সিএইচটি নিউজ ডটকম, বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
নান্যাচর(রাঙামাটি) : “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, পার্বত্য চট্টগ্রামে
সেনা সেটেলার কর্তৃক সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার কর” এই শ্লোগানে নান্যাচর গণহত্যা দিবসে
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) নান্যাচর থানা শাখা ও বড়পুল
পাড়া ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব-এর ব্যানারে নান্যাচরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে ১৭ নভেম্বর সেনা-সেটলার কর্তৃক এই গণহত্যা সংঘটিত হয়।
আজ ১৭ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার
সকাল ৮ টায় নান্যাচর মহাশ্বশানে শহীদদের উদ্দেশ্য নির্মিত অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে
শহীদদের স্মরণে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন, শহীদ পরিবারবর্গ
ও সাধারণ জনগণ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর
সকল শহীদদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে পিসিপি নেতা নিকন চাকমা বলেন, সরকার মুখে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক
বুলি আওড়ালেও বাস্তবে উগ্রসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধারণ করেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। নান্যাচর
গণহত্যা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা, কয়েক ডজন সাম্প্রদায়িক হামলা
এবং গোটা দেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন জাতিসত্তার উপর হামলাই তাই প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দ্দেশনা
জারি করে সরকার সেনা-পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে পার্বত্য
চট্টগ্রামে নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে যুক্ত পিসিপি ও
ইউপিডিএফ এর নেতা কর্মীদের উপর মিথ্যা মামলা, হুলিয়া জারি করে অন্যায়ভাবে ধরপাকড় করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার আজ হরন হতে চলেছে। তিনি নান্যাচর
গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার ও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি
জানান।
ধর্ম সিং চাকমা বলেন, ১৭ নভেম্বরের গণহত্যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সেনাবাহিনী,
পুলিশ ও প্রশাসন এই গণহত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।
দয়া সোনা চাকমা বলেন, নান্যাচর গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের
অধিক গণহত্যা সংঘটিত হলেও কোন ঘটনারই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে
বার বার এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নান্যাচরের
বগাছড়িতে পাহাড়িদের উপর হামলা ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তিনি নান্যাচর গণহত্যাসহ সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার ও দোষীদের আইনের
আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জ্যোতি লাল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকার
বিভিন্ন সময়ে বহু জায়গায় ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত করেছে। সেসব গণহত্যার আজও কোন বিচার
হয়নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোন ব্যক্তি বা পরিবারবে ক্ষতিপুরন দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, পার্বত্য
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের কোনো বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়। এ অঞ্চলের জনগণের দেশের অপরাপর নাগরিকদের
ন্যয় নাগরিক অধিকার ভোগ করার অধিকার রয়েছে।
সুপন চাকমা বলেন, নান্যাচর বাজারে পাবলিকদের যাত্রী ছাউনিকে নান্যাচর
জোনের তৎকালীন ৮ বেঙ্গল
ইঞ্জিনিয়ারস গ্রুপ দখল করে নেয়। সে যাত্রী ছাউনিকে পাবলিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তৎসময়ের পিসিপির
নেতৃবৃন্দ প্রশাসনে কাছে দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সে দাবি উপেক্ষা করে প্রশাসনের তৎকালীন ইউএনও হাবিবুর
রহমান, নান্যাচর জোনের সিও ওয়াহাব, মেজর মোস্তাফিজুর, নান্যাচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,
মো: আমজাদ হোসেন-- এদের নেতৃত্বে ৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর নান্যাচরে পাহাড়িদের উপর হামলা
ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তিনি নান্যাচর হত্যাযজ্ঞের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
জয়ন্ত চাকমা বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত কোন জাতি গোষ্ঠীকে দমিয়ে
রাখা যায় না। আমেরিকান ও ফরাসিরা পারেনি ভিয়েতনামের আন্দোলনরত জনগণকে দমিয়ে রাখতে।
বাংলাদেশের সরকারও গণহত্যা, নির্যাতন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে দমিয়ে রাখতে
পারবে না। যতদিন পর্যন্ত জুম্ম জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন
চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
----------------------