সচিব চাকমা, আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় পুনর্গঠন কমিটি,
পাহাড়ি গণ পরিষদ
[লেখাটি ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি স্বাধিকার বুলেটিনের ১৭তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিলো। সিএইচটি নিউজের পাঠকদের জন্য এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হচ্ছে। ১ম পর্ব]
দীর্ঘ বিশ-বাইশ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে ‘পোড়
খাওয়া’ ও ‘অভিজ্ঞ’ বলে দাবিদার সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পার্বত্য
চুক্তি’র তিন বছরের মাথায় এই প্রথম তাদের দলীয় প্রকাশনা ‘১০ই নভেম্বর স্মরণে’ নামের
সংকলনে (১০ নভে, ২০০০) দু’টো খোলা চিঠি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। খোলা চিঠির একটি নিবেদন
করা হয়েছে মূলত নয়াযুগের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ)
উদ্দেশ্যে, তাদের ভাষায় তা “চুক্তি বিরোধী’দের প্রতি। আর অপর চিঠিখানা প্রয়াত মানবেন্দ্র
নারায়ন লারমার উদ্দেশ্যে রচিত। যার স্মরণে গোটা আস্ত একটা সংকলন উৎসর্গীত, তার উদ্দেশ্যে
আবার আলাদা করে খোলা চিঠি!!! প্রথম চোটেই হোঁচট খেতে হয়। এর পেছনে অন্য কোন অভিসন্ধি
নেই তো?
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত বিশেষত আন্দোলন সগ্রামের ব্যাপারে বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনামূলক যে কোন লেখা আমাদের কাছে আদরণীয়। সে সব লেখা আমরা সগ্রহ করি এবং পড়ে দেখি। তা থেকে আমরা নতুন কিছু জানতে ও শিখতে চেষ্টা করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন সময়ের রাজনৈতিক প্লাটফরম ইউপিডিএফ’এর সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে আমরা জনসংহতি সমিতির খোলা চিঠি দুটিও বলতে গেলে উৎসুক্য আর মনযোগের সাথে পড়তে চেষ্টা করেছি। এত বছর ধরে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আর ‘পোড় খাওয়া’ বিদ্যা দিয়ে রচিত তাদের খোলা চিঠি হতে আমরা নতুন অভিযাত্রীরা শিক্ষণীয় কিছু পেতে পারি কিনা, সেটা আমরা অনেক খতিয়ে দেখেছি। তাদের এত বছরের সংগ্রামের অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঐকান্তিকভাবে চেষ্টা করে দেখেছি, তাদের লেখা থেকে কিছু উদ্ধার করা যায় কিনা।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা বলতে বাধ্য যে,
তাদের লেখা পড়তে গিয়ে বার বার আমাদের হোঁচট খেতে হয়েছে। আঁতকে উঠতে হয়েছে তাদের তথ্যের
বিকৃতি দেখে। তার উপর এমনভাবে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা, স্ববিরোধিতা, লেখার মান,
ভাষার ধরন, নাটুকেপনা ভঙ্গীমা, নিম্নমান আর লেজে গোবরে অবস্থা দেখে সাংঘাতিক ঘেন্না
এসেছে। এসব দেখলে তাদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল ব্যক্তিও যে নিরাশ হয়ে পড়বেন তাতে সন্দেহ নেই। সর্বোপরি খোলা চিঠির
শিরোনামের মধ্যেও রয়েছে বড় রকমের ভুল। যাকে বলে একেবারে গোড়ায় গলদ।
শিরোনাম হচ্ছে “চুক্তি বিরোধীদের প্রতি খোলা চিঠি”। এখানে ক্যানভাসটা কেবল ইউপিডিএফ নয়। চুক্তি বিরোধী কেবল ইউপিডিএফ নয়। আরো অনেক সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ আর সাধারণ নাগরিক চুক্তি মানতে পারেননি। বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও চুক্তির ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করেছে। এমন কি তারা বিবৃতিও দিয়েছে। বি,এন,পি, জাতীয় পার্টি, জামাতে ইসলামীসহ বাংলাদেশের আরো কিছু খুচরো দক্ষিণপন্থী ও উগ্র মৌলবাদী দলও চুক্তির বিরোধিতা করেছে। যদিও এই বিরোধিতার পার্থক্য হচ্ছে আকাশ পাতাল। বি,এন,পি, জাতীয় পার্টি, জামাতে ইসলামী দলগুলোর চুক্তি বিরোধিতা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে পাহাড়িদেরকে ন্যায্য অধিকার না দিয়ে চিরদিন বঞ্চিত করে রাখা। আর ইউপিডিএফ সহ দেশে-বিদেশের আরো যে সব দল-সংগঠন-ব্যক্তি বিরোধিতা করছেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে লোক ঠকানোর চুক্তি বাতিলপূর্বক পাহাড়িদের ন্যায্য দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
চুক্তি বিরোধী সম্বোধন করে খোলা চিঠি দিলে এদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে কমবেশী বক্তব্য দেয়া আবশ্যক। যেহেতু শিরোনামের আওতার মধ্যে সব ধরনের বিরোধীরাই পড়েন। আর সেভাবে যদি সব বিরোধীদের ব্যাপারে লিখতে না চাইলে, তাও খোলা চিঠির প্রথম দিকে পরিষ্কার করে দিতে হবে যে, চুক্তি বিরোধী বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে এবং মূলত কাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যটা দেয়া হচ্ছে। না হলে শিরোনাম আর বক্তব্যের সামঞ্জস্য না থাকলে তা বিভ্রান্তি হয়ে পড়তে বাধ্য। নামকরণের সার্থকতা থাকলে কোন লেখারই মূল্য থাকে না। স্কুল-কলেজ লেভেলে এমনি এমনি প্রবন্ধের ‘নামকরণের সার্থকতা’ পড়ানো হয় না।
অথচ শিররোনামের সাথে জনসংহতি সমিতির খোলা
চিঠির সামঞ্জস্যই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চুক্তি বিরোধীদের প্রতি সম্বোধন করে তারা বিরাট
‘আ-গু-জো’ (বড় রকমের পদক্ষেপ) নিলেও, সে অনুসারে ভিতরের লেখায় তার তেমন কিছুই উল্লেখ
নেই। চুক্তি বিরোধী অন্যান্য দল-সংগঠনগুলোর ব্যাপারে তারা টু শব্দটি উচ্চারণ করেনি।
ভয় পেয়ে বা তাদের সাথে গোপন আঁতাত থাকার কারণে ওদের ব্যাপারে জনসংহতি সমিতি কিছু উল্লেখ
করতে সাহস করেনি, মুখ খুলতে পারেনি, সে ধরনের কোন অভিযোগ না তুলেও এটা প্রশ্ন করা যায়
যে, জনসংহতি সমিতি আদতে শিরোনাম-নামকরণের সার্থকতা সম্পর্কে আদৌ কোন ধারণা রাখে কিনা?
