""

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবি


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০২২

 

Stop Human Rights Violation in Chittagong Hill Tracts” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে’ খাগড়াছড়ি সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম(ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

আজ রবিবার (১৪ আগস্ট ২০২২) সকালে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। তবে তিন সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। তারা জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়ে হয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকা পর্যন্ত ঘুরে এসে পূনরায় স্বনির্ভরে এসে সমাবেশ করে।

সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমার সঞ্চালনায় ও পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি ক্যামরন চাকম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে নরেশ ত্রিপুরা বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার মধ্য দিয়ে এখানে যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এদেশের সরকার ও রাষ্ট্র তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি মিঠুন চাকমার মত উদীয়মান তরুন নেতাকেও সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশদের দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে এই নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট প্রকাশ্যে দিবালোকে স্বনির্ভর বাজারে তপন-এল্টন-পলাশসহ ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন আজো এই খুনিদের গ্রেফতার না করে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নানা অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। খুনি সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে বিচরণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে এক অস্হিতিশীল পরিস্হতি। আর এই অরাজক পরিস্হিতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার স্বচক্ষে পর্যবেক্ষন করতে চাইলে এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কমিশনের প্রতিনিধিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। 

যুব নেতা ক্যামরন চাকমা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণ যখন অধিকারের জন্য এক হয়ে কাজ করছে তখন শাসকগোষ্ঠী একশ্রেণী জুম্ম সুবিধাবাদীকে দিয়ে তা বানচাল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৭ সালে জেএসএসের সাথে চুক্তি করেও প্রতি দশ কিলোমিটার পরপর সেনাক্যাম্প দেখা যায়, যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জনগনকে হয়রানি করা হয়।

তিন আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কথিত নিরাপত্তার নামে খুন-খারাবিসহ নানা অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ মার্চ ২০২২ দীঘিনালায় ইউপিডিএফ এর সংগঠক নবায়ন চাকমা মিলনকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগেও ইউপিডিএফ’র আরো বহু কর্মী-সর্মথকে এভাবে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনার কোন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি গত ৫ জুলাই মহালছড়িতে সেনাবাহিনী সহযোগীতায় বহিরাগত সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালিয়ে ৩৭টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। গত ১০ আগস্ট বান্দরবানের লামায় সরই ইউনিয়নে ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানির লোকজন রেংইয়েন ম্রো পাড়ায় নবনির্মত একটি বৌদ্ধ বিহার ভেঙে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা, আরো প্রায় দুই ডজনের মতো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে এদেশের রাষ্ট্রের নিয়োজিত বাহিনী। এছাড়া নারী নির্যাতনের ঘটনাতো অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত এই যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তার কোনটিরই বিচার হয়নি এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এসব ঘটনা ধামাচাপার দেয়ার হীন মানসে সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। বক্তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে খুন, গুম, অপহরণ, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, হামলা, মামলা, অন্যায় আটকসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবি জানান এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।





0/Post a Comment/Comments