রাঙামাটি প্রতিনিধি ।। শহীদ রমেল চাকমা'র
২য় মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা ও অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছে বৃহত্তর
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদদ(পিসিপি) রাঙামাটি সদর থানা শাখা।
আজ ১৯ এপ্রিল সকাল ৭টায় রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি এলাকায় অস্থায়ী
শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন পরিবারের পক্ষে শহীদ রমেল চাকমা মা আলোদেবী চাকমা,
ইউপিডিএফ পক্ষ থেকে কর্ম চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে থেকে জেলা সহ-সাধারন
সম্পাদক রিপন চাকমা ও সদর থানা শাখার সহ-সভাপতি বিকিলন চাকমা।
এরপর রমেল চাকমা সহ সকল শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন
করা হয়।
পরে রমেল চাকমার স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে পিসিপি রাঙামাটি
সদর থানা শাখার সহ-সভাপতি বিকিলন চাকমা'র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ নেতা কর্ম
চাকমা,পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক রিপন চাকমা ওপিসিপি নেতা অসীম
চাকমা এবং শহীদ রমেল চাকমা'র মা আলোদেবী চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পিসিপি সদর থানা
শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এক্যাশন চাকমা।
সভায় বক্তরা বলেন, রমেল চাকমা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও নান্যাচর কলেজের এইচএসসি
পরীক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষার পাশাপাশি তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত নির্যাতিত
মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্দোলনরত ইউপিডিএফ এর অঙ্গ সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য
চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নান্যাচর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে
ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় যথারীতি অংশগ্রহণ করেন। সেদিন ৫ এপ্রিল পরীক্ষা
না থাকায় তিনি তরিতরকারি কিনে বাজার থেকে ফেরার পথে নান্যাচর জোন কমান্ডার বাহলুল আলম
ও রাঙামাটি রিজিয়ন জি-টু মেজর তানবীর নেতৃত্বে রমেল চাকমাকে গ্রেফতার করে জোনে নিয়ে
যাওয়া হয়। জোনে নেয়ার পর তার উপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় অমানুষিক নির্যাতন। এতে অসুস্থ
হয়ে পড়লে সেনারা তাকে প্রথমে নান্যাচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি চাইলে অবস্থা
বেগতিক দেখে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষ কর্তৃপক্ষ সেখানে ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। ফলে সেনারা
তাকে সেদিন রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে পুলিশ প্রহরায়
চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়
১৯ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। এর পরদিন তার মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে বাড়িতে নেয়ার পথে বুড়িঘাট থেকে সেনাবাহিনী পরিবারবর্গের কাছ থেকে মরদেহটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং ২১ এপ্রিল ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি ছাড়াই পেট্রোল ঢেলে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রমোশন লাভের আশায় নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি
করছে। কিন্তু এসব নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যেও প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ রাজপথে অবিচল রয়েছে।
যতই নিপীড়ন-নির্যাতন, হামলা-মামলা করা হোক না কেন পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ
হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত
করেন বক্তারা।
বক্তরা ক্ষোভ করে বলেন আজ রমেল চাকমা হত্যার ২ বছর বছর অতিক্রান্ত হলেও
অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল বাহলুল আলম এবং মেজর তানবীর ও তাদের দোসরদের এখনো
শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। উপরন্তু তাদেরকে এখনো বহাল তবিয়তে রেখে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে
মদদ যোগানোর মাধ্যমে খুন-খারাবিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ নিপীড়ন-নির্যাতন বাড়ানো
হয়েছে। তাদের নিপীড়নের হাত থেকে সাধারণ মানুষও এখন আর নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না।
বক্তরা বলেন অবিলম্বে রমেল হত্যার সাথে জড়িত লে.কর্নেল বাহলুল আলম, মেজর
তানবীরসহ তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
--------------
--------------