না হলে তাদের খোলা চিঠির শিরোনামের এই হাল হবে কেন?
যুক্তির খাতিরে যদি আমরা ধরে নিই যে, শিরোনামের তাৎপর্য বুঝার গন্ডগোল থাকায় জনসংহতি সমিতির জীবন বাবু বেশধারী নেতা ‘আজাবের-ন-হিয়া’(সাধ্যাতীত) একটা শিরোনামে হাত দিয়েছেন। ‘চুক্তি বিরোধীদের প্রতি’ নাম দিলেও, তিনি আসলে বুঝাতে চেয়েছেন ইউপিডিএফ’কে। অন্য সংগঠন নয়, তার আসল টার্গেট হচ্ছে ইউপিডিএফ। ইউপিডিএফকেই তিনি ভুল ধরিয়ে দিতে চান। হাজার বার তা তিনি বা অন্য যে কেউ করতে পারেন। তাতে ইউপিডিএফ বাধা দেবে না, নিরুৎসাহিত করবে না। ‘হাত ভেঙে দিয়ে কারোর লেখনী বন্ধ করার রাজনীতি’-তে ইউপিডিএফ বিশ্বাস করে না। সে ধরনের ‘হাত ভেঙে দিয়ে লেখনী বন্ধ করে দেয়ার রাজনীতিকে’ ইউপিডিএফ সাংঘাতিকভাবে ঘৃণা করে। বরং ইউপিডিএফ উন্নতমান সম্পন্ন রাজনৈতিক পর্যালোচনা বিতর্ককে স্বাগত জানায়। রাজনৈতিক পর্যালোচনা-বিতর্কের মাধ্যমে সত্য জিনিস উঠে আসুক, ইউপিডিএফ সেটাই চায়। ইউপিডিএফ'এর রাজনৈতিক মত, পথ, লক্ষ্য, নীতি আদর্শ-কর্মসূচী-কার্যক্রম নিয়ে গণতান্ত্রিক যে কোন দল আলোচনা-সমালোচনা করতে পারবেন। আমাদের সাথে রাজনৈতিক বিতর্কে অবতীর্ণ হতে চাইলে তার জন্যও আমরা প্রস্তুত। আমরা রাজনৈতিক আলোচনা-পর্যালোচনা-বিতর্ককে স্বাগত জানাই। রাজনৈতিকভাবে আমাদেরকে সমালোচনা করার জন্য আমরা শুধু দল নয়, যে কোন সচেতন নাগরিককেও আহ্বান জানাই।
অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে যে, জনসংহতি
সমিতির নেতা জীবন বাবুর রচিত খোলা চিঠি আদ্যপান্ত পড়ে, তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও তাতে
ইউপিডিএফ’এর নীতি-আদর্শ-কর্মমূচী-কার্যক্রমের উপর রাজনৈতিকমান সম্পন্ন যুক্তিগ্রাহ্য
সমালোচনা উদ্ধার করা যায়নি। ইউপিডিএফ’এর নীতি-আদর্শ-কর্মসূচী-কার্যক্রমের উপর জীবন
বাবু সমালোচনার দাঁত বসাতে ব্যর্থ হয়ে, অপ্রাসঙ্গিকভাবে অনেক আজগুবি বিষয়ের অবতারণা
করেছেন। দাঁত না জন্মানো বাচ্চা ছেলে খেতে
না পারলেও লোভের বশে ফলমুল আপেল-কমলা ইত্যাদিতে কামড় দিয়ে যেভাবে নষ্ট করে ফেলে, এদিক-সেদিক
ছুঁড়ে দেয়ে, খোলা চিঠিতে জীবন বাবুও বাস্তবে তাই করেছেন। মনে করেছিলেন রাজনৈতিকভাবে
সমালোচনা করতে পারবেন। কিন্তু ইউপিডিএফ’কে সমালোচনা করতে গেলে যে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক
মান আর রাজনৈতিক পুঁজি থাকতে হয়, তা তিনি বোধহয় আবেগের চোটে ঠাহর করতে পারেননি। সমালোচনায়
নেমে রাজনীতি মাঠের শর্ষে ফুল দেখেছেন। খেই হারিয়ে অনেক অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে তালগোল
পাকিয়ে ফেলেছেন। একেবারে লেজে গোবরে অবস্থা হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক কোন একটা বিষয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে একটা প্যারা শেষ করতে পারেননি। একটা প্যারা দূরে থাক, কয়টা বাক্য তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন। জীবন বাবু আপনাকে সবিনয়ে অনুরোধ করি, দয়া করে আপনার খোলা চিঠি আরো একবার পড়ে দেখুন। এক বিষয় থেকে আরো এক বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে লাফ দিয়ে গুলিয়ে ফেলে জগাখিচুড়ি পাকিয়েছেন শুধু। কোন বিষয়েই তো কামড় বসাতে পারেননি।
আপনার খোলা চিঠি পড়লে এটাই দিবালোকের
মতো পরিষ্কার হয়ে উঠে যে, রাজনৈতিকভাবে সমালোচনা করা নয়, তাতে আপনি কোন কূল-কিনারা
করতে পারেননি, ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুন্ন করাই হচ্ছে আপনার আসল উদ্দেশ্য। কারোরই বুঝতে বাকি
নেই যে, ইউপিডিএফ’এর আহবায়ক প্রসিত খীসাই হলেন আপনাদের আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু।
তাই যদি হবে তাহলে এত ভড়ং না করে সরাসরি ‘প্রসিত খীসার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি’ এই শিরোনাম দিলেন না কেন? তাহলে শিরোনাম নিয়ে আপনাদেরকে আমাদের এত লেকচার দিতে হতো না।
জীবন বাবু আপনাদের জনসংহতি সমিতির খোলা চিঠির মান এতই
বহু বছরের পোড় খাওয়া সগ্রামী অভিজ্ঞতা ও বিদ্যায় পরিপূর্ণ যে, মূল বক্তব্যে আসতে গেলে
একেবারে সাধারণ বিষয় শিরোনাম, শব্দগত ব্যবহার, বাক্য পঠন... ইত্যাদি শুদ্ধ করে দেবার
জন্যও আমাদের অনেক কাগজ-কালি খরচ হয়ে যায়! এ ধরনের একেবারে স্কুল-কলেজ লেভেলের বিষয়
নিয়ে যদি এখনো আপনাদের সাথে আমাদের সময় নষ্ট করতে হয়, তাহলে আপনাদের সাথে কি আর উন্নত
মানের রাজনৈতিক বিতর্ক হবে?
চিঠির বিষয়বস্তুর প্রসঙ্গে আসা যাক, শুরু করছি আপনাদের ভাষায়:
“আজকাল আমাদের দেশের অবস্থা
দেখে মনে হয় দেশ ও জুম্ম জাতির প্রতিযোগিতায় নেমেছি, কাকে মেরে কে আগে জাত প্রেমিকের
দায়িত্ব পালন করবে সেটারই যেন প্রতিযোগিতা চলছে। প্রসিত বাবুদের অবস্থা দেখে তাই
কখনো ভাবি আমাদের দেশ-জাত সেবকের অভাব নেই। কেবল অভাব নেই বললে ভুল হবে। বলতে হবে স্বায়ত্তশাসন
প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কে আগে অবদান রাখতে পারে সেটাই যেন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ
সুনামের ভাগটা কেড়ে নেওয়ার জন্য তারা উদ্ধত”। [এখানে বুঝার সুবিধার্থে আন্ডার
লাইন করা হয়েছে] সম্মানিত পাঠক লক্ষ্য করুন “দেশ ও জুম্ম জাতির প্রতিযোগিতায় নেমেছি”
কথাটি ব্যাকরণগতভাবে কতটুকু সঠিক।
জীবন বাবুদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা কোন জায়গায় তা তিনি এক্কেবারে ‘ফক-ফকা’ করে পরিষ্কার করেছেন। জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বচক্র ভীষণভাবে শংকিত যে, “স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারা (প্রসিত খীসারা) সুনামের ভাগটা কেড় নেয়ার জন্য উদ্ধত”। কাজেই স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার “সুনাম” যাতে জীবন বাবু তথা জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বগোষ্ঠী থেকে কেউই কেড়ে নিতে না পারে, কিংবা সামান্যতম ভগ্নাংশও ভাগ বসাতে না পারে, সেজন্য যাদেরকে তারা “সুনাম” কেড়ে নিতে পারার মতো শক্তিশালী মনে করছেন, তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাদের চিঠিতে এটা পরিষ্কার যে, “স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সুনাম” ধরে রাখতে হিমশিম খাওয়া। দুর্বল সংগঠন জনসংহতি সমিতি অন্য কোন ব্যক্তি বা সংগঠন আর স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ুক তা চায় না। ভবিষ্যতে কেউই আর যাতে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন করে তাদের সুনাম কেড়ে নিতে না পারে সে উদ্দেশ্যে জনসংহতি সমিতি গোপন হিট লিষ্ট ও তৈরী করে ফেলেছে।
এই হিট লিষ্টের প্রথম টার্গেট হলেন প্রসিত
খীসা। এখন যারা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন তারা সবাই জনসংহতি
সমিতির হিট লিষ্টে রয়েছেন। এই হিট লিষ্ট অনুযায়ী জনসংহতি সমিতি যুবনেতা প্রদীপ লাল
ও নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান কুসুম প্রিয়কে অত্যন্ত বর্বরোচিতভাবে খুন করেছে। কিন্তু
প্রসিত খীসাসহ বাকীদের এখনো তা পারেনি। শারিরীকভাবে হত্যা করতে সক্ষম না হওয়ায়, এখন
দুর্নাম আর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ব্যক্তি ইমেজ
হত্যা করার হীনপন্থা জনসংহতি সমিতি অবলম্বন করেছে। রাজনৈতিক ভাষায় যাকে বলে “Smearing Campaign" সেটাই জনসংহতি সমিতি শুরু করে দিয়েছে। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক অন্য কোন কিছুতে
নয়াযুগের পার্টি ইউপিডিএফ’এর সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে, জীবন বাবুরা এখন তথ্য বিকৃত
করে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, কুৎসা রটিয়ে ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুন্ন করার এ ধরনের অত্যন্ত ঘৃণ্য
নোংরা অভিযানে (Smearing Campaign) নেমে পড়েছেন।
চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে, সরাসরি
তিনি বলতে পেরেছেন, “... চিঠি পড়ে হয়তো ভাবতে
পারেন ব্যক্তিগত আক্রমণ হয়ে গেল। তা মনে করুন”। জীবন বাবু শারিরীকভাবে রাজনৈতিক
প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে না পারার ক্ষেতে “মনের ঝাল” মেটাতে Character assassination করতে নেমেছেন। কচি-শালীনতার শেষ সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। কাউকে বাদ রাখেননি।
আমাদের সমাজে কারোর বাপের নাম ধরে গালি দেয়া চরম বেয়াদবি, অভদ্রতা আর গর্হিত ব্যাপার।
সামাজিক মূল্যবোধের যে গড়পড়তা মানদন্ড, তারও নীচে তিনি নেমেছেন। রাজনৈতিক মত পার্থক্যের
কারণে প্রসিত খীসাকে না হয় জীবন বাবু আক্রমণ করেছেন, কষে গালাগাল দিয়েছেন, কিন্তু তার
বাবা এ.বি খীসাকে তাতে টেনে আনলেন কেন? তাও অত্যন্ত কদর্যভাবে। যিনি জীবন বাবুরও একজন
শিক্ষক ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিতে এতটুকুও বিবেকে বাধলো না। নীতি-চরিত্রভ্রষ্ট
হলে মানুষ এত নীচে যায়!!! এত অধঃপতন হয়!!! সৎ সঙ্গে স্বর্গে বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ
কথাটি যে কত সত্য সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। জনসংহতি সমিতির দূষিত হাওয়ায় জীবন বাবুদের
মানসিকতা রুচিবোধ সাংঘাতিকভাবে দূষিত হয়েছে সেটাই তো সবক্ষেত্রে প্রকাশ পাচ্ছে।
