""

জায়গা ও বসতভিটা ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে সনে রঞ্জন ত্রিপুরার আবেদন


বিশেষ প্রতিনিধি
 ।। খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলাধীন সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের ২২৬ নং সিন্দুকছড়ি মৌজার পুংখীমুড়ায় সেনাবাহিনী কর্তৃক বাড়ি ভেঙে দেয়ার ক্ষতিপূরণ প্রদান, বেদখলকৃত ভিটেমাটি ও ভোগদখলীয় জায়গা ফেরত দান ও সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর আবেদন জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত সনে রঞ্জন ত্রিপুরা।

গত ১৫ জুন ২০২১ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আবেদনপত্রটি পেশ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন রাতের আঁধারে মহালছড়ি জোনের একদল সেনা সদস্য সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি সড়কের পাশে পুংখীমুড়ায় সনে রঞ্জন ত্রিপুরার নতুন নির্মিত বসতবাড়িটি ভেঙে বাড়ির খুটি, বেড়া, আসবাবপত্রসহ সবকিছু খুলে নিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পেশ করা আবেদনপত্রে সনে রঞ্জন ত্রিপুরা উল্লেখ করেন, ‘ইতোমধ্যে আমি ভোগদখলীয় জায়গায় জুমচাষের পাশাপাশি বাঁশ ও বিভিন্ন প্রকার ফলজ গাছ লাগিয়ে বাগান সৃজন করেছি। আমার জায়গাটি সিন্দুকছড়ি মৌজার পুংখীমুড়া পাহাড়ের পশ্চিম পাশে অবস্থিত ৩য় শ্রেণীর জমি, ২০০২ সালে শুরু করে এখনো বন্দোবস্তী প্রক্রিয়াধীন। মৌজা হেডম্যানের রিপোর্ট প্রাপ্ত ও জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদিত। আমি আমার পরিকল্পনা মাফিক মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি সড়কের কাছাকাছি আমার ভোগদখলীয় নিজস্ব জায়গায় ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করি ২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

সেনাবাহিনী কর্তৃক বাড়ি নির্মাণের বাধা দেয়ার অভিযোগ করে এতে তিনি বলেন, বাড়ি নির্মাণের এক পর্যায়ে মহালছড়ি সিন্দুকছড়ি রাস্তা সংস্কার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সেনা সদস্য এসে আমার গৃহনির্মাণ কাজে বাধা দেয়। তারা আমাকে জমির দলিল দেখাতে বলেন। আমি আমার জমির দলিল দেখানোর পরও তারা আমাকে গৃহ নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশ দেয়। এই অবস্থায় আমি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাননীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি মহোদয়ের নিকট তাকে অবগত করতে যাই এবং তার কাছ থেকে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি চাই। জমির দলিল দেখানোর পর তিনি গত ২৫ মে ২০২১খ্রি. আমাকে আমার নিজস্ব জায়গায় বাড়ি নির্মাণের জন্য অনুমতি ও নির্দেশন দেন। ওই দিনই আমি গ্রামে ফিরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় বাড়িটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করি।

পরের দিন ২৬ মে ২০২১ ধুমনীঘাট ক্যাম্প থেকে একদল সেনা সদস্য এসে আবার বাড়ি নির্মানে বাধা দেয় এবং আমার কাছ থেকে জায়গার দলিলটি কেড়ে নিয়ে যায়। এরপর গত ২৮ মে ২০২১ খ্রি. পাড়ার কার্বারী, ইউপ মেম্বার, একজন পাড়াবাসী ও আমিসহ চারজনকে ধুমনীঘাট সেনাক্যাম্পে ডাকা হয় এবং আমরা সেখানে যাই। এসময় ধুমনীঘাট ক্যাম্প কমাণ্ডার মেজর আনিস আমাদেরকে এই বলে জানিয়ে দেন যে, ‘সনে রঞ্জনের কাগজপত্র দেখলাম কিন্তু জায়গাটি তার নামে রেজিষ্ট্রি নাই। তাই জায়গার মালিক সনে রঞ্জন হতে পারে না। তোমরা মেনে নাও এখানে পর্যটন হলে তোমাদের লাভ হবে। তোমরা যদি এ জায়গা ছেড়ে না দাও তাহলে তোমাদের নামে ভূমি বেদখলের মামলা দেয়া হবে’। এ কথা বলে তিনি সাথে সাথে গুইমারা থানায় ফোন কল দিয়ে তিন সিএনজি পুলিশ হাজির করেন। তখন আমরা জায়গাটি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি প্রক্রিয়াধীন এবং আমাদের প্রথাগত ভূমি অধিকারও রয়েছে, যা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বীকৃত হয়েছে। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিতে প্রথাগত অধিকার স্বীকৃত- এই সব যুক্তি তুলে ধরি এবং আরো বলি, আপনারা মামলা করুন আর যাই করুন আমরা জায়গা ছেড়ে দিতে পারবো না বলে ক্যাম্প থেকে গ্রাামে ফিরে আসি।

এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সমাধানের আশ্বাস ও তার পরবর্তী বাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনা তুলে ধরে আবেদনপত্রে তিনি বলেন, ‘তারপর বিষয়টি গত ৫ জুন ২০২১ স্থানীয় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মহোদয়কে আবার জানালে তিনি বলেন, বাড়ি যেহেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে, তোমরা অব্যাহত রাখ আমি ঢাকা থেকে ফিরে এসেই ব্রিগেডিয়ারের সাথে কথঅ বলে সমাধান করে দিব। এরই মধ্যে গত শনিবার ১২ জুন ২০২১ খ্রি. রাত সাড়ে ১০টায় ধুমনীঘাট সেনা জোন থেকে ২০-২৫টি গাড়িতে করে একদল সেনা সদস্য এসে আমার নির্মিত বাড়িটি ভেঙ্গে দেয় এবং বাড়ির খুটি, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী ধুমনীঘাট ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এবং পরের দিন তড়িঘড়ি করে দ্রুত সেখানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে জানিয়ে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে তারা সেখানে একটি টিনের ঘর তৈরি করে ফেলেছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের নামে’।

আবেদনপত্রে তিনি নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তারা কেবলমাত্র আমার বাড়ি ভেঙে দিয়ে থেমে থাকেনি। তারা আমার জায়গার পার্শ্ববর্তী আরও দুই গ্রামবাসীর জায়গা বেদখল করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা জায়গা হারানোর চরম আতঙ্কে ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছি’।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি সেনাবাহিনী কর্তৃক ভাঙনকৃত ঘরের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ অবৈধভাবে বেদখলকৃত ভোগদখলীয় জায়গা ও ভিটেমাটি ফেরত প্রদান ও সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

উক্ত আবেদনপত্রটির অনুলিপি ভূমি মন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, খাগড়াছড়ি আসনের এমপি, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বরাবরেও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সনে রঞ্জন ত্রিপুরার বসতভিটায় সেনাবাহিনী কর্তৃক তড়িঘড়ি করে নির্মিত টিনের ঘরটি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ নাম দেয়া হলেও স্থানীয় গ্রামবাসীরা সেখানে ক্লিনিক স্থাপনের কোন দাবি জানায়নি। বর্তমানে সেনা চৌকির আদলে রাতদিন সেনা সদস্যরা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ নাম দেয়া ঘরটিতে অবস্থান করছেন। ফলে এটাই স্পষ্ট যে, মূলত সনে রঞ্জন ত্রিপুরার ভোগদখলীয় জায়গা ও বসতভিটা বেদখল করার জন্যই ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’র সাইনবোর্ডটি ব্যবহার করা হয়েছে।

আর সরকারি আইন-নীতিমালা অনুসারে কোন জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদের অধীনে ক্লিনিক স্থাপন করতে হয়। কিন্তু এই নীতিমালা অনুসরণ না করে যেভাবে একজনের বসতবাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে তড়িঘড়ি করে (এক দিনের মধ্যেই ঘর নির্মাণ করে) কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে তা সরকারি আইন-নীতিমালারই সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।






0/Post a Comment/Comments