ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
প্রশ্রয় না দিয়ে দেশে বিদ্বেষ-সহিংসতার বিস্তার, মব সন্ত্রাস, ধর্ষণ-খুনের
দঙ্গল থামানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
শনিবার (১২ জুলাই ২০২৫) গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা স্বাক্ষরিত
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সহিংসতার একটি নতুন অবয়ব স্পষ্ট হয়ে
উঠছে, দেখা দিচ্ছে সংগঠিত ‘দঙ্গলতন্ত্র’। তবে এই দঙ্গল এখন আর কেবল ধর্মীয় উগ্রতায়
সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক বিরোধ, স্থানীয় আধিপত্য এবং এমনকি ব্যক্তিগত
শত্রুতার মাটিতেও। যে ‘সংঘবদ্ধ বিদ্বেষ’ এক সময় “ধর্ম অবমাননার” গুজবের ওপর ভর করে
মানুষের জীবন কেড়ে নিত, এখন সেই একই কৌশলে সংগঠিত মব ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
কিংবা ভিন্নমতের মানুষকে দমন করতে। কারও কথা অপছন্দ হলেই এখন দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে “নাস্তিক”, “শাতিম”, “বেইমান” তারপর তাকে ঘিরে ধরে দাঙ্গার মঞ্চ সাজানো হচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, আজকের বাংলাদেশে এ ধরনের সহিংসতা নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,
বরং একটি গভীরতর সামাজিক ও রাজনৈতিক বিদ্বেষ-অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ। কখনো মসজিদের ভেতর
খতিবকে কুপিয়ে ফেলা হচ্ছে, কখনো ব্যবসায়িকে পিটিয়ে মারা যাচ্ছে, আবার কখনো মানুষের
কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘শাতিম’ তকমা লাগিয়ে। ঘটনা ভিন্ন, কিন্তু কৌশল এক: তকমা দাও,
লোক 'জড়ো'করো, তারপর “শাস্তি” দাও। আর রাষ্ট্র?
"রাষ্ট্র কখনো নিষ্ক্রিয়, কখনো উদাসীন, আবার কখনো অপরাধীদের নীরব প্রশ্রয়দাতা। ২৪ এর গণ-অভ্যুন্থানের পরেও এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। "
চাঁদপুরের একটি মসজিদে ইমাম নূর রহমান মাদানীর ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা হয়েছে।
কারণ তিনি নাকি নবী (সা.)-কে “অপমান” করেছেন। কে অপমান নির্ধারণ করেছে? কোন আদালতে?
কোন আইনে? কেউ জানে না। হামলাকারী নিজেই বিচারক, নিজেই জল্লাদ। আর রাষ্ট্র? হামলার
পর হাসপাতালে ভর্তি করানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।
পুরান ঢাকায় সোহাগ নামের একজন ভাঙারির দোকানদারকে রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলা
হয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল কর্মীরা তাকে প্রকাশ্য নৃশংসভাবে খুন করেছে। খুলনার দৌলতপুরে সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে উল্লেখ করে
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমরা মনে করি, এটি কেবল আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা নয় – বরং
একটি সংগঠিত সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে ধর্ম, গুজব ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব একত্রে
সমাজকে আতঙ্ক, দমন ও নিষ্পেষণের পথে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার এগুলো দমনে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা
নিচ্ছে না বরং সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রভাবশালীর ব্যক্তির কথায় এগুলো প্রশ্রয় পাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কথায় ও কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এসমস্ত ঘটনার
দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।”
এই সহিংসতার ইতিহাস নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়, এক দশক ধরে একের
পর এক ব্লগার, লেখক, একটিভিস্টকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের তকমা ছিল - “নাস্তিক”, “শাতিম”,
“ধর্ম অবমাননাকারী”। যারা এসব তকমা দিয়েছে, তারা কখনো রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগী, কখনো
ধর্মান্ধ, কখনো নিছক হিংস্র। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রশাসনের ভূমিকায় খুব বেশি পার্থক্য ছিল
না - চুপ থাকা, তদন্ত না করা, বিচার না করা। এমনকি প্রতিবাদী গ্রাফিতি যেখানে একসঙ্গে
অনেক নিহত ব্লগারের মুখাবয়ব আঁকা হয়েছিল – তাও রক্ষা পায়নি। মুছে ফেলা হয়েছে। এটি একটি
দেয়ালচিত্র নয়, এটি একটি প্রতিরোধের চিহ্ন। যারা খুন হয়েছে তারা এই দঙ্গলতন্ত্রের সংগঠিত
শিকার। আর যারা এসব হত্যাকে “বুঝতে চায়নি”, “চুপ করে গেছে”, অথবা “সাময়িক কৌশল” বলে
পাশ কাটিয়েছে – তারা ইতিহাসে অপরাধের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেই থেকে যাবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, এই বিদ্বেষ-সহিংসতার
বিস্তার, মব সন্ত্রাস, দঙ্গলতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনই সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।
ধর্মীয় গুজব, রাজনৈতিক শত্রুতা কিংবা ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে একজন নাগরিককেও
যেন আর আক্রমণ করা না হয়, যেন বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা না হয় - তা নিশ্চিত করার
দায় সরকার ও রাষ্ট্রের। ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক মর্যাদার পক্ষে
আমরা সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানাই।’
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।