‘আকাশের দিকে থু থু ফেললে, তা নিজের মুখের
উপড় পড়ে’ এই শাস্ত্র বচনটি জীবন বাবুদের স্মরণে থাকা উচিত ছিল। জীবন বাবুর নিকট কাউকে
জড়িয়ে গালাগাল করে গ্রাম্য ঝগড়া বাঁধানোর নোংরা মানসিকতা-নিম্ন রুচি আমাদের নেই। রাজনৈতিক
বিষয়েই আমরা আলোচনা নিবদ্ধ রাখবো। রাজনৈতিক বিষয়ে ‘তুলো ধুনো করে দেখবো কত ধানে কত
চাল'।
একটি কথা পরিষ্কারভাবে বলা দরকার যে, জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বগোষ্ঠির মানসিকতার লেভেল অত্যন্ত নীচু মানের হবার কারণেই আন্দোলনের আজ এই দশা! কেউ দেশ-জাতির জন্য ভালো কিছু করলে জীবন বাবুরা মনে করেন তারা তাদের সুনাম কেড়ে নিতে উদ্ধত, ভাগ বসাতে চাচ্ছে...। কেউ যাতে তা করতে না পারে সেজন্য জীবন বাবুরা সবকিছুরই আগাম পরিকল্পনা নেন। জীবন বাবুর নিজের স্বীকারোক্তিতে তার প্রমাণ মেলে, “আজকাল আমাদের দেশের অবস্থা দেখে মনে হয় দেশ ও জুম জাতির প্রতিযোগিতায় নেমেছি, কাকে মেরে কে আগে জাত প্রেমিকের দায়িত্ব পালন করবে সেটারই যেন প্রতিযোগিতা চলছে।” জীবন বাবুরা সেটা মনে করেন বলেই তারা মানুষ মেরে “জাত প্রেমিকের দায়িত্ব পালন করতে” হিট লিষ্ট তৈরী করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা সব ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন সমস্ত ধরনের সৃজনশীল কাজ। সরকার তো রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও সংগঠন নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো, জনসংহতি সমিতিও সরকারের এক ধাপ এগিয়ে সমস্ত ধরনের সৃজনশীল কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়েছিলো। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে তরুণ যুব সমাজ থেকে সংগঠন আর নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারেনি। জনসংহতি সমিতির মধ্যে তো সুস্থ রাজনীতি চর্চা ছিলো না। নেতৃত্বগোষ্ঠি সারাক্ষণ ভয়ে ত্রস্থ থাকতো এই বুঝি নেতৃত্ব চলে গেল, এই বুঝি কেউ সুনাম কেড়ে নিয়ে নিলো। জনসংহতি সমিতিতে সে কারণে সৃজনশীল কার্যক্রম তেমন একটা চলেনি। ফলে তাদের কাছ থেকে পাটি লিটারেচার বলে কোন কিছু পাওয়া যায় না। নেতৃত্বের বিকাশ কিংবা গতিশীলতা কোনটাই জনসংহতি সমিতির মধ্যে যে হতে পারেনি এর কারণ হচ্ছে এটাই। সমিতির প্রাক্তন আর বর্তমান সব সদস্যরা তা এক বাক্যে স্বীকার করেন।
জীবন বাবুরা জানেও না যে, জাতির উন্নতির জন্য
উন্নত জাতিগত বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। জাপানীরা আজকে যে এত উন্নত এত অগ্রসর, তা এমনি এমনি
হয়নি। তাদের রয়েছে উন্নত গুণাবলী। নিজের দেশ-জাতির জন্য তারা আত্মবলিদানে কখনই পিছ
পা হয় না। দেশ-জাতির জন্য আত্মোৎসর্গ করতে পারলে তারা নিজেদের জীবনকে সার্থক মনে করে।
সমাজে এই মহান আত্মোৎসর্গকে সম্মান ও গৌরবের সাথে দেখা হয়। তাদের মাঝে গুণীর গুণ, বীরের
বীরত্বের কদর আছে। সে সমাজে গুণী আর বীরের জন্ম হতে বাধ্য। গণদুশমন-জাতীয় বেঈমান-দালালরা
সেখানে রীতিমতো অস্পৃশ্য, সাংঘাতিক ঘৃণ্য বস্তু। তাদের সমাজে দালাল-বেঈমানের জীবন মরণ
সমতুল্য। কাজেই সেখানে দালাল-গণদুশমন সৃষ্টি হতে পারে না, হওয়াও কঠিন। এখানে যেমন ব্যক্তি
স্বার্থ আর ক্ষমতার জন্য নির্লজ্জ হুড়োাহুড়ি আর দালালির প্রতিযোগিতা দেখা যায়, তার
বিপরীতে সেখানে দেখা যায় আত্মত্যাগ আর বীর হবার প্রতিযোগিতা। ভীরু-কাপুরুষ হওয়া মানে
সমাজের গলগ্রহ আর ধিকৃত হয়ে থাকা। সেখানে দেশ-জাতির জন্য তরুণরা হাসিমুখে জীবন দিতে
পারে। তাদের মধ্যে আত্মবলিদানের লোকের অভাব হয় না। জীবন বাবুরা যেমন নিজের কাকে মেরে
কে আগে জাত প্রেমিকের দায়িত্ব পালন করা যায় সে চিন্তায় মশগুল থাকেন, হিট লিষ্ট তৈরি
করেন, সে অনুযায়ী “জাত প্রেমিকের দায়িত্ব পালন করতে” খুন-খারাবি করেন। শারিরীকভাবে
খুন করতে না পারলে ইমেজ হত্যা করার জন্য দুর্নাম রটান, অপবাদ দেন। সে ধরনের অত্যন্ত
নীচু নোংরা মানসিকতা থেকে জাপানীরা “জাত প্রেমিকের দায়িত্ব পালন করেন না”। দেশজাতির
সেবার মহান চিন্তাধারা থেকেই তা তারা করেন। নিজেদের মধ্যে মারামারির প্রশ্ন তাদের কাছে
শুধু অবান্তর নয়, বরং রীতিমত তা অকল্পনীয়, ঘৃণ্য, নিকৃষ্ট। দেশ-জাতির প্রয়োজনে তারা
একাত্ম হয়ে যৌথভাবে আত্মোৎসর্গ করে। আত্মসমর্পণের গ্লানি থেকে বাঁচার জন্য তারা হারিকরিও
করে।
এখানে হলে তাদেরকেও নির্ঘাত অপবাদ শুনতে হতো।
তাদের বিরুদ্ধে জীবন বাবুরা সুনাম কেড়ে নেবার অভিযোগ আনতেন তাতে সন্দেহ নেই। জীবন বাবুদের
নিজেদের চরিত্রও মানসিক যেমন, তারা অন্যদেরও তাই মনে করেন এটাই হচ্ছে বড় সমস্যা। এক
চোর যেমন সারা রাত চুরি করে খুব ভোরে হাত-মুখ ধুইতে গিয়ে পুকুরে এক ধর্মপ্রাণ মৌলানাকেও
হাত-মুখ ধুইতে দেখে, চোর মৌলানাকেও নিজের মতো খারাপ লোক সারারাত চুরি করে হাত-মুখ ধুইতে
আসা চোর মনে করেছিলো। আর মৌলানাও নিজের মতো চোরকে খুব ধার্মিক ভেবেছিলো। নিজের মতো
মৌলানা মনে করেছিলো চোরও ফজরের নামাজ পড়ার জন্য পুকুরে হাত-মুখ ধুইতে গিয়েছে। আমরাও
প্রথম প্রথম নিজেদের মতো জীবন বাবুদেরও আন্দোলনকারী ভেবেছিলাম। আমরা যে কি নিয়ে বাইরে
আন্দোলন সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম, ভেবেছিলাম জনসংহতি সমিতিও বুঝি সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত
করছে। বৃহত্তর আন্দোলনের উপযোগী করে আমরা সবকিছু গুছিয়ে তুলছিলাম। কিন্তু ‘চিচিম ফাক’
হয়ে পরে আসল সত্য বেরিয়ে আসে। জনসংহতি সমিতি জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যক্তি
স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সারেন্ডারের পথ অবলম্বন করে। তাদের সাথে বৃহত্তর আন্দোলন
গড়ে তোলার লক্ষে আমরা যা কিছু করেছি সবই পানিতে পড়েছে। আফসোস হয় পথভ্রষ্ট লোকদের সাথে
আন্দোলনের নামে বৃথা শ্রম দিয়েছি বলে। তবে মনে এটিই প্রবোধ যে, অভিজ্ঞতার থলিতে জনসংহতি
সমিতির লাম্পট্য ও বেঈমানীর ঘটনাটা বড় শিক্ষা হিসেবে যুক্ত হয়েছে। জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বগোষ্ঠির
নীচু মানসিকতা, আদর্শিক বিচ্যুতি, লোভ, সুবিধাবাদীতা, লাম্পট্য আর বেঈমানীর কারণেই
আন্দোলনের আজ এই করুণ পরিণতি। এর জন্য পুরো দায়-দায়িত্ব নিতে হবে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বগোষ্ঠিকে।
উদোর পিন্ডি বুদোড় ঘাড়ে চাপাবার ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালিয়ে লাভ নেই।
জীবন বাবুদের খোলা চিঠির প্রতিটি শব্দ ও বাক্য
ধরে ধরে তাদের ভুল ধরিয়ে দেয়া যায়। তা আমাদের মতো সংগঠনের জন্য সময় শ্রমের অপচয় আর
কাগজ-কালি খরচ করে বিলাসিতা করার সামিল হবে। রাজনৈতিক মানদন্ডের বিচারে একটা নীচু মানের
লেখার পেছনে আমাদের মতো পার্টির সময় নষ্ট করার অবকাশ কোথায়? উন্নতমানের রাজনৈতিক লেখা
নিয়েই আমরা হাজার বার বিতর্ক করতে প্রস্তুত। কিন্তু যেহেতু জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বচক্রের
রাজনৈতিক মান খোলা চিঠি পর্যন্ত এবং তা ছাপা হয়েছেও তাদের সংগঠনের সংকলনে। এতে যেভাবে
ঘটনা ও তথ্যের বিকৃতি করা হয়েছে তাতে জনসংহতি সমিতির অনেক সৎ নিষ্ঠাবান সাধারণ কর্মিরা কিছুটা বিভ্রান্ত হওয়া অমুলক নয়, যারা আসলে নেতৃত্বগোষ্ঠির অনেক অপকর্মের খবর জানেন
না। তাদেরকে বিভ্রান্ত করেই নেতৃত্ব সারেন্ডার করিয়েছে। এ সমস্ত কর্মি ভাইদের জ্ঞাতার্থেই
আমরা সংক্ষেপে কিছু তথ্য তুলে ধরছি।
১. লেখক
আক্তারুজ্জামান প্রসঙ্গ: চিঠির শুরুতে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে লেখক আক্তারুজ্জামানের
কথা টানা হয়েছে। তিনি একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের একজন উঁচু মাপের লেখক।
তার বই দেশে তো বটেই, পশ্চিম বঙ্গেও সাহিত্য অনুরাগী বোদ্ধামহলে বহুল সমাদৃত, পঠিত
এবং আলোচিত। বিতর্কিত ‘পার্বত্য চুক্তি’ সম্পাদিত হবার অনেক আগেই তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সার
ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটভুক্ত
লেখক শিবিরের সহ:সভাপতি ছিলেন। গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট বিতর্কিত ‘পার্বত্য চুক্তি’
প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয় এবং এখনো পর্যন্ত চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অটল আছে।
লেখক আক্তারুজ্জামান বেঁচে থাকলে তিনি বিপ্লবী জোটের একজন হিসেবে বিতর্কিত ‘পার্বত্য
চুক্তির’ বিপক্ষে অবস্থান নিতেন সে কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তিনি যে নীতি-আদর্শের
অনুসারী তা পর্যালোচনা করলে তার ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্তই বেরিয়ে আসে। খোলা চিঠির
রচয়িতাকে (জীবন চাকমাবেশী সমিতির নেতা) তো তিনি এটা বলেও দিয়েছেন যে, ‘ব্যক্তিগতভাবে
তার (আক্তারুজ্জামানের) তাতে (পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতায়) আপত্তি নেই’। যিনি
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতায় আপত্তি তোলেন না, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ন্যায় সঙ্গত
দাবি তো তিনি চোখ বুজে সমর্থন দেবেন। তা আর বলার কি অপেক্ষা রাখে? অথচ এমন একজন উঁচু
দরের প্রয়াত লেখককে নিয়ে পর্যন্ত মস্করা করার নোংরামিপনা করছেন খোলা চিঠি রচয়িতা বাবু
জীবন চাকমা। প্রয়াত প্রখ্যাত লেখকের সাথে পাতানো সম্পর্ক (প্রিয় ইলিয়াস ভাই সম্বোধন)
দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাক মেইলিং করার কি জঘন্য কারবার শুরু করেছেন খোলা চিঠির রচয়িতা বাবু!
