""

কাউখালীর কচুখালিতে রাতের আঁধারে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়িতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি!

কাউখালী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি।। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কচুখালিতে শান্তি কুমার চাকমা (৬৮) নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য। গতকাল শনিবার (৪ নভেম্বর ২০১৭) দিবাগত রাত ২:৩০টায় এ তল্লাশি চালানো হয়। তবে তল্লাশির পরও অবৈধ কোন কিছুই না পেয়ে “কোন অসুবিধা হলে জানাবেন”– এ কথা বলে সেনারা ক্যাম্পে চলে যায়।

জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কচুখালীর পাশের ক্যাম্প থেকে একদল সেনা সদস্য শান্তি কুমার চাকমার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে তোলে। সেনারা  তাঁর বাড়ির প্রতিটি রুম তল্লাশি চালায়। কিন্তু অবৈধ কোন কিছুই তারা উদ্ধার করতে পারেনি। এ সময় সেনারা তাঁর বাড়িতে অবস্থানরত প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা জেএসসি পরিক্ষার্থীদের নানাভাবে জেরা করে মানসিক নির্যাতন চালায়।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন প্রবীণ এ শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা। কি কারণে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলো তা শান্তি বাবু কিছুই জানতে পারেননি। যাবার বেলায় সেনারা তাকে পরামর্শ দিলেন, “কোন অসুবিধা হলে জানাবেন।” অবশ্য মধ্য রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় তাঁর যে শারীরিক ও মানসিক অসুবিধা হয়েছে সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মধ্য রাতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে কারোর ঘুর ভেঙ্গে দেওয়া একমাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। তাতে শান্তি মাষ্টার ও জেএসসি পরিক্ষার্থীদের শান্তি ও পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটলে কিই-বা আসে?
শান্তি কুমার চাকমা কাউখালী এলাকায় শান্তি মাষ্টার নামে সমধিক পরিচিত। কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউপির পোড়াপাড়া নামক প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর জন্ম। পোড়াপাড়া নামটির তাপর্যও রয়েছে। কথিত আছে তকালীন বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুদক্ষ যোদ্ধারা গ্রামটিতে শান্তিবাহিনী খোঁজার নামে আগুনে পুড়ে ছার-খার করে দেয়। সেই থেকে গ্রামটি পোড়াপাড়া নাম ধারণ করে।
শান্তি মাষ্টার ভেবেছিলেন সারা জীবনে তো প্রত্যন্ত এলাকায় কাটিয়ে দিলেন। রাস্তা-ঘাট নেই। বাজার, হাসপাতাল, অফিস প্রভৃতি অনেক অনেক দূরে। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ঈশ্বর প্রদত্ত পা দুটো। তাই এবার জীবন সায়াহ্নে বাকী সময়টা একটু শান্তিতে কাটাবেন। তাই পেনশনের টাকায় কাউখালী সদরের কচুখালীতে একটা বাড়িও বানালেন। কিন্তু কই আর শান্তি! উপজেলা সদরের এ কি হাল! তাঁর বাড়িতে ২/১ বার চুরি ডাকাতিও হয়েছে। যোগ হয়েছে নতুন আরেক উপদ্রব। রাতের আঁধারে বাড়িতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি। এ যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’।
কাঠ জব্দ
কাউখালীতে জনগণ বাঁশ-গাছের উপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। গরীব জনগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাহাড় থেকে গাছ ও বাঁশ আহরণ করেন। সেই-গাছ ও বাঁশ ইছামতি, কাউখালী ও কোজেইছড়ি খালে ভাসিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। এতে পাহাড়ি-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের অর্থ উপার্জনের সুযোগ হয়। কিন্তু বিধিবাম। এখানে গাছেরাও বিদ্রোহ করে। দেশ দ্রোহী হয়। তাতে সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এই যেমন শনিবার (৪ নভেম্বর ২০১৭) রাতে ঘাগড়ার জুনুমাছড়া থেকে সেনা সদস্যরা এক জীপ ও এক ট্রাক কাঠ জব্দ করে। পাহাড়ি-বাঙালী উভয় সম্প্রদায়ের গরীব মানুষের পেটে লাথি পড়ে। বিনিময়ে কিছু সেনা অফিসারের প্রমোশন হয়। অভিযোগ গাছগুলির বৈধতা নেই মানে অবৈধ কাঠ। অবৈধ হলে বন বিভাগ তো আছে। অবশ্য গাছেরা জানে না, সেনাবাহিনী কি, বন বিভাগ কি। কার কি সম্পর্ক ও দায়িত্ব তা জানে না। তারা শুধু জানে তাদের উপর নির্ভর করে এলাকার লোকজন জীবিকা নির্বাহ করে।
———






0/Post a Comment/Comments