""

রামগড় - মাটিরাঙ্গা সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়


মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি,
সিএইচটি নিউজ।। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় সদর হতে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি-তাইন্দং’র তানাক্কা পাড়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করছে সেনাবাহিনী। এ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন (২০ ইসিবি) ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ রামগড়ে পিলাকঘাট এলাকায় এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়।

এই সড়কটি নির্মাণের ফলে ইতোমধ্যে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের ধান্য জমি, পাহাড়-টিলা, ক্ষেত, বাগান-বাগিচা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অধিকাংশই পাহাড়ি। এ নিয়ে সিএইচটি নিউজে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।

ফলে উক্ত সড়কটি নির্মাণ কাজ বন্ধ করা ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়ে ইতোপূর্বে এলাকাবাসী মানববন্ধনও করেছেন।

এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে গত ৭ নভেম্বর ২০২১, রবিবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ২৮ জনকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। তবে এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ মাত্র ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা, যা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া সরকারিভাবে যে প্রক্রিয়ায় জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়ে থাকে এক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি।

রামগড়ের পিলাকছড়া এলাকায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি অধিনায়ক ও প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল আমজাদ হোসেন দিদার, রামগড় ৪৩ বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর মনিরুল হাসান ও ২০ ইসিবির প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর এসএম খালেদুল ইসলামসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

যাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ২৪ জন হলেন-

১। মহন ত্রিপুরা (৪৪), পিতা- ধর্মরাম ত্রিপুরা, সাং- লক্ষীছড়া. কলা-ধানের ফসল ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৪,০০০ টাকা।

২। ধুমপে ত্রিপুরা (২৩) পিতা- মিজু কুমার ত্রিপুরা, সাং- ঐ, হলুদ ক্ষেত বাবদে ১৫,০০০ টাক।  

৩। অলিন্দ্র ত্রিপুরা (৪০), পিতা- কাইরাম ত্রিপুরা সাং- সাদিয়া বাড়ি কলা, ধান্য ফসল ক্ষতিপূরণ বাবদ ১২,০০০ টাকা।

৪। হরেন্দ্র ত্রিপুরা (৩৭), পিতা মৃত. বামকুমার ত্রিপুরা, সাং- সাদিয়া বাড়ি, হলুদ ক্ষেত বাবদে ৯,০০০ টাকা।

৫। সমচাঁন্দ ত্রিপুরা (৬৪), পিতা- মৃত বারিয়া ত্রিপুরা, সাং- সাদিয়া বাড়ি, হলুদ ক্ষেত বাবদ ৭,০০০ টাকা।

৬। শান্তি কুমার ত্রিপুরা(৭০), পিতা- মৃত প্রেমচন্দ্র ত্রিপুরা, সাং- সাদিয়া বাড়ি আনারস ফসল বাবদ ৭,০০০ টাকা।

৭। মোহন ত্রিপুরা (৪০), পিতা মৃত সকরিয়া ত্রিপুরা, সাং- সাদিয়া বাড়ি, কলা হলুদ ক্ষেত বাবদে ১৮,০০০ টাকা।

৮। কান্ত কুমার ত্রিপুরা(৩৮), পিতা- বায়না চন্দ্র ত্রিপুরা, সাং- জামিনীছড়া পাড়া, হলুদ ক্ষেত বাবদ ৯,০০০ টাকা।

৯। বানি মোহন ত্রিপুরা(৬৫), পিতা ধরচাঁন্দ ত্রিপুরা, সাং- সাদিয়া বাড়ি, কলা হলুদ ক্ষেত বাবদ ১২,০০০ টাকা।

১০। অশনী মোহন ত্রিপুরা(৬৫), পিতা অজ্ঞাত, সাং- সাদিয়া বাড়ি ধান ক্ষেত বাবদ ২,৫০০ টাকা।

১১। দুলাল ত্রিপুরা(৪০), পিতা- লোকনাথ ত্রিপুরা, সাং- সাদিয়া বাড়ি, ধান ফসল ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩,০০০ টাকা।

১২। কাকুল ত্রিপুরা(৬৫), পিতা মৃত: গতিয়া ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, ধানের ফসল বাবদ ২১,০০০ টাকা।

১৩। সুরেন্দ্র ত্রিপুরা(৭২), পিতা মৃত: বানি কুমার ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, ধান ফসল ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৮,০০০ টাকা।

১৪। ধরনি ত্রিপুরা(৪৬), পিতা: খগেন্দ্র ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, ধান্য ফসল বাবদে ১২,০০০ টাকা।

 ১৫। চাম্তা ত্রিপুরা, পিতা- হরিকুমার ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, বাড়ি ঘর স্থানান্তর বাবদে ১৫,০০০ টাকা।

১৬। মনো রঞ্জন ত্রিপুরা, পিতা- গরিয়া ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, ধান্য ফসল বাবদ ২০,০০০ টাকা।

১৭। ধমনি ত্রিপুরা, পিতা- গরিয়া ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, ধান্য ফসল বাবদ ১২,০০০ টাকা।

১৮। মোহাম্মদ দুলাল, পিতা: অজ্ঞাত, সাং- রামগর বাজার, কচু ক্ষেত ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৭,০০০ টাকা।

 ১৯। শেখ ফরিদ মিঞ্চা, পিতা: অজ্ঞাত, কলা ক্ষেত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০০০ টাকা।

২০। চাথৌঅং মারমা, পিতা: অজ্ঞাত, সাং- পিলাক ঘাট, আদা হলুদ ক্ষেত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩২,০০০ টাকা।

২১। থৈইংগ্য মারমা, পিতা মংহ্লা মারমা, সাং- পিলাক ঘাট, জমির ফসল ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬,০০০ টাকা।

২২। রাম কুমার ত্রিপুরা, পিতা কমল ত্রিপুরা, সাং- গর্জন টিলা, জমির ফসল ক্ষতিপূরণ বাবদে ১২০০০ টাকা।

২৩। সহায়ন ত্রিপুরা পিতা- টিকেন্দ্র ত্রিপুরা, সাং- গর্জন টিলা, জমির ফসল বাবদে ২০,০০০ টাকা।

২৪। হেমেন্দ্র ত্রিপুরা, পিতা- চান্দ কুমার ত্রিপুরা, সাং- ধনিরাম পাড়া, কলা ক্ষেত ক্ষতিপূরণ বাবদে ৭,৫০০ টাকা।

ক্ষতিপূরণ পাওয়া বাকি আরো চারজনের নাম পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কটি নির্মাণের ফলে অনেকের ধান্যজমি ও ধান ফসলসহ ফলজ-বনজ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ক্ষতির তুলনায় তাদেরকে দেয়া ক্ষতিপূরণের পরিমাণ খুবই সামান্য। যেমন গর্জনটিলা গ্রামের সহায়ন ত্রিপুরার প্রায় ৪০ শতক ধান্য জমি, ২০ শতক দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি, ৩০টির অধিক লিচু ও ৫০টি সেগুন গাছ ক্ষতি হয় বলে জানা যায়। কিন্তু তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। এছাড়াও ক্ষতিপুরণ পাওয়া আরো অনেকে এমন অভিযোগ করেছেন।

সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ করতে গিয়ে এলাকার আরো অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ক্ষতি অনুসারে ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের বর্তমান বাজারমূল্যে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।

---





0/Post a Comment/Comments