""

খাগড়াছড়িতে ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী শিক্ষক সোহেল রানাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১

ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত শিক্ষক সোহেল রানা

খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত সোহেল রানাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠার পর পরই তিনি খাগড়াছড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে পলাতক অবস্থায় ছিলেন।

গতকাল বুধবার (০৩ মার্চ ২০২১) বিকালে ঢাকা শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে সোহেল রানাকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রশীদ সোহেল রানাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান আজ বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

অভিযুক্ত শিক্ষকের পুরো নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মীর্জাপুর থানার মীর্জাপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাইম হাটি আদালত পাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন। তিনি খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে বিল্ডিং ট্রেড বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।
এর আগে তিনি ২০০৬ সালের মে থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে বিল্ডিং ট্রেড বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক ব্যবহারের নানা অভিযোগ ছিল বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টার সময় শিক্ষক সোহেল রানার আদেশ মত ওই ছাত্রী তার অফিসে গেলে তিনি কুপ্রস্তাব দেন। তাতে ওই ছাত্রী রাজী না হলে সোহেল রানা তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে ভিকটিম ছাত্রী নিজেই অভিযোগ করেন। তার পরবর্তীতেও সোহেল রানা ফোন করে নানা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন বলে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগ মূলে ২৭ ফেব্রুয়ারি সিএইচটি নিউজে একটি খবর প্রকাশিত হয়।

এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিকটিম ও ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সোহেল রানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে অধ্যক্ষের বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং একদিনের (০১ মার্চ পর্যন্ত) সময় বেঁধে দেন। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিল জরুরী সভা করে ০১ মার্চ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও পৃথক একটি তদন্ত কমিটি করা হয় বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানালেও তদন্ত কমিটি কোন প্রতিবেদন দিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

তবে এরই মধ্যে সোহেল রানাকে বদলী করে হেড অফিসে সংযুক্ত করা হলেও তিনি পালিয়ে ছিলেন।

উক্ত ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানাসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের জোর দাবি উঠে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন গতকাল এক বিবৃতিতে ঘটনায় জড়িত সোহেল রানাকে দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানায়।

গত ০২ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে সোহেল রানাকে একমাত্র আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০১, তারিখ: ০২/০৩/২০২১ ইং।

একইদিন সকালে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ চেষ্টাকারী শিক্ষক সোহেল রানাকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এদিকে, সোহেল রানার গ্রেফতারের খবরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, তাকে শুধু গ্রেফতার করলে হবে না, তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এ ঘটনার সাথে আর কারোর যোগসাজশ ছিল কিনা তাও খুঁজে বের করতে হবে।

তারা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ভবিষ্যতে যাতে কোন শিক্ষক ছাত্রীদের সাথে এমন অনৈতিক কাজ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।





0/Post a Comment/Comments