""

নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪১ পাহাড়ির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বিজিবি’র মামলা


বান্দরবান, সিএইচটি নিউজ 
।। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ৪১ পাহাড়ির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অভিযুক্তরা তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ মামলাটি দায়ের করেন বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের নায়েব সুবেদার মো. আবুল খায়ের। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার মামলা নং-৭, তারিখ- ১৫/৯/২০২১, ধারা- সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধিত-২০১৩) এর ০৬/০৭/১২/১৪ তৎসহ ১৪৪/৩৫৩/৩০৭ দণ্ডবিধি।

যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় তারা হলেন- ১. মংলা পো (৬০), পিতা-শোয়েছা অং, গ্রাম-কামিছড়া চাক পাড়া, দোছড়ি ইউনিয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি, ২. লাইগ্যা ছো (৫০), পিতা-মং বা, গ্রাম-ঐ, ৩. চিংলা অং চাক (৩০), পিতা-আথাছা, গ্রাম-ঐ, ৪. মংলা থোয়াই চাক (১৫), পিতা-চিংলা অং চাকমা, গ্রাম-ঐ, ৫. অমর জ্যোতি চাকমা ওরফে অপু চাকমা (৪০), পিতা-লাম্বা চাকমা, গ্রাম-রাঙ্গামাটি সদর, রাঙ্গামাটি জেলা, ৬. ক্যবামং মারমা (৫৪), পিতা-উথোয়াই মারমা, গ্রাম-রোয়াংছড়ি, ১নং ওয়ার্ড, রোয়াংছড়ি উপজেলা, বান্দরবান, ৭. কাজল চাকমা (৪০), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৮. ননাধন চাকমা হিতোশি (৪৫), পিতা-যুগল কৃষ্ণ চাকমা, গ্রাম-বলপিয়া আদাম, নানিয়ারচর উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলা, ৯. মায়া চাঁদ চাকমা (৫০), পিতা-ক্ষীণ রোদ চাকমা, গ্রাম-বনযোগীছড়া, জুরাছড়ি উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলা, ১০. অনুপম চাকমা (৪০), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-লংগদু, লংগদু উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলা, ১১. বাসা চাকমা এ্যাসমং (৫০), পিতা-মৃত রায় মোহন চাকমা, গ্রাম-গুইমারা, গুইমারা উপজেলা, খাগড়াছড়ি জেলা, ১২. গর্জন তঞ্চঙ্গ্যা (৪২), পিতা-কিনাধন তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-ঘিলামুখ পাড়া, রাজস্থলী উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলা, ১৩. অং থোয়াই চিং মারমা (২৯), পিতা-প্রু তুই মং মারমা, গ্রাম-লাছালং পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা, বান্দরবান জেলা, ১৪. প্রীতিসেন তঞ্চঙ্গ্যা (৪০), পিতা-মৃত জীতেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-আলেক্ষ্যং, রোয়াংছড়ি উপজেলা, বান্দরবান জেলা, ১৫. অংশৈচিং মারমা (৩৫), পিতা-সাহ্লাচিং মারমা, গ্রাম-রোয়াংছড়ি বাজার পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ১৬. অংকানু মারমা (২৮), পিতা-মৃত ক্রাই মং মারমা, গ্রাম-খায়ম্রুং পাড়া, নোয়াপতং, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ১৭. সাগর বাসা চাকমা (৩০), পিতা-বৈদ্য চন্দ্র চাকমা, গ্রাম-জ্ঞান কার্বারি পাড়া, আলীকদম উপজেলা, বান্দরবান জেলা, ১৮. তরুণ চাকমা (৩৫), পিতা-বসুদেব চাকমা, গ্রাম-রোয়াম্ভু বয়ামঝিরি, আলীকদম উপজেলা, ১৯. অনীল চাকমা (৩৫), পিতা-সুতবির লক্ষ্য চাকমা, গ্রাম-রম্ভু কলারঝিরি, আলীকদম উপজেলা, ২০. রুপন তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮), পিতা-কালাসেন তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-ওয়াইগ্যা পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ২১. কল্পসেন তঞ্চঙ্গ্যা (৩৩), পিতা-শত্রুসেন তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-ওয়াইগ্যা পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ২২. মংশৈ মারমা (৩২), পিতা-হ্লা থোয়াই মং মারমা, গ্রাম-কানাইজো পাড়া, নোয়াপতং, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ২৩. মংবাচিং মারমা (৩৭), পিতা-মৃত চিনু মং মারমা, গ্রাম-নোয়াপতং, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ২৪. রাঙ্গোলাল তঞ্চঙ্গ্যা (২৬), পিতা-ললিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-তাইমুরুংছড়া পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ২৫. স্বপ্ন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (২৪), পিতা-সমিরণ তঞ্চঙ্গ্যা, গুংখ্যাংপাড়া, নোয়াপতং, রোয়াংছড়ি উপজেলা, ২৬. হিরণ ওরফে তুনিদ (২৮), পিতা-কৃষ্ণমা ধরা, গ্রাম-নানিয়ারচর, নানিয়ারচর উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলা, ২৭. রবিদ্বয় চাকমা (৪৪), পিতা-অজ্ঞাত, রোয়াম্বু নয় পাড়া, আলীকদম উপজেলা, ২৮. প্রাইপ্রু মারমা (৫২), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-হেডম্যান পাড়া, বান্দরবান সদর উপজেলা, ২৯. নিত্যলাল চাকমা (৫০), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-হেডম্যান পাড়া, বান্দরবান সদর উপজেলা, ৩০. চসিমং মারমা (৫৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-হেডম্যান পাড়া, বান্দরবান সদর উপজেলা, ৩১. সুমন তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-পাইনছড়া, বান্দরবান, ৩২. অমলাম চাকমা (৪৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৩৩. উনুমং মারমা ওরফে রয়েল (৪২), পিতা-গংজক মারমা, গ্রাম-লাপ্রাইমুখ পাড়া, বান্দরবান সদর উপজেলা, ৩৪. মংয়োইসিং মারমা (৩৫), পিতা-থোয়াইনু চিং মারমা, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৩৫. নিরোলাল চাকমা (৪৮), পিতা-বঞ্চিত চাকমা, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৩৬. সাচিংনু মারমা (৫৪), পিতা-ক্যহ্লাচিং মারমা, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৩৭. কক্যাইনু মং মারমা (৩০), পিতা-চথোয়াই মারমা, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৩৮. অংশৈমং মারমা (৫৫), পিতা-সাথ্রচিং মারমা, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৩৯. কাঞ্চন (৩৮), পিতা-মেদংন্যা, গ্রাম-অজ্ঞাত, ৪০. ভাগ্যলতা (৩৫), স্বামী-অনীল তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-রম্ভু কলারঝিরি, আলীকদম উপজেলা, ৪১. জয়বাহাদুর ত্রিপুরা ওরফে অজিত (৪৭), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-অজ্ঞাত।

এর মধ্যে ১ নম্বর থেকে ৪ নম্বর ব্যক্তিদেরকে গত ১ সেপ্টেম্বর আটক করে অজ্ঞাত স্থানে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শেষে ১৪ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং পরদিন আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় দায়েরকৃত উক্ত মামলায় সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত এবং সাধারণ জনগণের নিকট হতে চাঁদা উত্তোলন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কাজে সহায়তা ও সশস্ত্রভাবে অবস্থান করে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, দেশের অখন্ডতা বিপন্ন করার লক্ষ্যে সশস্ত্রভাবে সংঘটিত হইয়া বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা এবং আশ্রয় প্রদান করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উক্ত ৪১ জনসহ আরও অজ্ঞাতনামা ‘অস্ত্রধারী’ নাইক্ষ্যংছড়ি থানাধীন দোছড়ি ইউপি’র ২নং ওয়ার্ড কামিছড়া চাক পাড়ায় ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে বিজিবি-সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান চলাকালীন পাহাড়ি রাস্তার উপর বিজিবি’কে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে বিজিবি টহল দলের ২ জন সদস্য মারাত্মক আহত হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে জনসংহতি সমিতির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার সকালে আলিকদম জোনের সেনাবাহিনী ও নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের বিজিবি’র একটি যৌথ দল দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ায় অভিযান চালায়। এ সময় ৬ নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীকে অমানুষিক মারধর করার পর আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া গ্রামের নারী-শিশুদেরও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এদিন বিজিবি উক্ত এলাকায় ‘সন্ত্রাসীদের সাথে গোলাগুলি’ হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে জানালেও গ্রামবাসীদের আটকের বিষয়ে কোন কিছুই জানায়নি।

পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিজিবি থানায় মামলা দায়ের করলে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে উথোয়াই হ্লা মার্মা(২৪), পিতা-মংদো মারমা ও ম্যানরুম মুরুং (৬০), পিতা- মৃত ধুই থং মুরুংকে থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যাভাবে দন্ডবিধি ১৪৪, ৩৫৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭ ধারায় মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এরপর দীর্ঘ ১৪ দিন আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শেষে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাকী আরো ৪ জনকে (মংলা পো চাক, লাইগ্যা ছো চাক, চিংলা অং চাক ও তার ছেলে  মংলা থোয়াই চাক) নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হস্তান্তর করে পরদিন সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়।





0/Post a Comment/Comments