""

ইউপিডিএফ নেতা শহীদ নবায়ন চাকমা’র দাহক্রিয়া সম্পন্ন, আত্মোৎসর্গের অঙ্গীকার

দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ ।। 

পার্টি ও গণফ্রন্টের নেতা-কর্মীগণ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন লড়াইয়ে আত্মোসর্গের প্রতিজ্ঞা করছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে উপস্থিত জনতাও শ্মশানে দাহক্রিয়ার পূর্বে প্রতিজ্ঞায় সামিল
 হয়েছেন।


দীঘিনালায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে হত্যার শিকার ইউপিডিএফ সংগঠক শহীদ নবায়ন চাকমা মিলন-এর দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান আজ বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২ বাবুছড়ার নিজ গ্রামে যথাযথ মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সহস্রাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।

শ্মশানে দাহক্রিয়ার আগে মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদ নবায়ন চাকমা মিলনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় শহীদ নবায়ন চাকমাকে শেষ বারের মতো দেখতে এলাকার লোকজন কফিনে ভিড় জমান।

শহীদ সহযোদ্ধার কফিনের সামনে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে মামলা-হুলিয়া, জেল-জুলুম ও হত্যাকাণ্ড পরোয়া না করে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার করছেন।


ইউপিডিএফ’র পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইউপিডিএফ সংগঠক সজীব চাকমা ও বিকেন চাকমা। এরপর তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সাধন চাকমা; হিল উইমেন্সে ফেডারেশনের দীঘিনালা উপজেলা সহসভাপতি সুচিত্রা চাকমা ও চায়না চাকমা; পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি অনন্ত চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুধীন চাকমা এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সুচি মোহন চাকমা ও সুগত প্রিয় চাকমা শহীদ নবায়ন চাকমার মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সহযোদ্ধা হারানোর ক্রোধে জ্বলে ওঠা যুব-নারী-জনতা ঐক্যবদ্ধ। জাতির দুর্দিনে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন।


শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হওয়ার পর দুপুর ১:০০টার সময় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানে 
সাধনাটিলা বনবিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধবংশ ভান্তে মূল ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন। এ সময় লংগুদু বড়াদাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুগতলংকার ভান্তে, শান্তি নিবাস বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ জ্ঞান জ্যোতি মহাথেরো, হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ মঙ্গল জ্যোতি ভান্তেসহ ধর্মীয় গুরুরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্তিম বিদায় জানিয়ে শহীদ সহযোদ্ধার মরদেহ শ্মশানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন পার্টি ও গণফ্রন্টের নেতা-কর্মীগণ।


ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ২:১৫টায় শহীদ নবায়ন চাকমা মিলনের মরদেহ শ্মশানে নেওয়া হয়। 
সেখানে শহীদ সহযোদ্ধার কফিনের সম্মুখে পার্টির বক্তব্য ও প্রতিজ্ঞা পাঠ করেন ইউপিডিএফ সংগঠক সজীব চাকমা। এ সময় নেতা-কর্মিরা শহীদ সহযোদ্ধার কফিনের সামনে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে মামলা-হুলিয়া, জেল-জুলুম ও হত্যাকাণ্ড পরোয়া না করে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আত্মোসর্গের অঙ্গীকার করছেন।

ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।

এরপরে শহীদ নবায়ন চাকমার স্ত্রী কনিকা চাকমা ও সন্তানের নিকট পার্টি পতাকা হস্তান্তর করেন ইউপিডিএফ’র নেতৃবৃন্দ।

দাহ করার পূর্বে শহীদের স্ত্রী ও সন্তানের নিকট পার্টি পতাকা হস্তান্তর করছেন বিশেষ টিমের প্রতিনিধিরা। যে পতাকা তলে সংগ্রাম করে নবায়ন চাকমা জীবন দিলেন, সে পতাকার মর্যাদা রক্ষা ও এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব এখন পরবর্তী প্রজন্মের।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এ আবেগঘন দৃশ্যে কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ ক’জন নারী চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন
 না।


দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সংগঠক সজীব চাকমা বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন দেন, তারা অমর। শহীদ নবায়ন চাকমা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জীবন উ
সর্গ করেছেন। তিনি মহান বীর! ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

 জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যিনি জীবন দিলেন, তাকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখতে ছুটে এসেছেন স্থানীয় লোকজন।


তিনি শহীদ নবায়ন চাকমা মিলন-এর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অস্তিত্ব লড়াই জোরদার করার জন্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগ্রামী জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান। তিনি আগামী বুধবার (২৩ মার্চ ২০২২) শহীদ নবায়ন চাকমার সাপ্তাহিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেন।

পার্টি পতাকা আবৃত শহীদ সহযোদ্ধার প্রতি ফুল দিয়ে সম্মান জানাচ্ছেন স্থানীয় ইউপিডিএফ ইউনিট।


উল্লেখ্য, গতকাল ১৫ মার্চ ভোররাত 
আনুমানিক সাড়ে ৩টার সময় দীঘিনালা সেনা জোন থেকে একদল সেনা সদস্য দীঘিনালা উপজেলার ৪নং দীঘিনালার ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডের বাগানপাড়া এলাকার মনিভদ্র কার্বারি পাড়ায় হানা দেয়। এ সময় সেনারা ওই গ্রামের বাসিন্দা শান্তি রঞ্জন চাকমার বাড়িটি ঘেরাও করে এবং সেখানে অবস্থানরত ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা মিলনকে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। এতে তার শরীরের অবস্থা খারাপ হলে সেনারা তাকে নিয়ে এসে দীঘিনালা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিসাধীন অবস্থায় সকালে তার মৃত্যু হয়। এরপর খাগড়াছড়ি সদর হাসপাদালে ময়নাতদন্ত শেষে শহীদ নবায়ন চাকমার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

---





0/Post a Comment/Comments