সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন) আদালতের দেয়া
কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশকে একটি বিচারিক গর্ভপাত আখ্যায়িত করে তার নিন্দা
জানিয়েছে।
গতকাল (২৮ এপ্রিল) কমিশনের কো-চেয়ার সুলতানা
কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপৌলৌ ও মিরনা কানিংহ্যাম কেইন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়,
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচার ব্যবস্থার প্রতি ইতিমধ্যে মানুষের যে ক্ষীণ আস্থা, এই রায়
হলো তার প্রতি একটি বড় আঘাত।
তারা বলেন, গত ২৩ এপ্রিল কল্পনা চাকমার
গুমের বিষয়ে রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যে রায় দিয়েছে তা কমিশনকে
বিমর্ষ ও হতাশ করেছে।
‘রাঙামাটি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
ফাতেমা বেগম মুক্তর তত্ত্বাবধানে পুলিশের চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে মামলা থেকে সকল
সন্দেহভাজনদের অব্যাহতি দেয়ার আদালতের সিদ্ধান্তে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও হতাশ।’
কমিশনের তিন কো-চেয়ার কল্পনা চাকমা অপহরণ
ঘটনার পরিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে দায়ি ব্যক্তিদের
বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের যে দায়িত্ব রয়েছে তা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের
প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১১ জুন রাতে (১২
জুন) হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন
নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন। এ সময় তার বয়স ছিল ২৩ বছর।
পার্শবর্তী কজইছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার লে.
ফেরদৌস এই অপহরণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। অপহরণকারীরা কল্পনা চাকমার সাথে
তার দুই ভাইকেও অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়। তবে তারা অর্ধ পথে কোন মতে পালিয়ে যেতে
সক্ষম হন।
দুই ভাই অপহরণকারীদের মধ্যে তিন জনকে চিনতে
পেরেছিলেন। এরা হলেন কজইছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার লে. ফেরদৌস, দুই ভিডিপি সদস্য নুরুল
হক ও সালেহ আহমদ।
ঘটনার পর কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা
বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি কোন ন্যায়বিচার
পাননি।
মোট ৩৮ জন কর্মকর্তা তদন্ত চালান, তবে
তাদের কেউ কল্পনার অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ হন। পরে ২০১৬ সালে রাঙামাটির
তৎকালীন পুলিশ
সুপার সৈয়দ তারিকুল হাসান ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা
দেন। রিপোর্টে তিনি অপহরণ ঘটনার সাথে কাউকে সনাক্ত করতে পারেননি বলে উল্লেখ করেন।
কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এই রিপোর্টের
ওপর নারাজি পিটিশন দায়ের করেন। তিনি জানান যে তদন্তের সময় অভিযুক্ত কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হয়নি, উপরন্তু তাকে ও কল্পনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হয়রানি করা হয়েছে।
সেই পর থেকে গত ২৩ তারিখের আগ পর্যন্ত
উক্ত পিটিশনের ওপর শুনানি চলমান ছিল। এদিন আদালত ২০১৬ সালে পুলিশের দেয়া চূড়ান্ত
রিপোর্ট গ্রহণ করে মামলাটি খারিজ করে দেন।
পুনঃ তদন্তের আদেশ না দিয়ে আদালত কর্তৃক
অবিশ্বাসযোগ্য এই তদন্ত রিপোর্ট গ্রহণে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন মর্মাহত বলে তার দেয়া
বিবৃতিতে উল্লেখ করে।
কমিশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘এই রায় কেবল
পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীরভাবে প্রোথিত দায়মুক্তি সংস্কৃতিকে জোরদার করেছে তাই নয়,
তা অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে এবং বিশেষত অভিযুক্ত সেনা সদস্যদেরকে দেয়া ব্যবস্থাবদ্ধ
নিরাপত্তাকেও উন্মোচিত করেছে।’
এখানে বলা প্রয়োজন যে, অপহরণ ঘটনার পর
ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সে সময় আওয়ামী লীগ সরকার ড. অনুপম সেনকে প্রধান করে একটি
তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়েছিল। এই কমিটি তদন্ত শেষে সরকারের কাছে তার রিপোর্ট
জমা দিলেও তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।