""

রামগড়ে শহীদ রুইখই মারমার স্মরণসভায় বক্তারা: শাসকগোষ্ঠী রুইখই মারমার আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি

রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ০২ অক্টোবর ২০২২

খাগড়াছড়ির রামগড়ে শহীদ রুইখই মারমার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, শহীদ রুইখই মারমা দেশ, জাত জনগণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। শাসকগোষ্ঠি তাকে হত্যা করতে পারলেও তার আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি।

আজ রবিবার (০২ অক্টোবর ২০২২) ইউপিডিএফের রামগড় ইউনিটের আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

শহীদ রুইখই মারমার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৯টায় তাঁর (রুইখই মারমা) স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ইউপিডিএফ’র রামগড় ইউনিট সংগঠক হ্লাচিং মারমাসহ গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।


এরপর ইউপিডএফ সংগঠক সুবর্ণ মারমার সভাপতিত্বে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউপিডএফ’র রামগড় উপজেলা সংগঠক হ্লাচিং মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শুভ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রামগড় উপজেলার সভাপতি অসীম চাকমা, নারী নেত্রী পরনা ত্রিপুরা। সভা সঞ্চালনা করেন জার্মেন্ট ত্রিপুরা।

সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক হ্লাচিং মারমা বলেন, শহীদ রুইখই মারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে একজন দক্ষ নেতা ছিলেন। শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি কখনো অন্যায় বরদাস্ত করেননি। যখনই অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে সোচ্চার করে তুলেছেন তখনই তিনি শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে পরিণত হন এবং লক্ষ্মীছড়ির তৎকালীন জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল শরীফুল ইসলামের নির্দেশে সেনাসৃষ্ট সিএইচটিএনএফ তথা “বোরখা পার্টি”র সন্ত্রাসীরা ২০০৯ সালের আজকের এই দিনে রুইখই মারমাকে হত্যা করে।

তিনি রুইখই মারমার অবদান স্মরণ করে বলেন, রুইখই মারমা গুইমারার বরইতলি, মানিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ভূমি রক্ষা করেছেন। দেশ, জাত ও জনগণের জন্য রুইখই মারমা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। শাসকগোষ্ঠি তাকে হত্যা করতে পারলেও তাঁর আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, জেএসএসসহ কতিপয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সরকারের ফাঁদে পড়ে জুম্ম জনগণকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে জেএসএস কেন নিজেদের স্বার্থে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তা সকলকে চিন্তা করতে হবে। তিনি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের জন্য সন্তু লারমাকে চাপ সৃষ্টি করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি রুইখই মারমার ইচ্ছা পূর্ণস্বায়ত্তশান প্রতিষ্ঠায় ইউপিডিএফের আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপ দেয়ার এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শুভ চাকমা বলেন, শহীদ রুইখই মারমা একজন স, নীতিবান, ন্যায়ের পক্ষে আদর্শিক নেতা ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি রক্ষায় বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। তার সাংগঠনিক এলাকায় সেটলাররা যখন ভূমি বেদখলের চেষ্টা চালিয়েছিল তিনি জনগণকে সংগঠিত করে প্রতিহত করেছিলেন। শত শত ভূমি রক্ষা করেছেন। তার মতো আমাদেরও পার্টিতে যুক্ত হয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বান্দরবানের লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলসহ সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি ভূমি রক্ষার আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

নারী নেত্রী পরনা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে এসে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে যুক্ত হওয়া দরকার। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নারীদের আজ নিজের ঘরেও নিরাপত্তা নেই, নিজ বাড়িতেই ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাই নারীদের আরও সজাগ ও সচেতন হতে হবে। তিনি সমাজের নারীদের আন্দোলনে উদ্বুব্ধ করতে যুব সমাজের সহযোগিতা কামনা করেন।

পিসিপি নেতা অসীম চাকমা বলেন, আমাদের সমাজ আজ অশিক্ষায় পরিপূর্ণ। যে শিক্ষায় ছাত্ররা নৈতিকতা পরিপূর্ণতা পাবার কথা তার বদলে তারা পাচ্ছে অনৈতিক শিক্ষা। এর ব্যর্থতা আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার। সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের পাহাড়িদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক,অধিকার রক্ষাই সচেতন থাকতে হবে। আমাদের পাহাড়ের হারানো রুইখই মারমার মতো জুম্ম নেতাদের আদর্শ, চেতনা লালন করে তাদের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা জানাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সুবর্ণ মারমা বলেন, শহীদ রুইখই মারমা আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি যে চেতনার বীজ বপন করে গেছেন তার থেকে গজিয়ে উঠবে শত শত রুইখই মারমা। তিনি যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ইউপিডিএফের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন আমাদের নতুন প্রজন্মের ছাত্র-যুব সমাজকে তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।

 





0/Post a Comment/Comments