""

খাগড়াছড়িতে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে পাহাড়িদের ওপর সেটলারদের হামলা: আহত বেশ কয়েকজন, ১৪৪ ধারা জারি

লাাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পাহাড়িদের ওপর হামলা চালায় সেটলার বাঙালিরা।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

খাগড়াছড়িতে ছাত্রী ধর্ষণকারী শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর হামলা, দোকানপাটে ভাঙচুর-লুটপাট চালানোর খবর পাওয়া গেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রশাসন শহরে ও সদর উপজেলা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

ঘটনার বিষয়ে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর ২০২৪) সকালে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক (ইন্সট্রাক্টর, বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) সোহেল রানা ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি ওই ছাত্রীকে তার কক্ষের ভিতর নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখেন। এ খবর পেয়ে দুপুরে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা গিয়ে ওই ছাত্রীকে শিক্ষক সোহেল রানার কক্ষ থেকে উদ্ধার করেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী সোহেল রানা তাকে ধর্ষণ করেছে বলে জানায়।

এরপর শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সোহেল রানাকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে সেখানে অবস্থান নেন।

পরে পুলিশও সেখাানে এসে উপস্থিত হয়। তবে পুলিশ সোহেল রানাকে গ্রেফতার না করে তাকে নিরাপত্তা দেয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশে-পাশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা টেকনিক্যাল গেইটের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। এমতাবস্থায় বেলা পৌনে ২টার দিকে একদল সেটলার লাঠিসোটা ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ এসে ধর্ষক সোহেল রানাকে গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থান নেয়া পাহাড়ি শিক্ষার্থীও লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সেটলাদের হামলায় একজন শিক্ষার্থী চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হন। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। সেটলাররা মহাজন পাড়ায়ও হামলার চেষ্টা করে। সেখানে তারা পাহাড়িদের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় বাজার থেকে ফেরার পথে দক্ষিণ খবংপুজ্জে আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের সেবক উজ্জ্বল মারমাকে সেটলাররা কিরিচ দিয়ে পিঠে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা  হয়। আহত উজ্জ্বল চাকমার বাড়ি পানছড়ি উপজেলার লোগাংয়ের উল্টাছড়ি গ্রামে বলে জানা গেছে।

সেটলাররা কিরিচ দিয়ে পিঠে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দক্ষিণ খবংপুজ্জে
আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের সেবক উজ্জ্বল মারমাকে।

সেটলারদের ইট-পাটকেলের আঘাতে মহাজন পাড়ার দুই বাসিন্দাও আহত হন। তারা হলেন-কান্তা মনি চাকমা, সাবেক পৌরসভা কাউন্সিলর, পিতার নাম অরুণ কুমার চাকমা ও শ্যামল কান্তি চাকমা, পিতা-ভুজলাল চাকমা।

বিকাল প্রায় ৩টা পর্যন্ত উত্তেজনা চলে। হামলার সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবস্থান করলেও হামলাকারী সেটলারদের নিবৃত্ত করতে দেখা যায়নি। বরং সেটলারদের পেছনে পেছনে সেনাবাহিনীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

হামলার পর প্রশাসন বিকাল ৩টা থেকে শহরে ও সদর উপজেলা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে শহরে পাহাড়িদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেটলাররা যে কোন সময় আবারো হামলা চালাতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। ফলে বলা যায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজমান।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিকেল থেকে পানখাইয়া পাড়া এলাকায়ও সেটলাররা হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে খাগড়াছড়ি সদর বাজার - পানখাইয়া পাড়া সড়কের দোকানপাটে সেটলাররা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। পাহাড়িরাও প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পুলিশ সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিল। সে সময়ও তাকে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন করেছে। পরে জেল থেকে জামিনে মুক্তির পর তাাকে পূনরায় টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার এই পুনঃনিয়োগ মেনে নেয়নি। গত ৫ সেপ্টেম্বর সোহেল রানার পুনঃনিয়োগ বাতিলের দাবিতে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছিল এবং জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছিল।

কিন্তু জেলা প্রশাসক কেন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments