বান্দরবান, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
বান্দরবানের লামায় রাবার কোম্পানি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক আবারো ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় রেংয়েন কার্বারি পাড়ায় স্থাপিত অশোক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল ২০২৪) লামা উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
আদালতে রাবার বাগান ক্ষতিগ্রস্ত করার মিথ্যা অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। লামা ইন্ডাস্ট্রিজের
পক্ষে ফৌজদারী অভিযোগ করে মামলাটি (যার ধারা- ধারা-১৪৩/৪২৭/৪৩৫/৪৩৬ ও ৫০৬ (২) দন্ডবিধি)
দায়ের করেন মো. আব্দুল মালেক (৪০) নামের এক ব্যক্তি। এর আগেও তিনি একইভাবে মামলা দায়ের
করে পাড়াবাসীদের হয়রানি করেছিলেন।
অভিযোগকারী আবদুল মালেকের বাড়ি লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কেয়াজু পাড়ায়।
তার পিতার নাম মৃত আব্দুল মান্নান।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা হলেন- ১. উচিং জিমা মারমা প্রকাশ
উ চাইন্দিমা। তিনি অশোক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ, ২. জোহান ত্রিপুরা, ৩. রেংয়োং মুরুং,
৪.মতি ত্রিপুরা, ৫. রংধজন ত্রিপুরা, ৬. লাংকম মুরুং, ৭.রিংরং মুরুং, ৮. রেংয়েন মুরুং,
৯. যোহন মুরুং, ১০. কাদিং মুরুং, ১১. দুই থং মুরুং এবং অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন।
এদের মধ্যে মতি ত্রিপুরা ও লাংকম ম্রো’কে গতবছর একই ষড়যন্ত্রমূলক মামলায়
গ্রেফতারের শিকার হয়ে কারাবরণ করতে হয়েছিল। এখনো পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েকটি
ষড়যন্ত্রমূলক মামলা চলমান রয়েছে।
অভিযোগকারী ৭ এপ্রিলের যে ঘটনা উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন তা সম্পূর্ণ
মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে পাড়াবাসীরা জানিয়েছেন। মূলত পাড়াবাসীদের
ভোগদখলীয় ৪০০ একর ভূমি জবরদখল করে তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যেই এভাবে মিথ্যা
মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক লামা
সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া, লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা
পাড়াবাসীদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই অংশ হিসেবে
আগুন লাগিয়ে দিয়ে পাড়াবাসীদের জুমভূমি, ফসল পুড়িয়ে দেয়া, বাগান কেটে দেয়া, পানির উৎস
ঝিড়িতে বিষ প্রয়োগ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর. মিথ্যা মামলা
দিয়ে হয়রানিসহ নানা উৎপীড়ন চালানো হচ্ছে তিন পাড়াবাসীর উপর।
এর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত
হলেও সরকার-প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা
হয়নি, পাড়াবাসীরা কোন বিচার পায়নি।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সংসদীয় প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা আশ্বাস প্রদান করলেও পাড়াবাসীরা কোন প্রতিকার পায়নি। উল্টো প্রশাসন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ভূমিদস্যু রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজনকে সহযোগিতা দিয়ে পাড়াবাসীদের হয়রানি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।