বাস্তবিক জীবন বাবুরা অনেক কিছু পারেন। নীতি-আদর্শের বালাই যাদের নেই, তারা পারেন না
এমন কাজ দুনিয়ায় কমই আছে। সেখানে লেখক আক্তারুজ্জামান তিনি যত বড় মাপের মানুষ আর যত
উঁচু দরের লেখকই হোন না কেন, জীবন বাবুদের কাছে তিনি তো পণ্য ছাড়া কি আর!! লাভ দেখলে
তাদের বেঁচে দেয়ার ফঁন্দি আটা। আর লাভ না দেখলে তার ছায়াও না মারানো এই তো তাদের কাজকারবার।
আক্তারুজ্জামানের মতো একজন স্বনামধন্য লেখকের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের ‘পার্বত্য চুক্তির’
ব্যবসা দিয়ে মুনাফা লুটাই হচ্ছে জীবন বাবুদের আসল লক্ষ্য। মৃত লারমাকে নিয়েও কি তারা
ব্যবসা করছে না? চুক্তি বাস্তবায়নের কূপনে তার ছবি ছাপিয়ে তো তারা চুটিয়ে ব্যবসা চালিয়ে
যাচ্ছেন। ১০ নভেম্বর এলেই তাদের ব্যবসার ভর মওসুম শুরু হয়ে যায়। মাল-পানি কামানেই যাদের
ধ্যান-জ্ঞান তাদের কাছে লেখক-শিল্পীদের সুনাম ব্যবসায়িক কাজে লাগানোর বিষয় ছাড়া আর
কিছুই না। তাদের কাছে তো “এই পৃথিবী টাকার গোলাম”। কিন্তু লেখক আক্তারুজ্জামান তো তাদের
নীতিতে বিশ্বাসী নন। তাদের ‘পার্বত্য চুক্তি’র সমর্থক কেউ ছিলেন না। সে প্রশ্ন উঠতেই
পারে না। বেঁচে থাকলে তাকেও হয়তো এতদিন চুক্তির ধোকাবাজির উপর কলম ধরতে হতো। মিছামিছি
একজন প্রয়াত প্রখ্যাত লেখককে জীবন বাবু কেন তার খোলা চিঠিতে টানলেন? কি বুঝাতে চান
এতে? তিনি রাস্তার হরি গোপাল নন, একজন কেউকেটা! আক্তারুজ্জামানের মতো লেখকের সাথে তার
সখ্যতা ছিলো সেটা জাহির করতে গিয়ে জীবন বাবু নিজের মুখোশও তো খুলে ফেলে চেহারা দেখালেন।
হায় জীবন বাবু! অতি চালাকের এজন্যই হয় গলায় দড়ি!!
২. পার্বত্য
চুক্তি ও আঞ্চলিক পরিষদ: আপনাদের নিজেদের কথাগুলো পরস্পর সাজালে কি দাঁড়ায় দেখা
যাক, ক) “তার আগে বলা দরকার আঞ্চলিক পরিষদ বা আধাআধি স্বায়ত্তশাসন আমরাও চাই না। কথিত
শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ জেএসএসও বলুক তারা এই আঞ্চলিক পরিষদ মনেপ্রাণে চেয়েছে কিনা।
সাধারণ জনগণও নিশ্চয় চায়নি। খ) ... শান্তি চুক্তি মানেন না ভালো কথা। আমরাও মানি না।
... ... কারণ শক্তি চুক্তিতে আদৌ কারোর শান্তি নেই। চার লক্ষাধিক অনুপ্রবেশকারী আর
শত সহস্র সেনাবাহিনীকে জায়গা দিয়ে কারোর শান্তিতে থাকার উপায় নেই। এ কথা জেএসএস চুক্তির
আগেও বুঝতে পেরেছে পরেও তাই। গ) আমরা (জেএসএস) তাদের (জনগণকে) কিছুই দিতে পারিনি। এই
শান্তি চুক্তিও না।”
অথচ, অবাক কান্ড! আলেকজান্ডারের ভাষায় বলতে
হয় ‘সেলুকাস’! বড় বিচিত্র কারবার!! আপনাদের দলীয় প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ণ
লারমাকে দেয়া খোলা চিঠিতে তাকে আশ্বস্ত করছেন এভাবে “... জনগণ দেখতে পাচ্ছেন তাদের
দৈনন্দিন কাজে এই চুক্তি কোন না কোনভাবে কাজে লাগছে।” (পৃষ্টা: ৪৯)
এ আবার কেমন কথা!! জীবিতদের বলছেন একটা, আর
মৃত ব্যক্তিকে শোনাচ্ছেন অন্য কথা!!! আপনারা নিজের মুখেই বার বার স্বীকার করছেন যে,
আঞ্চলিক পরিষদের মতো আধাআধি স্বায়ত্তশাসন আপনারাও চাননি। সাধারণ জনগণ তো চায়ইনি। নিজেরাই
বলছেন চুক্তি আপনারাও মানেন না। বারে বারে বলে যাচ্ছেন চুক্তিতে আদৌ কারোর শান্তি নেই।
আপনারা জনগণকে কিছুই দিতে পারেননি। চুক্তিও কিছু দিতে পারেনি।
এত সব কথা যদি চুক্তি বিরোধীদের কাছে অকপটে
স্বীকার করতে পারেন, তাহলে মৃত ব্যক্তির কাছে ভিন্ন কথা বলছেন কেন? কেন তার কাছে বিষয়গুলো
লুকাচ্ছেন? নাহ্!!! আপনারা পারেন অনেক কিছু!! মৃতকেও বাদ দিচ্ছেন না। তাকেও bluff (ধাপ্পাবাজী)
দিচ্ছেন!! “রাজনীতিতে ব্লাফ দিতে হয়” সন্তু লারমার এই তত্ত্বের কি চমৎকার
প্রয়োগ!! বাহ্ সন্তু লারমা আপনার ব্লাফ রাজনীতির তত্ত্বের কি মাহাত্ম!
জয়তু ব্লাফ রাজনীতি!! আপনাদের নিজেদের মধ্যে আপনারা ঐ ব্লাফ রাজনীতি তত্ত্ব যত খুশী
প্রয়োগ করুন, তাতে কেউই বাধা দেবে না। তবে একটা কথা, দোহাই পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের
সাথে আর ব্লাফ দেবার রাজনীতি করবেন না। আপনাদের ব্লাফ রাজনীতির শিকার হয়ে অর্ধ লক্ষাধিক
লোককে ত্রিপুরার শরনার্থী শিবিরের ভাত-পানি খেতে হয়েছে, এক দশক যাবৎ ধুকে ধুকে মরতে
হয়েছে। ধুধুক ছড়ায় আস্থা রাখুন, আস্থা রাখুন ... চিৎকার করেও শেষে ঠিকই অত্যন্ত দক্ষতার
সাথে আপনার ব্লাফ রাজনীতি ফলিয়ে আন্দোলনে ল্যাং মেরে জনগণের বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়েছেন।
সন্তু বাবু আপনার দু’হাত ধরে বলি, আপনি এ ব্লাফ রাজনীতি আর জনগণের সাথে করবেন না।
ব্যর্থ ‘পার্বত্য চুক্তির’ একটা আদুরে নাম
দিয়েছেন ‘শান্তি চুক্তি’। মূল দলিলে কি তা লেখা আছে? ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’ রেখে
কত আর আত্মরতিতে নিমগ্ন হবেন?
চুক্তির ব্যাপারে এসব কথা নিজেরা স্বীকার
করার পর আবার গোয়ার গোবিন্দের মতো বলছেন “শান্তি চুক্তি করে জেএসএস যেমন মহান কিছু
করে বসেনি তেমনি বড় কিছু খারাপও বা কী করেছে? যে আশা নিয়ে এতকাল অপরিসীম ক্ষয়ক্ষতির
মধ্যে দিয়ে আন্দোলন করে এসেছে সে অনুযায়ী জেএসএস কিছুই এনে দিতে পারেনি এই শান্তি চুক্তিতে
এ কথা হয়তো অনেকেই বলবেন”।
জীবন বাবু জেএসএস চুক্তি করে “মহান কিছু করে
বসেছে” সেটা জনগণ কখনই বলেনি। বলার তো প্রশ্নই আসে না। জনগণকে আপনারা এত বোকা ঠাহর
করেন। যারা চুক্তিতে সর্বশান্ত হলো, তারা তাকে “মহান কিছু” বলবে? তারা কি ঘাস খেয়ে
জাবর কাটছে? জনগণ নয়, আপনারাই লিখিত-অলিখিত চুক্তি করে সরকারের সাথে গলা মিলিয়ে ‘ব্যর্থ’
‘বিতর্কিত’ একটা চুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তার গালভরা নাম দিয়েছেন “শান্তিচুক্তি”,
একেই বলে “কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন”।
জাত বিকিয়ে দেয়ার চুক্তি করে গর্বে গদ গদ
হয়ে সন্তু লারমা প্রথম আলো পত্রিকায় (১৯ নভে, ‘৯৮) সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছেন, “... আমাকে,
যিনি জনসংহতি সমিতির সভাপতি, যানবাহনের সুযোগটা দিতে হবে না? যিনি এতবড় একটা শান্তি
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, সে শান্তি চুক্তি দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। সেখানে তার
জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা হবে না কেন?” সন্তু বাবুকে কানে কানে তোতলার স্টাইলে জিজ্ঞেস
করি “ক-তো-ব-ড়-অ... শান্তি চুক্তি সই করেছেন আপনি”? নিজেকে নিজে বা নিজের কাজকে নিজে
বড় ভাবলে কি সেটা বড় হয়। ছোট বেলায় রাম সুন্দর বসাকের বাল্য শিক্ষায় কি পড়েননি “আপনাকে
বড় বলে বড় সেই নয়,..” পুনরাবৃত্তি হলেও আবার বলতে হয় যে, জনগণ নয়, আপনারা নিজেরা নিজেরাই
তো চুক্তিকে “বিরাট কিছু” “মহান কিছু বানিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সরকারের বাদ্য-বাজনার তালে
নেচে লোকজনকে হাসির খোরাক যোগাচ্ছেন।
তবে হ্যা, ক্ষমতাসীন সরকার রাজনৈতিক ফায়দা
লুটার জন্য রেডিও-টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকাসহ সকল প্রচার মাধ্যমে জোর প্রচারণা চালিয়ে
চুক্তির ব্যাপারে মোহ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। নিজেদের রাজনৈতিক সমস্যা সাফল্য জাহির করতে
চুক্তিকে “ঐতিহাসিক” “যুগান্তকারী” “শান্তি চুক্তি” নানান অভিধায় বিশেষায়িত করে সুড়সুড়ি
দিয়েছে। সেটা তো তাদের উদ্দেশ্য আছে। তা করে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পুরস্কার ও ডিগ্রী
কামিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে দুর্ভাগ্য পাহাড়িদের আগের মতোই ভিটে-বাড়ী ছাড়া সর্বশান্ত
করার ভয়াবহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। এটা অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠির সুচতুর ফন্দি। নিজেদের
অপকর্মকে জায়েস করার জন্য তারা এসব করে। তাদের স্বার্থ হাসিলে জন্য তারা প্রশংসার সুড়সুড়ি
দিয়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করে ফেলে।
সেই ঈশপের নীতি গল্পের কথা কি আমাদের মনে
নেই ‘মাংস খন্ড কেড়ে নেবার জন্য শেয়াল কাকের কি প্রশংসায় না মেতে উঠেছিলো। শেয়ালের
প্রশংসার উত্তাপে গলে গিয়ে কাক গান শোনানোর চেষ্টা করতে গেলে কি পরিণতি হয়েছিলো কাকের’।
সুচতুর শাসকগোষ্ঠিও পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন সংগ্রাম ধ্বংস করে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ
হাসিলের লক্ষে আপনাদেরকে নানান বিশেষণে বিশেষায়িত করে মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয়
অতিথি ভবনে খাইয়ে-দাইয়ে আপনাদের ঘুম পাড়িয়েছে। দেখিয়েছে রঙিন স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের
ঘোরে ভুলে গিয়েছিলেন জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা, আন্দোলন সংগ্রাম আর অধিকারের কথা। আওয়ামী
রাজনৈতিক ব্যবসায়ীর ঐতিহাসিক যুগান্তকারী “শান্তি চুক্তি”,.. --- এসব চটকদার রঙ-চঙ
আর নানান রকমারী বিশেষণের মোড়কে আবৃত করে জনগণের সর্বনাশকারী চুক্তির দলিল আপনাদের
হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো। কাকের মতোই আপনারা শেয়ালের প্রশংসায় আত্মহারা বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বাহ্যিক আন্তরিকতা, আপ্যায়ন আর চাপড়ানো প্রশংসায় বিগলিত
হয়ে “নতুনত্ব দেখতে পেয়েছিলেন” আত্মঘাতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। নির্দ্বিধায় তুলে
দিয়েছিলেন অধিকার আদায়ের হাতিয়ার। পরিত্যাগ করেছিলেন আন্দোলন সংগ্রাম। তখন চুক্তি সম্পর্কে
কেউ প্রশ্ন তুললে ক্ষেপে যেতেন। চুক্তি আর শান্তি দুটোকে একাকার করে ফেলেছিলেন। কেউ
চুক্তি বিরোধিতা করলে তাকে ‘শান্তি বিনষ্টকারী’ আখ্যা দিয়ে দাঁত খিচিয়ে উঠতেন। তাদের
বিরুদ্ধে পুলিশ আর্মি লেলিয়ে দিয়ে ধ্বংস করবেন বলে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন।
বর্তমানে তো সবই ‘ফকফকা’! আপনারা নিজেই তো
বলছেন “চুক্তি কাগুজে দলিলে” পরিণত হয়েছে। [আদিবাসি সাংস্কৃতিক মেলায় সন্তু লারমার বক্তব্য:
দেখুন পূর্বকোণ, ৯ এপ্রিল, ২০০০]। চুক্তি করে প্রতারিতবোধ করছেন সেটা খোলাখুলি স্বীকার
করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করছেন। জীবন বাবু খোলা
চিঠিতে স্বীকারও করছেন যে, চুক্তি আপনারাও মানেন না।
এরপরও জীবন বাবু কেন যে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ
কথা বলেন, “চুক্তি করে জেএসএস .. বড় ক্ষতিই বা কী করেছে”। এতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, চার
লক্ষাধিক অনুপ্রবেশকারীকে বৈধতা দিয়ে আর শত সহস্র সেনাবাহিনীকে মেনে নিয়ে পার্বত্য
চট্টগ্রামের জনগণের এত বড় সর্বনাশ করার পরও আপনাদের খায়েশ মিটেনি!! পার্বত্য চট্টগ্রামের
গোটা জুম্মোদের ধ্বংস করতে পারলে তবে আপনাদের খায়েশ মিটবে! জীবন বাবু আপনাদের কথাতেই
এসব বেরিয়ে আসে।
সারারাত রামায়ন পড়ে জীবন বাবু বলছেন, ‘শতকরা
৯৯ এরও বেশি লোকের প্রচন্ড বিরোধিতার মুখেও দিব্যি টিকে গেছে সেদিনের জেলা পরিষদ। আর
আজকে কম করে হলেও ৯৯ শতাংশ মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থনে গড়ে উঠা আঞ্চলিক পরিষদ
ভেঙে দেয়া এবং জেএসএস খতম করার আন্দোলন কেরল হাস্যকরই নয়, রীতিমত বাড়াবাড়িও।’ যে আধা-আধি
স্বায়ত্তশাসন জীবন বাবুরা মানেন না, জনগণও মানে না, সে ব্যাপারে জীবন বাবু নিশ্চিতও।
তার পেছনে জীবন বাবু ৯৯ শতাংশ মানুষের সমর্থন দেখছেন! তা ভেঙে দেয়াকে হাস্যকর আর বাড়াবাড়ি
মনে করছেন! কুখ্যাত ইব্রাহিমের ’৮৯ সালের পুরানো বস্তা পঁচা যুক্তি ধার করে দিব্যি
২০০০ সালে বাজারে ছাড়ছেন। জীবন বাবু জরিপও করেছেন। জীবন বাবু সেই কুখ্যাত সরকারী সন্ত্রাসী
ইব্রাহিম পত্রিকায় তার ভুল স্বীকার করে যাচ্ছে।
যে চুক্তি আপনারা নিজেরাও মানেন না বলে এখন
স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, তা নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ি করছেন? যে চুক্তি মানেন না, তা
জনগণকে মানতে বাধ্য করাতে চান কেন? যারা মানছে না, তাদের গলা টিপে হত্যা করার, হাত-পা
ভেঙে দেয়ার মতো বর্বর নির্দেশ দিয়ে সন্তু লারমা চুক্তি বিরোধীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা
করেছেন। এ পর্যন্ত ৪৫ জন চুক্তি বিরোধী নেতা-কর্মিকে হত্যা করেছেন। জীবন বাবু এতে কি
এটাই প্রমাণিত হয় না আপনারা সরকারের ‘জুম্মো দিয়ে জুম্মো ধ্বংসের’ ভয়াবহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করে দিচ্ছেন?
জীবন বাবু নিজের কথায় প্যাচে পড়ে স্বীকারও
করছেন, ‘জেএসএস শান্তি চুক্তি করে জনগণের সাথে বেঈমানী করেছে বললেও বলুন।’ হ্যাঁ, জনগণ
সন্তু চক্রকে বেঈমানই বলছে, সবাইকে নয়। সাধারণ কর্মিরাও বেঈমানীর শিকার। এটা তারাও
বলছে। ... (সূত্র: স্বাধিকার বুলেটিন নং ১৭)
(চলবে...)
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।