মানিকছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে নানা আয়োজনে ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
হয়েছে।
অনুষ্ঠানের মধ্যে ১ম পর্বে দলীয় পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা
নিবেদন ও শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ প্রদর্শন, ২য় পর্বে আলোচনা সভা ও ৩য় পর্বে সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর ২০২৪) সকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি অংহ্লাচিং মারমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরুতে দলীয় সংগীতের মাধ্যমে চৌকস টিমের সদস্যরা ইউপিডিএফের দলীয় পতাকা উত্তোলন ও স্যালুট প্রদান করা হয়।
ইউপিডিএফের পতাকায় স্যালুট প্রদান |
ইউপিডিএফের পতাকায় স্যালুট প্রদান |
এরপর অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পূষ্পস্তবক
অর্পণ করে শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ইউপিডিএফের মানিকছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং
মারমা ও সংগঠক নিশান মারমা সংগঠক; তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে অমিত চাকমা ও অংসালা মারমা, হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, ডিওয়াইএফ’র পক্ষ থেকে অংজাই
মারমা, শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে অংক্রইমা মারমা ও এলাকাবাসী পক্ষ থেকে সাবেক মেম্বার
সুদুঅং মারমা ও মংপ্রু কার্বারি।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইউপিডিএফ ২৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা
শহীদ হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এরপর ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার ২৬ তম বার্ষিকীতে শিশুদের মাঝে বন্ধত্ব, শৃঙ্খলা , নিয়মানুবর্তিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে ইউপিডিএফ সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং মারমার অনুমতিতে
অংসালা মারমার নেতৃত্ব শিশু- কিশোরদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
কুচকাওয়াজের পর সমবেত পার্টি কর্মী ও জনগণকে আন্দোলনে অবিচল থাকার শপথ পাঠ করান ক্যহ্লাচিং মারমা ও শিশু- কিশোরদেরকে শপথনামা পাঠ করান পিসিপি’র মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অংসালা মারমা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“দালালি ও লেজুড়বৃত্তির পরিণাম আত্মধ্বংস , পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই মুক্তির পথ” এই ব্যানার
শ্লোগাানে আয়োজিত আলোচনা সভায় ইউপিডিএফ মানিকছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যলাচিং মারমার সভাপতিত্বে
ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানিকছড়ি উপজেলার সাবেক
সভাপতি অংহ্লাচিং মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফের মানিকছড়ি ইউনিটের সংগঠক নিশান
মারমা , পিসিপির মানিকছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক
অংসালা মারমা , ডিওয়াইএফ’র মানিকছড়ি
উপজেলা সভাপতি অংজাই রোয়াজা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য অমিত
চাকমা ও সাবেক মেম্বার সুদুঅং মারমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেএসএস যখন
আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করে জনগণের সাথে প্রতারণা করে তখন তৎকালীন পিসিপি, পিজিপি ও এইচডব্লিউএফ নেতৃবৃন্দ ১৯৯৮ সালের
আজকের এই দিনের মহান পার্টি ইউপিডিএফ গঠন করেন। গঠনলগ্ন থেকে ধারাবাহিকভাবে আমরা সংগ্রাম
করে যাচ্ছি, যতদিন পর্যন্ত পূর্ণস্বায়ত্তশাসন
অর্জিত হবে না ততদিন পর্যন্ত এ সংগ্রাম চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে থেকে
পার্টি ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের আন্দোলনের সাথে যুক্তি ছিল। হাসিনার পতনের দিন জনগণের
সাথে আমরাও সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু হাসিনা পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
গঠন হলেও পাহাড়ের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছরে পার্টির সাড়ে তিন শতাধিক নেতা-কর্মী, সমর্থক শহীদ
হয়েছেন। কিন্তু ইউপিডিএফকে দমিয়ে রাখা যায়নি। মানিকছড়িতে জেএসএস সন্তু বাহিনী দ্বারা
মংশে মারমা খুন হওয়ার পর এ অঞ্চলে ইউপিডিএফ
- এর আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার হয়েছে।
ইউপিডিএফ সংগঠক নিশান মারমা বলেন , পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের অজুহাতে জনগণকে পিছপা হওয়া যাবে না। প্রকৃত অর্থে জনগণের পার্টিকে চিহ্নিত করে সেই পার্টির নেতৃত্বে আন্দোলনে সামিল হতে হবে। তিনি ইউপিডিএফকে জনগণের পার্টি উল্লেখ করে প্রতিটি ঘর থেকে ইউপিডিএফের সদস্য হয়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা অংসালা মারমা বলেন, শিশু-কিশোরদেরও আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। কারণ আন্দোলন ব্যতীত আমাদের মুক্তি নেই। তিনি পার্টির লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন জোরদার করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
যুব নেতা অংজাই রোয়াজা বলেন , ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর নতুন করে ফ্যাসিবাদী কায়েম শুরু
হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। দিন দিন এই ফ্যাসিবাদী প্রবণতা জোরদার হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠির
এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং পার্টির পতাকাতলে সমবেত হয়ে আন্দোলনে
সামিল হতে হবে।
এইচডব্লিউএফ নেত্রী রিতা চাকমা বলেন , পার্বত্য
চট্টগ্রামে মা- বোনদের ধর্ষণ চলমান রয়েছে। তাই আমাদের আন্দোলন জারি রাখতে হবে। আমাদের
কল্পনা চাকমাকে ভুলে গেলে চলবে না। কারণ সেই
নব্বই দশকের পাহাড়ের নিপীড়িত জাতির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তাকে ১৯৯৬ সালে লে. ফেরদৌস
গংরা অপহরণ করে গুম করেছে। যার হদিস আমরা এখনো পাইনি। তিনি বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে ইউপিডিএফে সাথে আন্দোলনে
যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা অমিত চাকমা বলেন , ১৯৯৯ সালে মংশে মারমাকে
সন্তু লারমার জেএসএস’র দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। জনগণের স্বায়ত্তশাসন
আকাঙ্ক্ষাকে পদধুলিত করে সন্তু লারমা পার্বত্য
চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের পারিস্থিতিকে জটিল করে
তোলেন। চুক্তির ফলে অনুপ্রবেশকারী ভূমিদস্যুদের দুয়ার খুলে যায়। যার ভুক্তভোগী এখন
গোটা পাহাড়ের জনগণ।
তিনি জেএসএসের প্রতি প্রশ্ন করে বলেন,
পার্বত্যচুক্তি করে জনগণ কি পেয়েছে? পাহাড়ে ধর্ষণ, খুন
– গুম কেন হচ্ছে ? জেএসএস নিজেরা কোন আন্দোলন না করে ইউপিডিএফের আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অমিত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে ঐক্যবদ্ধ থাকলে
যে কোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। গত ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচনে
পাহাড়ের জনগণ ২৭টি ভোট কেন্দ্র শূন্য ভোট পড়ার নজির স্থাপন করেছে ঐক্যবদ্ধতার কারণে।
আগামীতেও পার্টি ও জনগণের মধ্যে আরো বেশি সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন সমাজ
থেকে আন্দোলন ও নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। তাই জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে সমাজের সবাইকে পার্টির
আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষন করতে হবে।
সুদুঅং মেম্বার বলেন , আগামী দিনের লড়াই
সংগ্রামের জন্য পার্টিতে আরো বেশি অংশগ্রহণ দরকার। কারণ পার্টির অনেক কষ্ট করে জনগণের
শান্তির জন্য ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে কাজ করছে। তিনি পার্টি না থাকলে জাতি বাচঁবে
না উল্লেখ করে পার্টিকে সুরক্ষার জন্য জনগণের
প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন প্রতিবাদী গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।