""

খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষকদের দ্রুত সাজার দাবিতে কুদুকছড়িতে শিক্ষার্থীদের লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল

‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চ’ ঘোষণা



রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

খাগড়াছড়ির ভেইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির ত্রিপুরা ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দ্রুত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাজা প্রদানের দাবিতে রাঙাামটির কুদুকছড়িতে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই ২০২৫), সকাল ১১টায় ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মাঠ কাঁপানো শ্লোগানের মধ্য দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কুদুকছড়ি নির্বাণপুর বন বিহারের ফটক থেকে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল শুরু করেন। তারা মিছিল নিয়ে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক হয়ে কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে বড় মহাপূরম উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইটে এসে সমাবেশে মিলিত হন। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা “যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চ” নামে একটি প্লাটফর্ম ঘোষণা করেন। ১১ সদস্য বিশিষ্ট এ মঞ্চে একি চাকমাকে আহবায়ক ও মৈত্রী চাকমাকে সদস্য সচিব হিসেবে ঘোষণা করা হয়।  

গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়ে তারা যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চের সাথে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

“পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার প্রধান হুমকি সেনা-সেটলার প্রত্যাহার কর” ব্যানার শ্লোগানে মিছিল পরবর্তী বৃষ্টির মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্রী একি চাকমার সভাপতিত্বে ও সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রী মৈত্রী চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, দশম শ্রেণীর ছাত্র কেতু চাকমা ও সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রী ইতি চাকমা।

ইতি চাকমা বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আজকে আমাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর কথা ছিল। কিন্তু তা না করে আজকে সহপাঠী ধর্ষণের প্রতিবাদে আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছে।

নিরাপত্তার নাম দিয়ে শত শত সেনা ক্যাম্প  থাকলেও আমার সহপাঠী পশুদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি।  এই রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে প্রশ্ন করতে চাই, আর কত পাহাড়ি নারী ধর্ষিত হলে রাষ্ট্র তুমি থামবে?  আর কত পাহাড়ি নারী ধর্ষিত হলে রাষ্ট্র তুমি দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিবে? রাষ্ট্র তোমার জবাব চাই।

দাগি অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্টিং দেওয়া হয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, গতকাল  একটি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অপরাধে শাস্তি হিসেবে মানিকগঞ্জ থেকে বান্দরবানে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন পানিশমেন্ট জোন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জবাব চাই? রাষ্ট্র পারবে কি জবাব দিতে? এইসব ঘটনায় প্রমাণ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্র পাহাড়িদের বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,  জনগণের করের টাকায় বেতন নিয়ে ধর্ষকদের পাহারাদার হবেন না, জনগণের পাহারাদার হয়ে আপনাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।


কেতু চাকমা বলেন, গত ২৭ জুন খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়াই ৬জন সেটলার বাঙালি কর্তৃক ১৪বছরের একজন  ত্রিপুরা স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনা পাহাড়ে নতুন কিছু নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার কারণে এরকম জঘন্য ঘটনা অহরহ দেখা যায়। আমরা  যদি দেখি ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক মারমা কিশোরী ও এবং এ বছর ১৮ এপ্রিল কাউখালীতে এক মারমা নারী ধর্ষণ করা হয়। সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা না থাকার কারণে অপরাধীরা বার বার রেহাই পাচ্ছে।  পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলার বাঙালিরা ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের  মত জঘন্য কাজ করতে  উৎসাহ পাচ্ছে।আজকের এই লাঠি ও ঝাড়ু মিছিলের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে বলতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নারী ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার করুন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশনের জুম্ম জনগণকে হয়রানি বন্ধ করুন।

সভাপতির বক্তব্যে একি চাকমা বলেন, ধর্ষণ নামক শব্দটি আমাদের পাহাড়িদের শব্দ ভান্ডারে কখনো ছিল না। কিন্তু সমতল থেকে  রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেটলারদের পুনর্বাসন করার পর থেকেই  প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ি নারীরা বর্তমানে নিজ বাড়িতে, রাস্তা-ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোথাও নিরাপদ নয়।

গত কয়েক মাস আগে চিংমা খিয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। চিংমা খিয়াং এর ধর্ষকদের ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত কোন ধর্ষণের বিচার হয়নি। বরং ধর্ষণের পজিটিভ রিপোর্ট না দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ মহল থেকে গোপন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।এই বিচারহীনতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমার বোন এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এখনো দুইজন ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন।  কিন্তু সন্ত্রাসী দমনের নামে নিরীহ পাহাড়িদের সন্ত্রাসী সাজিয়ে গ্রেফতার করা যেন ডাল ভাতের মত।

তিনি বলেন, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করে করে আপনাদের বীরত্ব জাহির করুন,  নিরীহ পাহাড়িদের ধরে ‘ সন্ত্রাসী’ নাটক মঞ্চস্থ করে নয়।

তিনি ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ির ভেইবোনছড়ায় আয়োজিত প্রতিবাদী সমাবেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং বলেন, বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ধর্ষকদের বাঁচানোর জন্য আর কোন নাটক পাহাড়ি ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, পাহাড়ে যারা নিজের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার জন্য বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সেই জুম্ম দালালদের পাহাড়ের ছাত্র সমাজ বয়কট করবে। সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে জন্য সকল প্রতিবাদী ছাত্র সমাজকে আহবান জানাচ্ছি।

সমাবেশ থেকে তিনি “যৌন নিপীড়ন বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী মঞ্চ’ গঠনের ঘোষণা দেন।

বক্তারা অবিলম্বে সকল ধর্ষককে গ্রেফতার করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দ্রুত সাজা প্রদান ও পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার প্রধান হুমকি সেনা-সেটলার প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানান।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments