""

বান্দরবানে খিয়াং জাতিসত্তার নারীকে ধর্ষনের পর হত্যার প্রতিবাদে চবিতে মশাল মিছিল


চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ৭ মে ২০২৫

বান্দরবানের থানচিতে খিয়াং জাতিসত্তার এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং সারা দেশে নারী হেনস্তা, ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ।

মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মশাল মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি কাটা পাহাড় সড়ক হয়ে শহীদ মিনার ঘুরে জিরো পয়েন্টে শেষ হয় এবং সেখানে সমাবেশ হয়।

সমাবেশ ইংরেজি বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আহমেদ মুগ্ধ’র সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিবেক চাকমা, ইয়াসিন আরাফাত, সিংয়ইপ্রু মারমা, ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের চৈহ্লাপ্রু খিয়াং, ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রোনাল চাকমা। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সুমাইয়া সিকদার।

রিবেক চাকমা বলেন, বান্দরবানে এক খিয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।  দীর্ঘদিন পাহাড়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে চিংমা খেয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার বিচার করতে হবে।

সিংয়ইপ্রু মারমা বলেন, গত কিছু দিন আগেও বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে। উক্ত ঘটনাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক চাপ এবং টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম চাষে নারীরা অংশগ্রহণ করে নিরাপদ বোধ করত৷ বর্তমানে পাহাড় অনিরাপদ হয়েছে, কারোর কোন নিশ্চয়তা নেই, আমিও নিরাপদ নই। পাহাড়িদের বিচ্ছিনতাবাদী-সন্ত্রাসী তকমা দেয়া হচ্ছে।

চৈহ্লাপ্রু খিয়াং বলেন, ধর্ষণের মতন পাশবিক ও নিষ্ঠুর ঘটনায় ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীরা অবহেলিত ও অনিরাপদ, নারীরা সেখানে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে। এই ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে অপরাধীরা ভয় পায় । আমাদের খিয়াং নারীর আর্তনাদ হারিয়ে না যায়, যাতে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত হয়।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রিতা চাকমা বলেন, পাহাড়ে নারী ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড়ে বহিরাগত কর্তৃক পাহাড়ি নারীরা নিরাপদ নয়। এর আগেও কৃত্তিকা ত্রিপুরা-সবিতা চাকমাসহ বহু ধর্ষণের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার না হওয়ায় বার বার এসব ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ে ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টের উপর গোপন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবিলম্বে চিংমা খেয়াং ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।


রোনাল চাকমা বলেন, তনু থেকে কল্পনা, লামিয়া থেকে চিংমা কেবল দীর্ঘশ্বাস। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা আশা করেছিলাম সমতল থেকে পাহাড়ে নারীসহ সবার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে থাকতে হয় যে, কখন আমার বোন ধর্ষণের শিকার হয়, কখন আমাদের ভূমি বেদখল হয়, কখন আমাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে তা নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা ছিল অগ্রণী। কিন্তু তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে পিছনে রাখা হচ্ছে। এখন সারা দেশে নারী হেনস্তা, নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে। পাহাড়-সমতলে সকল প্রগতিশীল ব্যাক্তি ও সংগঠনকে নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতি সুমাইয়া শিকদার বলেন, ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়গুলোতে নারী নিপীড়ন, ধর্ষন, অবমাননা এবং মোরাল পুলিশিং করার জন্য মব উস্কে দিয়ে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনায় সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এর মধ্যে একটি গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাদের সাথে সরকারের মদদ ছিল।

তিনি বলেন, নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হত না। ১৬ জুলাই তা থেমে যেত। এটা আপনারা মনে রাখবেন। বিজয়ের পরবর্তীতে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন জাতিগত নিপীড়ন চালায়, লৈঙ্গিক বৈষম্যর মাধ্যমে নিপীড়ন চালায় এবং নতুনভাবে ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করতে চায়। আমরা তাদের সতর্ক ও হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। হাসিনা খিড়কি দিয়ে পালিয়েছে পরবর্তী সময়ে কোন নিপীড়নকারীকে দেশ থেকে আমরা পালাতে দেব না।

তিনি আরো বলেন, খিয়াং জাতিসত্তা সংখ্যাই খুবই কম। ধর্ষণের এত ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পাহাড়ে বছরের পর বছর ধরে নারী নিপীড়ন চলছে। ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়ন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে একের পর এক হত্যা, ধর্ষণ ও  নিপীড়নের ঘটনা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে৷ দেশে একটি সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য এবং সকল নাগরিকের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। অবিলম্বে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে৷



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







Post a Comment