সিএইচটি নিউজ
ডটকম, সোমবার, নভেম্বর ১৪, ২০১৬,
রাঙামাটি প্রতিনিধি।। রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়িতে গত ১০ নভেম্বর ২০১৬
কয়েকজন সেনা সদস্য কর্তৃক এক পাহাড়ি নারীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে
বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি।
আজ সোমবার (১৪
নভেম্বর) সকালে ঘিলাছড়ি বাজার মাঠে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে ঘিলাছড়ি নারী
নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমার সভাপতিত্বে ও রুমিতা
চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ
সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার সান্ত্বনা চাকমা, হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সদস্য দয়াসোনা চাকমা, রামহরি পাড়া গ্রামের নারী
কার্বারী সান্ত্বনা চাকমা ও ঘিলাছড়ি এলাকার নারী নেত্রী আলোরাণী চাকমা। ভিকটিম
শেফালি চাকমা সমাবেশে উপস্থিত থেকে ঘটনার বর্ণনা দেন।
সমাবেশে কাজলী
ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী নিরাপত্তার নামে ধর্ষণ,
শ্লীলতাহানির মতো জঘন্য কাজ করে যাচ্ছে। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে।
সেনাবাহিনীর কারণে পাহাড়ি নারীদেরকে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। যে
সেনাবাহিনীর সদস্যরা নারীদের ইজ্জ্বত হরণ করে, নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটায় সে ধরনের সেনাবাহিনী
আমাদের প্রয়োজন নেই। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী
প্রত্যাহারের দাবি জানান।
দয়াসেনা চাকমা
তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও নারী ধর্ষণ,
নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমরা কোন ঘটনারই সঠিক বিচার পাচ্ছি না। ২০০৯ সালেও
এই ঘিলাছড়িতে যমুনা চাকমা নামে এক নারী সেনা সদস্য দ্বারা ধর্ষণ চেষ্টার শিকার
হয়েছিলেন। সেই ঘটনার যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হতো তাহলে শেফালি চাকমা
সেনা সদস্যদের দ্বারা মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার হতেন না। তিনি অপরাধী সেনা
সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে ভিকটিম
শেফালি চাকমা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ১০ নভেম্বর ২০১৬ ঘিলাছড়ি
ক্যাম্পের (৭ বীর) মো: আরিফের নেতৃত্বে হুমায়ুন, বাবুলসহ একদল সেনা সদস্য গিয়ে
প্রথমে আমার ঘর তল্লাশি করে এবং অস্ত্র খোঁজার নামে আমাকে নানা হয়রানি করে। এক
পর্যায়ে হুমায়ূন, বাবুল আমাকে মারধর করে ও তলপেটে হাত দিয়ে জোরে আঘাত করে। এতে আমি
প্রচ- আঘাত পাই। (এ সময় তিনি তাঁর আঘাতের চিহ্ন দেখান)।
তিনি অভিযোগ করে
আরো বলেন, সেনা সদস্যরা আমার স্বামীকে চোখ বেঁধে বেদম মারধর করে। তারা আমাকে ও
আমার স্বামীকে অস্ত্র বের করে দিতে না পারলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। তিনি দোষী
সেনা সদস্যদের বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে
অন্যান্য বক্তারা সেনা সদস্যদের কর্তৃক শ্লীলতাহানির ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ
জানিয়ে ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও এ ধরনের ঘটনা
বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানান।
এদিকে সমাবেশ
শেষে অটোরিক্সাযোগে ফেরার পথে কুদুকছড়ি সেনা ক্যাম্পের চেকপোষ্টে কুদুকছড়ি এলাকা
থেকে অংশগ্রহণকারী হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৪ কর্মী-সমর্থককে(সবাই ছাত্রী) সেনারা
আটকিয়ে তাদের গাড়িতে থাকা সমাবেশের ব্যানার ও হ্যান্ড মাইক কেড়ে নেয়। দীর্ঘক্ষণ
তাদেরকে আটকিয়ে রেখে নানা জিজ্ঞাসা ও হয়রানি শেষে বিকালে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ
সময় সমাবেশ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও সেখানে আটকিয়ে হয়রানি করা হয় বলে জানা
গেছে। ছেড়ে দেওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হ্যান্ড মাইকটি ফেরত দেওয়া হলেও
সমাবেশের ব্যানারটি ফেরত দেওয়া হয়নি।
---------------------