""

সাজেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি আগ্রাসন দিবস পালিত


সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫

রাঙামাটির সাজেকে গত ২০ আগস্ট ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি আগ্রাসন দিবস পালিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচির ব্যানার শ্লোগান ছিল “১৯৪৭-এ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি অবিচার ও বেলুচ রজিমেন্ট-এর আগ্রাসনের পরিণামে পাহাড়িদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, সমাজ-জাতি রক্ষার্থে ছাত্র-যুবসমাজ আগুয়ান হও।”

২০ আগস্ট সকাল ৮.০০ জাতীয় বীর রুণু খা'র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্প প্রদান, এযাবতকালে জাতি-সমাজ রক্ষার্থে যারা আত্মবলিদান দিয়েছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণপূর্বক ১ মিনিট নীরবতা পালন ও শপথ গ্রহণ করা হয়।

স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্প প্রদানের পূর্বে ২০ আগস্টের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন ইউপিডিএফ সংগঠক বিধান চাকমা।

তিনি বলেন, এই আগস্ট মাস কারোর আনন্দ, বিজয়োৎসব আর কারোর কন্না-বেদনা, দুঃখের অমানিশা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহড়িদের জন্য আজকের দিন একটি অভিশপ্ত দিন। আজ থেকে ৭৮ বছর আগে ১৯৪৭ সালের এই দিনে পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র আগ্রাসন চালায়। সেদিন বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষি স্নেহ কুমার চাকমা নেতৃত্বে উত্তোলিত ভারতীয় পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করে। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের শাসনাধীন করে পাহাড়ি জনগণকে নিপীড়নের মুখে ঠেলে দেয়া হয়।   

তিনি জাতীয় মুক্তির চেতনা জাগ্রতকারী স্নেহ কুমার চাকমার অবদান যুগে যুগে স্মারণ করার আহ্বান জানান।

এরপর সকাল ১০.৪৫ টায় আলোচনা সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বী বিমল বিহারী চাকমা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন  ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক উত্তম চাকমা, এলাকার মুরুব্বী সত্যজিৎ চাকমা ও প্রিসিয়াস চাকমা, পিসিপি’র বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক সমর চাকমা।

সভায় বিমল বিহারী চাকমা বলেন, স্নেহ কুমারের কথা শুনেছি। তিনি দেশ পাকিস্তান বিরোধী ছিলেন। ইউপিডিএফ শিক্ষা, উৎপাদন বিষয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। ছাত্র-যুব সমাজকে আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বিশিষ্ট মুরুব্বী সত্যজিৎ চাকমা বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে নিজেদের মধ্যে সংঘাত চলছে। ঐক্য না হলে সফল হওয়া কঠিন হবে বলে মনে করি। ঐক্য না হওয়ায় খুবই দুঃখজনক!

ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস স্মরণাতীত কাল থেকে শোষণ-নিপীড়নের ইতিহাস, রাজনৈতিক প্রতারণা ও প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রের ইতিহাস।

আমাদের জাতীয় বীর শের দৌলত খাঁ, রুণু খাঁদের গৌরব গাঁথার ইতিহাস জানা একান্ত জরুরী। আমরা মোঘল, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা, আত্মগরিমা অক্ষুন্ন রাখতে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের অনেক বীর পুরুষ রয়েছেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা মোঘল-ব্রিটিশ বিরুদ্ধে তীব্র প্রতরোধ লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও তাঁদের বীরত্বপূর্ণ অবদান, গৌরব গাঁথা সম্পর্কে ছাত্র-যুব সমাজ জানে না। মোঘলরা আমাদেরকে পরাজিত করতে পারেনি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষরা বীরদর্পে লড়াই করেছিলেন। এই বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস, গৌরবগাঁথা থেকে আমরা অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের অনুপ্রেরণা পাই।

তিনি বলেন, যুগের পর যুগ পাহাড়িরা অন্যায়ের শিকার হয়ে আসছে। সবসময় আগ্রাসনের শিকার হয়ে আসছে। এই অবমাননা থেকে মুক্তির জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাই সমস্ত পরাধীনতার তত্ত্ব, নিয়তিবাদ পরিত্যাগ করে আত্মবিশ্বাসের শক্তি বাড়িয়ে বিজয়ের আকাঙ্ক্ষার প্রতি গভীর মনোযোগী হতে হবে।

তিনি জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সামিল হতে ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

বিধান চাকমা বলেন, জেএসএস দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন করলেও জনগণকে এ ধরনের রাজনৈতিক শিক্ষা দিতে পারেনি। পার্বত্য চুক্তির ফলে গঠিত আঞ্চলিক পরিষদের বরাদ্দ জনগণের কোন উপকারে তো আসছেই না, বরং সমাজ-জাতির চরম ক্ষতি হচ্ছে। সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদের টাকায় ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে জুম্মো জাতি-সমাজের অস্তিত্বের চরম হুমকিতে পরিণত হয়েছেন।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments