সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪
বান্দরবানে “ব্যাংক ডাকাতি ও একজন ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের” ঘটনার
সঙ্গে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সম্পৃক্ততার অভিযোগে নারী-শিশু নির্বিশেষে গ্রেফতার
বম জনগোষ্ঠীর শতাধিক ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে ও তাদের ওপর চলমান দমনপীড়ন বন্ধ করতে বাংলাদেশ
সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল ২২ মে সংগঠনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে এই দাবি
জানায় এবং একই দাবিতে আগামী ২২ আগষ্ট ২০২৪ এর মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব ইংরেজি অথবা নিজস্ব
ভাষায় একযোগে তার কাছে চিঠি লেখার জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে তাদের ওয়েবসাইটে চিঠির একটা নমুনাও দেয়া হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘৭ এপ্রিল ২০২৪ থেকে দুইটি ব্যাংক
ডাকাতি এবং কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) দ্বারা ব্যাংক ম্যানেজারকে জিম্মি করার
কথিত অভিযোগের পর বান্দরবানে চলমান সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে এক গর্ভবতী মহিলা ও
শিশু সহ ১০০ জনের অধিক আদিবাসী বম জনগণকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশ
কর্তৃপক্ষ পুরো বম সম্প্রদায়কে হয় কেএনএফ এর সদস্য নয়তো সমর্থক হিসেবে ধরে নিয়ে
গ্রেফতারকৃতদের বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে দেশদ্রোহিতা এবং পেনাল কোডের অধীনে ডাকাতি
ও অপহরণের মতো বিভিন্ন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
![]() |
দুধের শিশুসহ বম নারীদের গ্রেফতার করা হয়। #ফাইল ছবি |
‘পুলিশের নথিতে গ্রেপ্তারকৃতদের নাম উল্লেখ নেই, তাদের কেবল “১৩০-১৫০
জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ডাকাত” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আদালতে
হাজির করে পুনরায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, বাকিদের এখনও আদালতে হাজির করা হয়নি।’
প্রকৃত ডাকাতদের সনাক্ত করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ
কর্তৃপক্ষ প্রকৃত অপরাধীদের টার্গেট না করে পুরো আদিবাসী সম্প্রদায়কে নিপীড়ন করছে
বলে সংগঠনটি মন্তব্য করেছে।
সংগঠনটি উদ্বেগ জানিয়ে আরও বলছে, ‘আদিবাসী বম জনগণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের
দ্বারা ব্যাপক নিপীড়নের ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সারাদিন
অভুক্ত অবস্থায় রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ মাদের গ্রেফতার
করা হয়েছে।’
![]() |
যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণে বম জনগোষ্ঠির লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। |
চিঠিতে বাংলাদেশে প্রায় ১১,০০০ বম জনগণ রয়েছে জানিয়ে সংগঠনটি বলছে,
‘তাদের বেশিরভাগই গ্রেফতার, অনাহার, শিক্ষার সুযোগ এবং কর্মসংস্থানের অভাবের ঝুঁকিতে
বাস করছে। সামরিক বাহিনী নতুন করে কিছু গ্রামে
ক্যাম্প স্থাপন করেছে এবং গ্রামবাসীদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে তাদের পরিবারের সদস্যদের
থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।’
সংগঠনটি অবিলম্বে বম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলমান দমন অভিযান বন্ধ, নির্বিচারে গ্রেফতার হওয়া সকল বেসামরিক নাগরিককে, বিশেষত গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের অবিলম্বে মুক্তি, গ্রেফতারকৃত সকলকে পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা ও আত্মীয়দের শংকামুক্তভাবে সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান, আদিবাসীদের সম্মতি নিয়ে এবং জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং পার্বত্য চুক্তির সকল মানবাধিকার বিধান সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।