![]() |
শান্তিবাহিনীর ছবি। সংগৃহিত |
ইতিহাস ডেস্ক, সিএইচটি নিউজ
শনিবার,
১৪ জুন ২০২৫
আজ ‘১৪ জুন’ পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক
কলঙ্কিত দিন! ১৯৮৩ সালের এ দিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির লারমাগ্রুপ (লাম্বা)
প্রীতিগ্রুপ (বাদি)-এর বিশেষ সেক্টর সদর দপ্তরে হামলা করে। এ হামলায় প্রীতিগ্রুপের
‘বলী ওস্তাদ’ নামে খ্যাত অবিভক্ত শান্তিবাহিনীর অভিজ্ঞ সামরিক প্রশিক্ষক অমৃত লাল চাকমা,
রাজনৈতিক সচিব শরজিৎ চাকমা আর এক সৈনিক
প্রাণ হারান। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সূত্রপাত ঘটে এক রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃঘাতি
সশস্ত্র সংঘাতের। যার পরিণতি ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর প্রীতিগ্রুপের পাল্টা হামলায় জনসংহতি
সমিতির সদর দপ্তর আক্রান্ত হয় এবং এতে খোদ দলটির প্রধান মানবেন্দ্র নারায়ন লারমাসহ
৮ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারান।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লাম্বা গ্রুপ কর্তৃক বলি ওস্তাদকে হত্যার পরেই
বাদি গ্রুপ এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে ওঠে এবং এ ঘটনার ৫ মাসের মাথায় কমাণ্ডো
টিম গিয়ে লাম্বা গ্রুপের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে এমএন লারমাকে হত্যা করে। এটা নিঃসন্দেহে
বলা যায়, লারমা গ্রুপ (লাম্বা) যদি বিশেষ সেক্টরে আক্রমণ না করতো তাহলে বাদি গ্রুপ
প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মরিয়া হতো না, আর এমএন লারমারও প্রাণ হারাতে হতো না। বলি ওস্তাদের
খুন পাল্টা খুনেরই জন্ম দিয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে, আজ অবধি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জারি রয়েছে। এতে কুসুমপ্রিয়-প্রদীপ লাল, রূপক চাকমা, দেবোত্তম চাকমা, মংশে মারমা, অনিমেষ চাকমা, মিঠুন চাকমা, জীবন ত্রিপুরা, তপন চাকমা, বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, মিটন চাকমাসহ অসংখ্য সম্ভাবনাময় নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এ প্রাণহানির ঘটনা এখনো অব্যাহত রয়েছে!
পার্বত্য চট্টগ্রামে লাম্বা-বাদি গ্রুপ সৃষ্টির মূল কারণ চিহ্নিত করে আজ
অবধি শিক্ষামূলক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়নি। জনসংহতি সমিতি উক্ত ঘটনা পর্যালোচনা করে শিক্ষা
গ্রহণ করেছে বলে মনে হয় না। সে কারণে ‘পার্বত্য চুক্তি’ ও আত্মসমর্পণের পর জনসংহতিতে
আবারও ভাঙ্গন ধরে। জনসংহতি সমিতি ‘সন্তু গ্রুপ’ ও ‘লারমা গ্রুপ’ নামে দু’টি দলে বিভক্ত
হয়। আবারও উভয় দলের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বেঁধে যায়। বার বার একই গর্তে পা দিয়ে জনসংহতি
সমিতি সংগঠন হিসেবে বিধ্বস্ত ও দুর্বল হচ্ছে এবং গোটা জাতির ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে
ঠেলে দিচ্ছে! রাজনৈতিক মতপার্থক্য রাজনৈতিকভাবে নিরসন না করে, খুনের মাধ্যমে নিজ গোষ্ঠীগত
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ধ্বংসাত্মক নীতির কারণে জনসংহতি সমিতিতে এভাবে বারে বারে ভাঙ্গন
দেখা দেয়, পুনরাবৃত্তি ঘটে রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের, তাতে লাভবান হয় কেবল শাসকগোষ্ঠীই।
এ আত্মঘাতি ভ্রান্ত খুনের রাজনীতির দুষ্টচক্র থেকে বেরুতে না পারলে জনসংহতি সমিতি
‘পার্বত্য চুক্তি’ বাস্তবায়ন দূরের কথা, জাতীয় স্বার্থে কোন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে
সক্ষম হবে না। সংগঠন হিসেবে জনসংহতি সমিতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও দায় হবে।
* লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।