""

শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র স্মরণসভা

শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভার আয়োজন করে পিসিপি।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

আজ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল ১০টায় মিঠুন চাকমাকে হত্যার ৭ম বার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

স্মরণসভা শুরুর পূর্বে শহীদ মিঠুন চাকমার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউপিডিএফের নেতৃবৃন্দ।

সভার শুরুতেই শহীদ মিঠুন চাকমাসহ সকল বীর শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।


‍“শহীদের স্মৃতিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে বেগবান করুন” এই শ্লোগানে আয়োজিত স্মরণসভায় পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি শান্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও কুইক চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা, ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের সংগঠক প্রকাশ চাকমা এবং এলাকাবাসীর পক্ষে সোনামুনি চাকমা ও রাঙ্গাবি চাকমা।

সভায় যুবনেতা বরুণ চাকমা বলেন, শহীদ মিঠুন চাকমার অবদান পাহাড়ের মানুষ কখনো ভুলে যাবে না। তিনি উচ্চ শিক্ষিত হয়েও ভুলে যাননি যে তিনি একজন নিপীড়িত জাতির সন্তান। তাই ব্যক্তিস্বার্থের কথা ভুলে তিনি জাতির স্বার্থে আন্দোলনে যুক্ত হয়ে নিজেকে আত্মবলিদান দিয়েছেন।  

তিনি আরো বলেন, মিঠুন চাকমা তরুণ প্রজন্মের এক অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার লালিত চেতনায় তরুণ প্রজন্ম আজ আন্দোলিত। মিঠুন চাকমা সর্বদা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অধিকারহারা মানুষের কথা বলেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশ-বিদেশে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, লেখালেখি করে জনমত গড়ে তোলার কাজ করেছেন। তাই মিঠুন চাকমা নিপীড়িত জনগণের কাছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।

প্রকাশ চাকমা বলেন, মিঠুন চাকমার হত্যাকাণ্ড ছিল সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যার লক্ষ্য ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে চলমান গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা। যার কারণে হত্যাকাণ্ডের আজ ৭ বছরেও খুনি নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হয়নি।  

তিনি আরো বলেন, মিঠুন চাকমার খুনিরা ২০১৮ সালের ১৮ আগস্টও একই পরিকল্পনায় খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর ও পেরাছড়ায় তপন, এল্টন, পলাশসহ ৭ জনকে হত্যা করেছিল। সেই স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদেরও এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি।

তিনি মিঠুন চাকমার খুনিরা এখনো সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় থেকে খুন, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে উল্লেখ করে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।


পিসিপি নেতা শান্ত চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠির ষড়যন্ত্রে উদীয়মান নেতা-কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। মিঠুন, চাকমা, বিপুল-সুনীল-লিটন, তপন-এল্টন-পলাশদের হত্যা তারই উদাহরণ। এভাবেই তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নেতৃত্বশূন্য করতে চায়, যাতে ভবিষ্যতে আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হয়।   

তিনি আরো বলেন, যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগণ শাসকগোষ্ঠি দ্বারা নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে জেএসএস’র সাথে চুক্তি হলেও পাহাড়ি জনগণ নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়নি। বরং নিপীড়নের মাত্রা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখল ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে পাহাড়ি জনগণকে। তাই, এই নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য শহীদ মিঠুন চাকমাসহ সকল শহীদদের আত্মবলিদান থেকে সাহস ও শক্তি নিয়ে জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলন বেগবান করতে হবে।

সোনামনি চাকমা বলেন, সমাজ পরিবর্তন ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মিঠুন চাকমা নিজের স্বার্থকে উপেক্ষা করে সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে চাকুরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা বেছে না নিয়ে অধিকারহারা পাহাড়ি জাতিসত্তার মুক্তির জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন।

রাঙ্গাবি চাকমা বলেন, আমরা সকলে জানি মিঠুন চাকমা একজন সমাজ দরদী ও জনগণের বন্ধু ছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ মেনে চলতেন এবং ছাত্র- যুব সমাজকে সংগঠনে যুক্ত হতে উৎসাহিত ও সংগঠিত করতেন। তিনি সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে ছিলেন এবং জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজকে সংগঠিত করে আন্দোলন করে গেছেন। মিঠুন চাকমা জনগণের কাছে অমর হয়ে থাকবেন।

উল্লেখ্য, মিঠুন চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে ইউপিডিএফে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি আদালত থেকে মামলার হাজিরা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির প্রবেশ গেট থেকে সেনাসৃষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে মিঠুন চাকমাকে তুলে নিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments