""

সাজেকে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল, খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি


বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

“পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার প্রধান হুমকি সেনা-সেটলার প্রত্যাহার কর” শ্লোগানে খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে’ দ্রুত বিচার দাবিতে বাঘাইছড়ির সাজেকে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল এবং সমাবেশ করেছে তিন সংগঠন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই ২০২৫) সকাল ১০টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখাসমূহ যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

সাজেক পর্যটন সড়কের লাদুমনি বাজারের দ্বপদা হতে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের অংশগ্রহণে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি পর্যটন সড়ক হয়ে সাজেকের উজোবাজারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন এবং বিচারের দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেন।

এতে বঙ্গলতলী, বাঘাইহাট ও মাচলং এলাকার শিক্ষার্থী, যুবক-যুবতিসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক অংশগ্রহন করেন।

সমাবেশ শুরুতে একদল সেনা সদস্য গাড়িযোগে সেখানে উপস্থিত হয়ে রাস্তা দিয়ে তাদের গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাতে আপত্তি জানান। পরে তারা সেখান থেকে ফিরে যান।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চাকমা।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পরানী চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি জ্যোতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক অনুপম চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি সুখী চাকমা ও ছাত্র জনতা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাবু ধন চাকমা।

সমাবেশে ছাত্রনেতা জ্যোতি চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির ত্রিপুরা স্কুলছাত্রীকে ৬ জন সেটলার বাঙালি কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, পাহাড়ে সেনা শাসন এবং সেটলার বাঙালিরা থাকলে পাহাড়িরা নারী ধর্ষণের শিকার হতে থাকবে। তাই পাহাড় থেকে নারী নিরাপত্তার প্রধান হুমকি সেনা-সেটলারদের প্রত্যাহার করতে হবে।

ঢাকা মাইলস্টোনে স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান বিধধ্বস্তের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে এভাবে দুর্ঘটনার নামে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।

তিনি অবিলম্বে খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতারপূর্বক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

যুবনেতা অনুপম চাকমা বলেন, পাহাড়ের মানুষ ভেবেছিল জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে পাহাড়ে কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। বিএনপি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেভাবে ধর্ষণ, হত্যা, দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও তা ঘটছে। তাহলে ফ্যাসিস্টদের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পার্থক্য কোথায়?

তিনি অবিলম্বে ভাইবোনছড়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি সুখী চাকমা বলেন, এই পাহাড়ে নারীদের নিরাপত্তা নেই। খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির ত্রিপুরা স্কুলছাত্রীকে যেভাবে ৬ জন সেটলার বাঙালি ধর্ষণ করেছে তার চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কী হতে পারে? পাহাড়ে যদি সেনাশাসন ও সেটলার বাঙালি না থাকতে তাহলে আমাদের মা-বোন ধর্ষণের শিকার হতো না।

তিনি বলেন, ভাইবোনছড়া ধর্ষণ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে লোকদেখানা গ্রেফতার করলেও বাকী ২ জনকে এখনো গ্রেফতার করেনি। অবিলম্বে পলাতক দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জেএসএসের যে পার্বত্য চুক্তি করেছে সেই চুক্তি দিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। পাহাড়ে এখনো সেনা শাসন জারি রেখে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে।

বাবুধন চাকমা বলেন, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের ফলে সেটলারদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। এই সেটলারদের দ্বারা বার বার পাহাড়ি নারী, শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের ন্যায় ধর্ষকদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করছে না।

তিনি খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া এলাকায় ৮ম শ্রেণী ত্রিপুরা ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, অতীতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ আমলেও যেভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলেও একই ঘটনা ঘটছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

কোনো সরকার পাহাড়ে শান্তি এবং নিরাপত্তা দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙাামটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছি। জুনান, রুবেল, অনিক ও ধন রঞ্জন চাকমাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা প্রায় এক বছরে হতে চললেও এখনো কোন বিচার আমরা পাইনি।

তিনি সাজেকে কলেজ নির্মাণে সেনাবাহিনী বাধা দিয়ে সাজেকবাসী ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি অবিলম্বে স্কুলছাত্রী ধর্ষকদের সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার জোর দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ত্রিপুরা ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীতে সংঘটিত ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনার বিচার না হওয়ায় ধর্ষকরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত করার সাহস পাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীই পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষকদের রক্ষা ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। এখানে সেটলার বাঙালি দ্বারা কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনী বরাবর ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে থাকে। আমরা এর দৃষ্টান্ত এবারও দেখেছি ভাইবোনছড়ায়। সেখানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখন শিক্ষার্থী-জনতা বিক্ষোভে নামে তখনই সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, লাঠিচার্জ করে অনেককে আহত করেছে।

তিনি বিলম্ব না করে অতি দ্রুত ভাইবোনছড়ায় ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতারপূর্বক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments