খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
খাগড়াছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে সংগঠনের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (৫ এপ্রিল ২০২১) বেলা ২.০০টার
দিকে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভার ব্যানারের শ্লোগান ছিল, ‘অবিলম্বে
ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ কর, লড়াই-সংগ্রামের পথ ধর’, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী
প্রধান উৎসব
বৈসাবি উপলক্ষে ৪ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে পুলিশ ক্যাম্প
স্থাপনে সিদ্ধান্ত বাতিল কর’।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা দপ্তর সম্পাদক
লিটন চাকমা'র সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলার আহ্বায়ক জুনেট চাকমা'র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায়
বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ'র জেলা সংগঠক অনি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম'র কেন্দ্রীয়
সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমা,
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সমর চাকমা প্রমুখ।
সভা শুরুতে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা
পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে
পাহাড়ি জনগণের নায্য দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে শাসকগোষ্ঠী একদিকে
অব্যাহতভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে "ভাগ করে শাসন কর’ নীতি প্রয়োগ
করে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশয়ের মাধ্যমে সুবিধা প্রদান করে খুন, গুম,
অপহরণসহ নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর এই দমন-পীড়ন ও ভাগ করে শাসন করার
বিপরীতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সরকার পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব ধ্বংস দিতে তথাকথিত উন্নয়নের নামে জোরপূর্বক ভূমি বেদখল-উচ্ছেদ করছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, বান্দারবানের চিম্বুক পাহাড়ে, রাঙামাটির সাজেকে এবং সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি-তাইন্দং এলাকায় ও পানছড়ির উল্টাছড়ি ইউনিয়নে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করে তাদেরকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুব সমাজকে এগিয়ে এসে জাতির দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা
একটি রাজনৈতিক সমস্যা। সামরিক শাসন জারি রেখে কথিত উন্নয়নে এর সমাধান হতে পারে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি স্থাপন করতে হলে রাজনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান
করতে হবে। কিন্তু সরকার মুল সমস্যা আড়াল করতে কথিত উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন
করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিত্যক্ত সেনাক্যাম্পের
জায়গা স্ব স্ব মালিকদেরকে ফেরত না দিয়ে সেখানে নতুন করে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত
নিয়েছে। বক্তারা অবিলম্বে পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের জায়গায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের
সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
বক্তরা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে
ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব
বৈ-সা-বি’তে (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু...) নানা অনুষ্ঠানসহ সামাজিকভাবে মিলন মেলা হয়। কিন্তু
এসব সামাজিকতা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত
পেশাজীবী মানুষেরা পর্যাপ্ত ছুটি না থাকায় উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়। যারা সমতলে স্কুল,
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত আসা-যাওয়াতে ছুটির দিনগুলি কেটে
যায়।
সভা থেকে বক্তারা বৈ-সা-বি উৎসবের
জন্য ৪দিন সাধারণ ছুটি ঘোষনার জোর দাবি জানান।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আনন্দমুখর
পরিবেশে উৎসব পালনের জন্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করাসহ অন্যায় দমন-পীড়ন
বন্ধের করার দাবি জানিয়েছেন।