সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
বুধবার, ১ মে ২০২৪
আজ পহেলা মে মহান মে দিবস। আজকের দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের
দিন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে
বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশ শ্রমিকদের সম্মানে মে
দিবস বা পহেলা মে-কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করে থাকে।
দিবসটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কিন্তু কাজ অনুপাতে
পারশ্রমিক ছিলো খুব কম। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক
মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। এ দাবি পূরণের সময়
হিসেবে ১৮৮৬ সালের ০১ মে-কে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। এর সমর্থনে আমেরিকা জুড়ে
হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়। ১ মে থেকে মিছিল আর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে
ওঠে আমেরিকার শিকাগো শহর। কিন্তু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি।
১৮৮৬ সালের ০৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও আন্দোলন
গড়ে তোলেন শ্রমিকরা। এসময় হে মার্কেট স্কয়ারে শ্রমিক পক্ষে বক্তব্য রাখেন
আমেরিকান লেবার অ্যাক্টিভিস্ট অগাস্ট স্পিস। উদ্বেলিত শ্রমিকদলের কিছু দূরেই ছিলো
পুলিশ। এসময় সবার অলক্ষ্যে হঠাৎ পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ হলে
নিহন হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে,
পুলিশের গুলিতে নিহত হন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। পুলিশের ওপর কে বা কারা বোমা
হামলা করেছিলো তা সঠিক জানা না গেলেও, পুলিশ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ও আটক করা হয়
অগাস্ট স্পিসসহ আরও আটজনকে। পরের বছর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর অগাস্ট স্পিসসহ
অভিযুক্ত ছ’জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত বাকি দু’জনের একজন কারাবন্দি অবস্থায়
আত্মহত্যা করেন ও অন্য একজনের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।
এ ঘটনার দু’বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে
ফরাসি বিপ্লবের একশো বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম
কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে উদযাপনের প্রস্তাবনা
দেওয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে
গৃহীত হয়।
যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শ্রমিক
আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিলো ঠিক তখনই উন্মোচিত হয় শ্রমিক আন্দোলনের এক
মর্মান্তিক সত্য। প্রমাণিত হয় পুলিশের ওপর বোমা হামলার দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত
অগাস্ট স্পিস ও বাকি সাতজন মূলত দায়ী ছিলেন না, তারা ছিলেন নির্দোষ। তবে আসল
অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়নি। যাই হোক, ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক
অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়তে থাকে। ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে
অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময়
নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন
মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি
আহ্বান জানানো হয়।
এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে
পরবর্তীতে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ০১ মে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার
সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশের শ্রমিকরা মে মাসের ০১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে
পালনের দাবি জানায়। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত
হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই
দিনটির তাৎপর্য
ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি।
কিন্তু বাংলাদেশে দিবসটি পালন
করা হলেও এদেশের শ্রমজীবী মানুষ আজও নিপীড়িত-নির্যাতিত ও তাদের ন্যায্য অধিকার
থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। পান না তাঁদের ন্যায্য মজুরি। ফলে শ্রমিকদেরকে প্রায় সময়ই
বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।