চট্টগ্রাম তার সেই চিরাচরিত বিশেষ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে শুধু খোলসটা নিয়েই টিকে ছিল। অর্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক, প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ একে একে সবই উবে গিয়েছে। যুক্তরাজ্যে একটা কথা বলা হয়ে থাকে- The King is dead, Long live the king. কথাটা অর্থহীন বা অমূলক নয়। সেভাবে আমারও বলার ইচ্ছা জাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম মৃত, পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক।নীতি আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যের কারণে মূল পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সম্বন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ পরিস্থিতি নানা অবয়বে নানা চেহারায় ধরা দিচ্ছে। বর্ণিতও হচ্ছে সেভাবে। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে দেখা হচ্ছে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার আগ্রাসী মনমানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। আসল চিত্র সেখানে নেই। সত্যবাবু সেখানে মৃত, ন্যায়নীতি, মানবতা সেখানে পদদলিত। একটু সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে সাদাচোখে দেখলে দেখা যাবে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘকাল যাবত ভীষণভাবে অসুস্থ। বিপর্যস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে এবং অযথা জুম্ম-অস্তিত্ব-বিনাশী মারণাস্ত্র প্রযুক্ত হওয়ার কারণেই এই অসুস্থতা। বর্তমান পর্যায়ে রোগটা স্পষ্টতই ক্যানসার। যথাসময়ে যথাযথভাবে তার চিকিসা চালানো হয়নি, অপচিকিসাই চলেছে দিনের পর দিন। এখনও তা-ই চলছে। আমি নিদারুণভাবে উদ্বিগ্ন।

১৭। বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র আন্দোলনকে কীভাবে দেখেন? তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

এ. বি. খীসা: ছাত্র আন্দোলন আছে, চলবে এটা আনন্দের বিষয়। তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া নয়, তাদের উপর আমার তথা সমাজের প্রত্যাশার কথাই সামান্য একটু বলব। যে কোনো দেশে যে কোনো সমাজে ছাত্র-তরুণ-যুব সমাজই হচ্ছে সর্বপ্রধান চালিকা শক্তি। তাদের অমিত শক্তিই পারে অজেয়কে জয় করতে, অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করতে। সেজন্য তারাই হচ্ছে সমাজের ভবিষ্য, সমাজের আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। তারাই পারে ঈপ্সিত সুখী সমৃদ্ধ সমাজ উপহার দিতে। কাজেই তাদের কাঁধে রয়েছে প্রকাণ্ড দায়িত্ব। তারা তাদের সেই গুরুদায়িত্ব পালনে পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে সচেষ্ট থাকুক সেটাই প্রত্যাশা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেক বেশি জরুরি ও তাপর্যপূর্ণ। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভীষণভাবে অসুস্থ। [সমাপ্ত]

 





0/Post a Comment/Comments