সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ’র
লোকজন কর্তৃক এভাবে পুড়ে দেওয়া হয় ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুমের জমি। সংগৃহিত ছবি |
বান্দরবানের লামা উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিনশ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন
পুড়িয়ে দেওয়া, পানির ঝর্ণা বিনষ্টের মাধ্যমে স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের
চেষ্টার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশন এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ
হিসেবে চারটি সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের কথাও জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার (১১ মে) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা
সাঈদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এছাড়া খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে তিনটি গ্রামের মানুষের নিদারুন কষ্টে জীবন যাপনের বিষয় কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে বলে উক্ত বার্তায় বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৬ এপ্রিল লামা উপজেলার লংকম কারবারিপাড়া, রেংয়েন
কারবারিপাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারিপাড়ার প্রায় ৩৫০ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন
পুড়িয়ে দেওয়াসহ পানির ঝর্ণা বিনষ্ট করা হয়। পরবর্তী সময়ে খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে
তিনটি গ্রামের মানুষের বেশ কষ্টে জীবন যাপনের বিষয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও অংশীজন
থেকে প্রাপ্ত তথ্যের প্রতি কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। খাদ্য সংকটের কারণে স্থানীয়
জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ গাছের লতা-গুল্ম খেয়ে দিনাতিপাত করছে বলেও জানা যায়।
এ ঘটনার পর সম্প্রতি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এসময় তারা স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার
প্রাথমিক সত্যতা পান।
কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসে যে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন
থেকে ওই এলাকার ম্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। এছাড়া স্থানীয়দের
নামে বিভিন্ন সময় মামলা দিয়ে দেশ ছাড়া করার চেষ্টা করা হচ্ছে মর্মেও উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে সংগৃহীত তথ্যে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
মানবাধিকার রক্ষায় অতি দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে কমিশন
মনে করে। এবিষয়ে কমিশন নিম্নলিখিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
১. স্থানীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে
পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার
জন্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
২. স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যাতে কোনভাবেই হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকাণ্ডের
ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম
বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
৩. এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন সমস্যা
না হয় এবং ভুক্তভোগীরা যাতে কোন হয়রানি শিকার না হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের
জন্য বান্দরবান পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।
৪. ঘটনার বিষয়ে সার্বিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অবস্থা প্রতিবেদন আকারে কমিশনের
কাছে আগামী ১৫ জুনের মধ্যে দাখিলের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে। বিষয়টি
সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের অনুলিপি চট্টগ্রাম
বিভাগীয় কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে।
---