""

খাগড়াছড়িতে প্রয়াত অনন্ত বিহারী খীসার স্মরণসভা করেছে ইউপিডিএফ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১


"অগণিত মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বেঁচে থাকো হে গুণী" এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে খাগড়াছড়িতে সদ্য প্রয়াত শিক্ষাবিদ ও সমাজ হিতৈষী অনন্ত বিহারী খীসা'র স্মরণসভা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রণ্ট (ইউপিডিএফ)।

আজ বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ ২০২১) ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিট এই স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে তিন শতাধিক ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন।

স্মরণসভা শুরুতে উপস্থিত-ছাত্র জনতা একে একে অনন্ত বিহারী খীসার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীর এই মহান সম্মানীয় ও সংগ্রামী ব্যক্তির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মার্মা সভাপতিত্বে ও সংগঠক প্রকাশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য দয়া সোনা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সদস্য রুপা চাকমা, পেরাছড়া নারী সমাজ কমিটির সহ-সভাপতি রাঙ্গাবি চাকমা, রতন জয় পাড়ার কারবারী কুসুম মনি চাকমা, ২নং বানছড়ার কার্বারী শোভা চন্দ্র চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী কুমতি ত্রিপুরা প্রমুখ।

স্মরণসভায় প্রয়াত অনন্ত বিহারী খীসার কর্মজীবনী সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হয়। এতে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর যে ভূমিকা তা গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত ছাত্র জনতার সামনে পাঠ করা হয়।

সভায় পিসিপি নেতা সুনীল ত্রিপুরা বলেন, আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। অনন্ত স্যার বেঁচে থাকাকলীন বেশ কয়েক বার দেখা করেছি, কথা বলেছি, সেবা করেছি। গুণী মানুষের কাছ থেকে সর্ব ক্ষেত্রে যেমনি অনেক কিছু শেখার থাকে, তেমনি আমিও স্যারের কাছে থেকে কিছুটা হলে শিখতে পেরেছি। নতুন প্রজম্মের উচিত অনন্ত স্যারের সম্পর্কে জেনে নিজেকে গুণান্বীত করা। কঠিন সময়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম করা।


যুব ফোরাম নেতা রিপন চাকমা বলেন, অনন্ত স্যার আমাদের কাছে সত্য এবং ন্যায়ের প্রতীক। তিনি আমাদের সকলের সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁর চেতনা, আদর্শ নৈতিকতাকে আমাদের সকলের ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অনন্ত স্যারের সম্পর্কে যা জেনেছি তিনি একজন আজম্ম সংগ্রামী। জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক ত্যাগ করেছেন। তিনি আমাদের জাতির বটবৃক্ষের ন্যায় ছায়া হয়ে ছিলেন। এমন মহান ব্যক্তিকে আমাদের সবসময় অনুসরণ করা উচিত।

রাঙ্গাবী চাকমা বলেন, অনন্ত স্যারের স্মরণসভায় উপস্থিত থাকতে পেরে আমি খুব গর্ববোধ করছি। গুণীর কথা বলতে গেলে অনন্ত বিহারী খীসার স্যারের পুরো পরিবারই গুণী পরিবার। অনন্ত স্যার আমাদের মাথার উপর ছায়া হিসেবে ছিলেন। যার ছায়ায় বসে আমরা দাড়াতে শিখেছি, জেগে উঠেছি।

কুমতি ত্রিপুরা বলেন, জুম্ম জাতির ভবিষ্যতের জন্য শ্রদ্ধেয় অনন্ত স্যার অনেক কিছু করেছেন। যা জাতি কখনো ভূলবে না। তাঁর ত্যাগকে সম্মান করে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এগিয়ে জেতে হবে।

কুসুম মনি চাকমা বলেন, আমি স্যারকে আজকে গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। জাতির জন্য যে ভূমিকা তিনি রেখেছেন সেজন্য স্যার আজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মার্মা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনন্ত স্যার একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। লড়াই সংগ্রামের অনুপ্রেরণার একটি নাম অনন্ত বিহারী খীসা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বার্থে তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা আমাদেরকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

তিনি বলেন, গুণী মানুষের কাছ থেকে গুণী ব্যক্তি জন্মায়। কিন্তু আমরা প্রকৃত গুণী মানুষের কদর করতে জানি না বলে আমাদের সমাজে সংকট অনুভব করি। তিনি বলেন, আজ সমালোচনার সুরে বলতে হয় জাতির কঠিন সময়ে সমাজের অধিকাংশ সচেতন নামধারী ব্যক্তিরা পিছপা হয়ে বসে থাকেন। জাতীয় স্বার্থে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে তারা ভয় পান। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনন্ত বিহারী খীসা ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি কঠিন সময়েও সমাজের জন্য, জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। মানুষকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে ধন্য করেছেন।

অংগ্য মারমা বলেন, আমরা পরিবর্তনে বিশ্বাসী। পরিস্থিতি পরিবেশ সব সময় এক রকম থাকে না। ধ্রবতারা দেখে নাবিক দিশা খুজে নেয়। তেমনি জাতির সাহসী ও গুণী সন্তান অনন্ত স্যারের চেতনা, স আদর্শ-নৈতিকতা ধারণ করে তাঁর উত্তরসূরি হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খাগড়াছড়ি সদরের অনন্ত মাষ্টার পাড়ার নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রয়াত হন জাতির মহান গুণী সন্তান অনন্ত বিহারী খীসা।





0/Post a Comment/Comments