সিএইচটি নিউজ ডটকম, রবিবার, নভেম্বর ২০, ১০১৬
রামগড় : "রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে
অগণতান্ত্রিক ১১ নিদের্শনা ও শাসকগোষ্ঠীর জাতি ধ্বংসের নীলনক্সার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান"
এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহত্তর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রামগড়
সরকারি ডিগ্রী কলেজ শাখার ৪র্থ কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে লিমন ত্রিপুরা সভাপতি ও
আথুইছে মারমা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার (১৯ নভেম্বর ২০১৬) দুপুর ১২টায় রামগড় সদরে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
হয়। কাউন্সিল অধিবেশন শুরুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ
করেছেন ও যারা কারাবরণ করছেন তাদের সকলের
প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
কাউন্সিলে পিসিপি’র রামগড় সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সেমন্ত ত্রিপুরার
সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর রামগড় উপজেলার সংগঠক হরি কমল ত্রিপুরা, পিসিপি খাগড়াছড়ি
জেলা শাখার অর্থ-সম্পাদক জহেল চাকমা, ডিওয়াইএফ রামগড় উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন
ত্রিপুরা, রামগড় কলেজ শাখার সহ-সভাপতি নেপাল ত্রিপুরা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন রামগড়
সরকারী ডিগ্রী কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরা।
কাউন্সিল অধিবেশনে পিসিপি’র নেতা জহেল চাকমা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে
জারিকৃত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালের অগণতান্ত্রিক “১১ নির্দেশনার” মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের অবৈধ
সেনা-শাসনকে বৈধতা দিয়েছে। যার ফলে ব্যাপকহারে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারন
শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পাহাড়ি নারীদের ইজ্জত লুন্ঠন, পাহাড়িদের উপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন
ও অত্যাচার চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার পাহাড়িদের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে দেওয়ার
জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সমতলের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অপকর্র্মের
কাজে লিপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বদলি করানো হচ্ছে।
সম্প্রতি সময়ে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মান করায় শাস্তি হিসেবে খাগড়াছড়িতে বদলি
ও কুমিল্লায় এক শিক্ষক গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন করার শাস্তি হিসেবে রামগড় সরকারি উচ্চ
বিদ্যালয়ে বদলি করার ঘটনায় তা প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর সরকারের
এমন আচরণ ছাত্র সমাজ কখনো মেনে নিতে পারে না এবং সরকারের এহেন কর্মকান্ডকে তিনি তীব্র
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ইউপিডিএফ-এর সংগঠক হরি কমল ত্রিপুরা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক
“১১নিদের্শনা” জারি রেখে ছাত্র-শিক্ষক, লেখক বুদ্ধিজীবীসহ যারা সাধারণ জনগণের পক্ষে
ন্যায়ের কথা বলে তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ
করছে।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার জঙ্গীবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে তারা তাদের পেটোয়া বাহিনী দ্বারা
সারাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, ধর্মীয় মন্দীরে হামলা, বাড়ী ঘরে অগ্নিসংযোগ,
লুটপাটের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতা
প্রদানের মধ্যমে জঙ্গী কায়দায় পাহাড়ি জনগণের উপর শোষন-শাসন, নির্যাতন চালাচ্ছে।
তিনি শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের
সংগ্রামকে বেগবান করতে ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার
জন্য উপস্থিত ছাত্র জনতার প্রতি আহ্বান জানান। এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর দায়েরকৃত
হয়রানিমূলক সকল ধরনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত
মুক্তির দাবি জানান।
পরে কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতি ক্রমে লিমন ত্রিপুরাকে
সভাপতি, আথুইছে মারমাকে সাধারন সম্পাদক ও সুরেশ ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭
সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি’র জেলার শাখার অর্থ সম্পাদক
জহেল চাকমা।
------------------------