""

পাহাড়ের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে: ছায়েদুল হক নিশান

ঢাকায় গুইমারার তিন শহীদের সম্মানে প্রদীপ প্রজ্বলন


ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান বলেছেন একটি গ্রুপ পাহাড়িদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। পাহাড়কে যদি উত্তপ্ত করা হয় তাহলে দেশ সুরক্ষিত থাকবে না। পাহাড়ের সমস্যা রাজনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাহাড়ে ভূমি নিয়ে সংকট তা সমাধান করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) সন্ধ্যায় ঢাকায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর সামনে সম্মিলিত পাহাড়ি ছাত্র জনতার উদ্যোগে গুইমারা রামেসু বাজারে সেনা-সেটলার হামলায় নিহত তিন শহীদ আখ্র মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও থৈইচিং মারমার সম্মানে আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানে সংহতি বক্তব্য প্রদানকালে তিনি উক্ত কথা বলেন।

সমাবেশে লেখক ও গবেষক উৎপল খীসার সভাপতিত্বে ও বাহাদুর ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নে সাধারণ সস্পাদক শিমুল কুম্ভকার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ট্যালেন্ট চাকমা।

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা ও রামেসু বাজারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে ছায়েদুল হক নিশান বলেন, ঘটনার পর গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি থেকে সরেজমিনে গিয়েছিলাম। আমরা যখন খাগড়াছড়ি সদরে গিয়ে পৌঁছায় সেখানে দেখি যেখানে আন্দোলন হয়েছিল, গণধর্ষণের ঘটনাস্থলসহ সমস্ত এলাকা জুড়ে সেনা-পুলিশ-বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কড়া নজরদারিতে রেখেছে, আমাদের ওপরও নজরদারি রাখা হয়েছিল। ভিকটিম পরিবার বলেছে গণধর্ষণের ঘটনায় শুরুতে থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করা হয়েছে। মামলার পরেও দ্রুত সময়ে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করা হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, আমরা খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জনকে প্রশ্ন করেছিলাম ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেরিতে কেন প্রকাশ করা হয়েছে, সবার আগে বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে কিভাবে গেল, ধর্ষণ হয়নি বলে কেন প্রচার করা হয়েছে। তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। ডিসি, এসপি ঠিক মত জবাব দিতে পারেন নাই। যমুনা টিভির প্রচারের পর গণধর্ষণ হয়নি বলে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা শুরু হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের মনে হয়েছে সেখানকার কিছু সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় বাহিনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে এবং প্রচার প্রপাগান্ডার সাথে লিপ্ত।

রামেসু বাজারের ঘটনার সস্পর্কে তিনি বলেন, আমরা যখন রামেসুর বাজারে যাই তখন দেখি বাজারে ঘর-বাড়ি, গোদাউন সম্পূর্ণ ধ্বংসলীলা রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা যখন নিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলি তারা বলেছে, সেদিন সেনা-পুলিশ ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল এবং তাদের লাশ তড়িঘড়ি করে দাহক্রিয়া করতে বাধ্য করেছিল। তাদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রশ্ন সেনা-প্রশাসনের ভিতরে স্বচ্ছতা থাকলে কেন লাশ দাহ নিয়ে এত তড়িঘড়ি করা হল?

তিনি, পাহাড়-সমতলে লড়াই অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে গুইমারা-খাগড়াছড়ি ঘটনায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির উত্থাপিত দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে উৎপল খীসা বলেন, পাহাড়িদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিতে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, তাদের আন্দোলনকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ ট্যাগ দিলেও তা দমিয়ে রাখা যাবে না।

তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা ভেবেছিলাম দেশের মানুষ রুটি-রুজিসহ জীবনে নিরাপত্তা পাবে। কিন্তু ইউনূস সরকার তার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য,  কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিচ্ছে। এর ফল শুভকর হবে না। শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান, এরশাদ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, সর্বশেষ শেখ হাসিনা নির্লজ্জভাবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী নানাভাবে গণমানুষের দাবিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জনগণের দাবিকে পাশ কাটিয়ে পার পাবেন না। ইতিহাস বলে অন্যায়কারীরা কখনো পার পাইনি। সময় আসলে আপনাদের পরিণতিও তাই হবে।

তিনি, রামেসুর বাজারে ঘটনা বিচারের দাবি জানান।

সসাবেশে অমল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী পাহাড়ে প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা করে রাখতে চায়। গুইমারা রামেসু বাজারে সেনা-সেটলার কর্তৃক ৩ জন মারমা তরুণকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিও একশ্রেণির মিডিয়াকে ব্যবহার করে ইউপিডিএফ'কে দায়ী করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাবিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে বর্মাছড়িতে ২০০ জনের অধিক সেনা সদস্য মোতায়েন করে সেনাক্যাম্প স্থাপন করতে চাইলে এলাকাবাসী সুসংগঠিতভাবে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই গণবিক্ষোভকেও আইএসপিআর ইউপিডিএফ'র সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে মিথ্যা মনগড়া বিবৃতি দিয়েছে। আমরা আইএসপিআর'র সেই মিথ্যা বিবৃতিকে ধিক্কার জানাই। তিনি পাহাড়ে সংবাদ কর্মীদের প্রতি আইএসপিআর মিথ্যা সংবাদ, বিবৃতি প্রচার করা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানান।

তিনি রামেসু বাজার, খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, রাঙামাটি ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিতসহ গুইমারায় ৩ জন তরুণকে হত্যার নির্দেশদাতা গুইমারা ব্রিগেড কমান্ডারকে প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান। এছাড়াও পাহাড়ে নিপীড়ন-নির্যাতন, সেনা শাসনের বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান।

শিমুল কুম্ভকার বলেন, পাহাড়িরা গণধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে, অধিকারের জন্য আন্দোলন করলে তাদেরকে বিচ্ছনতাবাদী বলা হয়। দেশের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন আন্দোলন হয়ে থাকে তাদেরকেতো বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হয় না।

তিনি বলেন, পাহাড়ে সেনা-সেটলার কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয় না। রামেসু বাজারে সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ৩ জনকে হত্যা করেছে সে ঘটনার বিচারেরও কোন লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বরং যারা বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে তাদের উপর হামলা করা হয়। এ ঘটনা প্রমাণ করে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর পাহাড়িদের অন্যায়ভাবে দমন-পীড়ন করছে, খুন করছে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে।

তিনি, সেনাবাহিনীর এহেন ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং রামেসুর বাজারসহ সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত সকল ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা ও ডাকসু সদস্য হেমা চাকমা।

প্রদীপ প্রজ্বলনের পর গুইমারা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments