""

ত্রিপুরায় বিক্ষোভ: জাত-বিরোধী সন্তু গ্রুপের কোথাও জায়গা হবে না

‘অমরপুর মহকুমা সচেতন নাগরিক সমাজ’ এর উদ্যোগে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। ১২ আগস্ট ২০২৫ 

গতকাল (১২ আগস্ট) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অমরপুর মহকুমায় জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে হয়েছে। ‘অমরপুর মহকুমা সচেতন নাগরিক সমাজ’ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। এতে ১,০০০ জন নারী পুরুষ অংশ নিয়ে সন্তু গ্রুপকে ত্রিপুরা থেকে উৎখাত করার দাবি জানায়। তাদের একটি প্রতিনিধি দল সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহার কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ সন্তু গ্রুপের লোকজন ত্রিপুরায় বিদেশী অনুপ্রবেশকারী হয়েও তাদের ওপর খবরদারি করে, চাঁদা দাবি করে এবং অবৈধ মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারের সাথে জড়িত থেকে ত্রিপুরার সমাজকে কলুষিত করছে।

গতকালের জেএসএস-বিরোধী বিক্ষোভটি প্রথম নয়। তার আগে গত ৩০ জুলাই অমরপুর মহকুমার নতুন বাজারে ভারত থেকে সন্তু গ্রুপের সদস্যদের বিতাড়নের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল। এ সময়ও স্থানীয় জনগণ জেএসএস সন্তু গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়েছিলেন। ভারতের ত্রিপুরায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে জেএসএস সন্তু গ্রুপ বিরোধী ক্ষোভ দ্রুত দানা বাঁধছে – এই বিক্ষোভ দুটি তার প্রমাণ।

সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১২ আগস্ট ২০২৫

আসলে গত কয়েক মাস আগে ত্রিপুরাবাসী জেএসএস সন্তু গ্রুপের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে পোস্টার সাঁটা হয়। এমনকি সচেতন জনজাতির নামে চার পৃষ্ঠা ব্যাপী একটি লিফলেটও প্রচার করা হয়, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর স্বার্থে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত জিইয়ে রাখার জন্য জেএসএস সন্তু গ্রুপকে দায়ি করা হয়। গতকালের বিক্ষোভে অভিযোগ করা হয় যে, জেএসএস সন্তু গ্রুপের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, অপহরণ করার পর ত্রিপুরায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সদস্যরা ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যকে ব্যবহার করে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একদিকে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর সাহায্য পেয়ে থাকে, অন্যদিকে ভারতের মাটিও ব্যবহার করে। বিশেষত গণ প্রতিরোধের মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামে টিকতে না পারলে তারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তারপর অস্ত্র-গোলাবারুদ জোগাড় করে ও সামরিক ট্রেনিং দেয়ার পর আবার পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকে স্বজাতির ভাইকে খুন করতে থাকে।

ভারতে আশ্রয় নিয়ে তারা সেখানকার জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে ভারতের জনগণের কাছেও তাদের আসল রূপ ধরা পড়ছে। সে কারণে ত্রিপুরার জনগণ তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন।

বর্তমানে দেশে বিদেশে সব জায়গায় জেএসএস সন্তু গ্রুপের পা থেকে মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। অনেক আগেই নিজ দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে শেষ হয়েছে, এখানে তাদের আর কোন জনসমর্থন অবশিষ্ট নেই। তাদের দালালির নোংরা চেহারা সবার কাছে পরিষ্কার। জুম্ম সমাজে তারা নিন্দিত, ধিকৃত ও অপাংক্তেয়। একমাত্র সরকার ও সেনাবাহিনীর সমর্থনে তারা কিছু কিছু জায়গায় টিকে আছে। কয়েকদিন পর সেটাও থাকবে না।

শুধু দেশে নয়, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিদেশে প্রবাসী জুম্মরাও জেএসএস সন্তু গ্রুপের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নীতির ঘোরতর বিরোধী। এমনকি প্রবাসী জুম্মদের মধ্যে যারা তাদের এক সময় সমর্থন করতেন, তারাও ইদানিং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ত্রিপুরা থেকেও তারা উৎখাত হওয়ার পথে। আর এটা হবে তাদের জন্য একটা মস্ত বড় আঘাত। যারা নিজ জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তারা কোথাও আদর পায় না, কোথাও তাদের স্থান হয় না। জেএসএস সন্তু গ্রুপের পরিণতি অত্যন্ত করুণ হতে চলেছে। (সমাপ্ত)


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments