সিএইচটি নিউজ ডটকম, শনিবার, নভেম্বর ১৯, ২০১৬
খাগড়াছড়ি : “মত প্রকাশ ও সভা সমাবেশের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত কর, স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রাণালয়ের ১১ নির্দেশনা বাতিল, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার-ধরপাকড়, মিথ্যামামলা ও নারী
নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন” এই দাবি সম্বলিত স্লোগানে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের
খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১২তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলে বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিনিধি
ও পর্যবেক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই কাউন্সল অধিবেশন অনুষ্ঠিত
হয়। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাউন্সিল অধিবেশন চলে। এতে দ্বিতীয়া চাকমা
সভাপতি ও চৈতালি চাকমা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
মিশুক চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ
এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক
যুব ফোরামের জেলা সাধারণ সম্পাদাক পলাশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সহ-সভাপতি
তপন চাকমা। সভা পরিচালনা করেন মেনাকি চাকমা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক
দ্বিতীয়া চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ডেইজি চাকমা।
সভায় ইউপিডিএফ-এর অন্যতম সংগঠক মিঠুন চাকমা বলেন, সরকার যেভাবে ইউপিডএফ
এর উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাংগঠনিকভাবে আরো সুদৃঢ় ও শক্তিশালী
হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গত ১৩ নভেম্বর ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি
চাকমাকে শিক্ষা সর্ম্পকীয় একটি মিটিং থেকে আইনবহির্ভূতভাবে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে
কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল না। তাছাড়া তিনি খাগড়াছড়ির একজন অত্যান্ত সুপরিচিত ব্যক্তি।
২০০৮ সালে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেবার তিনি বিপুল
সংখ্যক ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। মূলত সরকার ইউপিডিএফ যেন গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করতে
না পারে সেজন্য নেতাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, গত ২৩ অক্টোবর বিপুল চাকমাকে তাঁর অসুস্থ মায়ের
পাশ থেকে অমানবিকভাবে আটক করা হয়। এরপর তাঁর মুক্তির দাবিতে ২ নভেম্বর পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ
ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করলে সেখান থেকে সাদা পোষাক
পরিহিত সেনাবাহিনীর সদস্যরা পিসিপি’র সহসভাপতি বিনয়ন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল
চাকমাকে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সকলের সামনে থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যায়। সেখানেও প্রচলিত
কোন আইন মানা হয়নি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোন মামলা কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল না। তাঁদের
আটক করে প্রথমে ক্যান্টনমেন্টে ও পরে থানায় সোপর্দ করা হয়।
তিনি ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে ধরপাকড়, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা
প্রদানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এসবের মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের সংগ্রামকে
স্তব্দ করে দেয়া যাবে না। তিনি অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবি জানান।
এছাড়াও তিনি সারাদেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, বাড়ি-ঘর
ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানান। এবং এসব
ঘটনায় জড়িত কুশীলবদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ
নয়। জাতিগত দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ে যেভাবে নারীদের
বিরুদ্ধে নির্যাতন চালাচ্ছে তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদেরও হার মানায়।
তিনি আরো বলেন, গত ১০ নভেম্বর রাঙামাটির ঘিলাছড়িতে এক পাহাড়ি নারীকে
সেনাবাহিনী কর্তৃক শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। তারই প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সাথে একাত্ম
হয়ে এইচডব্লিএফ-এর রাঙামাটি জেলা শাখার সদস্যরা প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। মিছিল
থেকে ফেরার পথে চার জন নারী কর্মীকে কুতুকছড়ি সেনাক্যাম্পে বিনা কারণে দীর্ঘসময় আটকে
রেখে তীব্র মানসিক নির্যাতনের পর সন্ধ্যার সময় তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি জাতিগত নিপীড়নের
বিরুদ্ধে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরকেও সংগ্রামে নামার আহ্বান জানান।
সম্মেলন শেষে সবার সম্মতিক্রমে দ্বিতীয়া চাকমাকে সভাপতি, চৈতালী চাকমাকে
সাধারণ সম্পাদক ও রেশমী মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট খাগড়াছড়ি জেলা
শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসময় উপস্থিত প্রতিনিধিরা তুমুল করতালির মাধ্যমে নতুন
কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে অনুমোদন প্রদান করেন।
নবগঠিত কমিটির সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।
নতুন কমিটির সদস্যরা যেকোন অন্যায় অবিচার প্রতিরোধে জোরালো ভূমিকা পালনের
অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং উপস্থিত সবাইকে সহযোগীতা করার আহ্বান জানান।
--------------------