আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় সেনাবাহিনী এবং সেটলার বাঙালি
কর্তৃক সহিংসতা ও তিন জন জুম্মকে হত্যার প্রতিবাদে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ
করেছে কোরিয়াস্থ জুম্মদের সংগঠন ‘জুম্মপিপল্স নেটওয়ার্ক কোরিয়া(JPNK)' ।
আজ ৪ অক্টোবর ২০২৫ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের কেন্দ্রবিন্দু জোংরোগু
(জোংরো ডিস্ট্রক্ট) এর সোংহিয়ন কোয়াংজাং (সোংহিয়ন স্কোয়ার) এ সমাবেশের আয়োজন করা
হয়।
সমাবেশে অংশগ্রহনকারীরা প্রথমে জোংরো টাওয়ারের সমানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের
পর সোংহিয়ন স্কোয়ারের অভিমুখে বিভিন্ন প্লেকার্ড, কোরিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা,
জাতিসংঘ-পতাকা সহকারে ৫০০ মিটার শান্তি র্যালি করেন এবং কোরিয়ার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধমন্দির
জোগেসা (Jogyesa Temple) এর সামনে গুইমারা রামসু বাজারে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে প্রার্থনা
ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
শান্তি র্যালি শেষে সোংহিয়ন স্কোয়ার-এ এক ঘন্টা যাবত প্রতিবাদ সমাবেশ
আনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক কোরিয়ার সভাপতি নিখিল চাকমার সনচালনায়
সংগঠনের কর্মী জেকি মারমা, সোহেল চাকমা, জনক চাকমা ও গ্লোবাল এসোসিয়েশন ফর ইন্ডিজেনাস
পিপলস অব সিএইচটি (GAIP-CHT) এর কোরিয়া মুখপাত্র রনেল চাকমা ননি বক্তব্য রাখেন।
রনেল চাকমা ননি প্রথমে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় তিন জুম্মকে হত্যার ঘটনার
তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, আজ আমরা এখানে এসেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে যে মানবাধিকার
লঙ্ঘন হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাতে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সেই সেনাবাহিনী হোক, সেটলার
বাঙালি হোক- আমরা কাউকে বরদাস্ত করতে পারি না।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের নিরাপদে বসবাস করার অধিকার
আছে। কিন্তু সে অধিকার বার বার লঙ্ঘিত হচ্ছে ২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনা তার উদাহরণ। তিনি
কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনাও তুলে ধরেন।
রনেল চাকমা ননি আরো বলেন, “আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নই, বরং সরকার বাংলাদেরশের
গণ-মানুষের তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘আদিবাসীদের’ অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়ে জুম্ম
আদিবাসীদের বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে নিপীড়নের মাত্রা বাড়াতে চাচ্ছে।
জেকি মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে
সরকারের কোন পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাই না। ধর্ষণের ঘটনায় কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আওয়ামী
লীগ সরকার যেমন সুরক্ষা দেয়নি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। পার্বত্য
চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। খাগড়াছড়ির গুইমারায় যেভাবে
হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এর দায়ভার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণসহ হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে
তাদেরকে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রতিবাদ করা যদি অন্যায়
বা অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে তা আমরা একবার নয়, হাজার বার করতেও প্রস্তুত আছি। রক্ত যখন
দিয়েছি, প্রয়োজনে রক্ত আরো দেবো।
তিনি বলেন, যে সেনাশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামকে নরকে পরিণত করেছে সেই সেনাশাসন
থেকে মুক্তি চাই। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে লড়াই করার আহ্বান
জানান এবং পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নেরও দাবি করেন।
সমাবেশে বক্তারা ২৩ সেপ্টেম্বর মারমা কিশোরী ধর্ষকদের গ্রেফতার, গুইমারা
হত্যার সাথে, অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত সেনা সদস্যসহ সকল অপরাধীদের বিচারের কাঠগোড়ায়
দাঁড় করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে বিশ্ব সম্প্রদায় ও জাতিসঙ্ঘের
হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
সমাবেশে সাংবাদকর্মী, মানবাধিকার কর্মীসহ প্রায় দু’ শতাতিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ
করেন। সর্বশেষে মিস কেয়া চাকমার সাংগঠনিক বিবৃতি পাঠের মাধ্যমে সমাবেশ সমাপ্ত হয়।
* ঘটনার প্রতিবাদে পাঠকৃত বিবৃতিটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।