""

২০১৯ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশ করেছে ইউপিডিএফ

৭৪ জনকে গ্রেফতার, ১৪ জনকে আইন-বহির্ভুতভাবে হত্যা, ৪২ জনকে অপহরণ


ডেস্ক রিপোর্ট, সিএইচটি নিউজ ॥ ২০১৯ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল।

আজ ২ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১৯ সালে ইউপিডিএফের সদস্যসহ ১৪ জনকে আইন-বহির্ভূতভাবে হত্যা, ১ জনকে গুম, ৭৪ জন সদস্য ও সমর্থককে গ্রেফতার ও ৪২ জন গ্রামবাসীকে অপহরণ করা হয়েছে। এছাড়া একই সময় ৭ জন পাহাড়ি নারী ধর্ষণ অথবা ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য ও তাদের পৃষ্ঠপোষিত সন্ত্রাসী দল কর্তৃক এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়, গত বছর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফ নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমাসহ কমপক্ষে ৭৪ জন নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা অধিকাংশই সাধারণ গ্রামবাসী। এর মধ্যে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, গ্রামের কার্বারী এবং জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

গ্রেফতারের পর প্রায় সকলকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। অনেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও তাদেরকে পুনরায় জেল গেইট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অথবা নতুন করে পুরোনো মামলায় জড়িত করে জেলে আটকে রাখা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে। এর মধ্যে ইউপিডিএফের সাবেক ও বর্তমান সদস্য ৪ জন, সমর্থক ১ জন ও সাধারণ গ্রামবাসী ২ জন রয়েছেন।

গত বছর ঢাকায় গুমের শিকার হন ইউপিডিএফের মুখপাত্র ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (UWDF)-এর সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা। এখনো তার কোন খোঁজ মিলেনি।

এছাড়াও বছর জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক রাত-বিরাতে বিভিন্ন গ্রামে সাধারণ গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি তল্লাশিসহ নানা হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল কর্তৃক গত বছর খুন হয়েছেন ৭ জন ইউপিডিএফ কর্মী ও সমর্থক। আর অপহরণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৪২ জন সাধারণ গ্রামবাসী।

গত বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭ জন পাহাড়ি নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ২ জন, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হন ৪ জন (এর মধ্যে একজন বিজিবি সদস্য দ্বারা ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন) ও অপহরণের শিকার হন ১ জন।

এছাড়া বিশেষ মহলের মদদপুষ্ট তথাকথিত এএলপি (মগপার্টি) কর্তৃক বান্দরবানে গ্রামবাসীদের ওপর কয়েক দফা হামলা ও রাঙামাটির রাজস্থলীতে কয়েকটি খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

রিপোর্টের বিস্তারিত:

ক. গ্রেফতার
গত বছর (২০১৯) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ গ্রামবাসীসহ কমপক্ষে ৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শিক্ষক, গ্রামের কার্বারী এবং জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। এর মধ্যে-
১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে সুমন্ত চাকমা (১৮) ও দীপঙ্কর চাকমা(২২) নামে দু’জন যুবককে গ্রেফতার করা হয়। 
১০ জানুয়ারি গুইমারার বাইল্যাছড়ির ১ নং রাবার বাগান থেকে ৫ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন, ১. নির্মল ত্রিপুরা(৪০), ২. মংসাঅং মারমা (৭৫), ৩.সঞ্জয় ত্রিপুরা (২১), ৪. বানু মারমা (২৫) ৫. সুকুল ত্রিপুরা (১৮)। গ্রেফতারের একদিন পর তাদের সবাইকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১১ জানুয়ারি গুইমারার বাইল্যাছড়ি ১ নং রাবার বাগান থেকে ইউপিডিএফ সদস্যের স্ত্রী, পিতামাতাসহ ৪ জনকে আটক করে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে সারাদিন মানসিক নির্যাতনের পর বিকালে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৫ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ময়দাছড়া এলাকা থেকে মধু রঞ্জন ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১৬ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া এলাকা থেকে কিরণ চাকমা (৩৭) নামে এক গ্রামবাসীকে আটক করে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে উগ্য মারমা (২৭) নামে এক গ্রামবাসীকে আটকের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২১ জানুয়ারি রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি থেকে ইউপিডিএফ সদস্য বোধিসত্ত্ব চাকমা ওরফে পিপুল (৩২) ও অটল চাকমা (২৯)-কে আটক করা হয়। আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির সদর বাজার থেকে চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা (২৬) ও অর্জন চাকমা (২৮) নামে দু’জনকে আটক করা হয়। তারা উভয়েই সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া এলাকার বাসিন্দা। আটকের পর তাদেরকে ইউপিডিএফ কর্মী সাজিয়ে থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
২৯ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ করা হয়।
৩১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য সমাপন চাকমা(৩০)-কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির কুদুকছড়ি ইউনিয়নের আবাসিক নামক গ্রাম থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক কুনেন্টু চাকমাকে গ্রেফতার করা হয়।  গ্রেফতারের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
৮ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার রামহরিপাড়া তক্ষশিলা বনবিহার থেকে অনিমেষ চাকমা (৪১) নামে এক গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণ করা হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউপি’র বোধিপুর গ্রাম থেকে ধনমনি চাকমা (৪৫), রূপনা চাকমা(৪০), পুতুল চাকমা (৩৩) নামে তিন জনকে আটক করা হয়। আটকের পর ধনমনি চাকমা ও রূপনা চাকমাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুতুল চাকমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি চিকিসার জন্য ঢাকায় গেলে শেরেবাংলা এলাকার মেয়ের সাব-লেটের বাসা থেকে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় রাঙামাটি জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
একই দিন রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদর বাজারের বোটঘাট থেকে রবিয়া চাকমা (৪৩) নামে এক গ্রামবাসীকে আটক করা হয়।
২৮ মার্চ লংগদু উপজেলার বামে গলাছড়ির নিজ বাড়ি থেকে লাড়ে চন্দ্র চাকমা (৪৫) নামে এক গ্রামবাসীকে আটক করা হয়।
১ এপ্রিল রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা টিমের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচ গ্রামবাসীকে আটক করা হয়। এরা হলেন- ১. চক্যবি চাকমা(২৮), ২. শশাংক চাকমা (৩০), ৩. জনপ্রিয় চাকমা (৬৫), ৪. সুখেন চাকমা (৩৫) ও  ৫. স্মৃতিময় চাকমা (৪৫)।
৬ এপ্রিল রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বৈদ্যপাড়া নামক স্থান থেকে পাঁচ ইউপিডিএফ কর্মী ও সমর্থক গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন ১. চোখ্যা চাকমা (৩৫), ২. পুনদেব চাকমা (৩৩), ৩. সমত্যা চাকমা ওরফে সরল(৪০), ৪. নেশন চাকমা (২২), ও ৫. নরেশ চাকমা(২৩)।
৯ এপ্রিল রাঙামাটির সাজেক ইউপির এগুচ্ছেছড়ি গ্রামের কার্বারী ও গঙ্গারাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নতুন জয় চাকমাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর অস্ত্র গুঁজে দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২৫ এপ্রিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য শুদ্ধজয় চাকমা(৪৫) ও রিকেল চাকমা(২৭)-কে গ্রেফতার করে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
৪ জুন খাগড়াছড়ির ভাইবোন ছড়া এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য সুকিরণ কান্তি খীসা ওরফে পার্বন (৫০)-কে গ্রেফতার করা হয়। আটকের পরদিন কোর্ট থেকে তিমি জামিনে মুক্তি পান।
১১ জুন রাঙামাটির মানিকছড়ি থেকে অটোরিক্সা চালক ও দক্ষিণ কুতুকছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি সুজল চাকমা(৩৩)-কে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
২১ জুন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার তারাবনছড়া এলাকা থেকে ৩ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ১. নিহার বিন্দু চাকমা (৫৫), ২. কলো চাকমা (৩৫), ৩. শান্তি ভূষণ চাকমা(৫০)।
২২ জুন রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বেতছড়ি দোসরপাড়া থেকে সুবন্ত চাকমা (৩৮) নামে এক গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
২ জুলাই রাঙামাটির সাজেকের লাদুমনি বাজার থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক শাখার সহ সভাপতি অনুপম চাকমা(৩৫)-কে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১৮ জুলাই খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউপির গাছবান এলাকা থেকে সুখেন্দু ত্রিপুরা(৩২) নামে এক গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে ইউপিডিএফ কর্মী সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
৫ আগস্ট সাজেকের উজোবাজার থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক শাখার সভাপতি সুমন চাকমাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৭ আগস্ট রাঙামাটির কাউখালীতে ইউপিডিএফ সদস্য হ্লাগ্য মারমা (৩৫) ও প্রশিক্ষণ চাকমা(৩৯)-কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২১ আগস্ট খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ইউনিয়নের ভোলানাথ পাড়ার বাসিন্দা অমর কান্তি চাকমা(৬৫) ও তার পুত্র অমর প্রিয় চাকমা(১৮)-কে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
৬ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর বাজার থেকে লিটন চাকমা(২২) ভাইবোনছড়ার গাছবান এলাকার এক যুবককে আটক করা হয়।
৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বাদলছড়ি গ্রাম থেকে রসমনি চাকমা চাকমা(৪০) ও সজন চাকমা(৩৫) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির গুইমরা উপজেলার বাইল্যাছড়ি সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য নিঅং মারমা(৩০)-কে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
১১ অক্টোবর রাঙামাটির কুদুকছড়ি বাজার এলাকা থেকে পরেশ চাকমা (৩৪) নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
১৬ অক্টোবর খাগড়াছড়ির গুইমারার বাইল্যাছড়ি ১নং রাবার বাগান এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য বনসিং চাকমা ওরফে অর্জুন (৪০) ও ১নং রাবার বাগান গ্রামের বাসিন্দা কালা চাকমা(২৬)-কে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
২১ অক্টোবর রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নবীন চাকমাকে প্রায় ৩ ঘন্টা পর্যন্ত করেঙাতলী ক্যাম্পে আটকে রেখে হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন করার পর শর্ত সাপেক্ষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
২৬ অক্টোবর  রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কচুখালী থেকে বর্মাছড়িমুখ পাড়ার বাসিন্দা অমিত চাকমা (৪০) ও নিকেল চাকমা চাকমা (২৬) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর থানায় হস্তান্তর করে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২৮ অক্টোবর রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ডেবাছড়ি থেকে দিলীপ সেন চাকমা (৪৫) নামে সাবেক ইউপিডিএফ কর্মীকে আটক করা হয়। আটকের ১০ ঘন্টর পর স্থানীয় মুরুব্বীদের জিম্মায় ক্যাম্প থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৯ নভেম্বর রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার উল্লগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ইউপিডিএফ সদস্য জ্ঞান রঞ্জন চাকমা(৪০)-কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে দীর্ঘদিন হেফাজতে রেখে নির্যাতন চালানোর পর থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।
৪ ডিসেম্বর রাঙামাটির সাজেকের চিদুজ্যাছড়া এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য সুনীল চাকমা(৪০)-কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে বাঘাইহাট জোনে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানোর পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
একই দিন নান্যাচর উপজেলার গবছড়ি ও এগারাল্যাছড়া থেকে ধর্ম জ্যোতি চাকমা (৪০) ও মিন্টু চাকমা (৪৯) নামে দুই গ্রামবাসীকে আটক করা হয়। তবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত আর জানা যায়নি।
৬ ডিসেম্বর রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউপি’র নুয়ো আদাম গ্রাম থেকে বিনয় লাল চাকমা (৩৫) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আটকের ১৪ ঘন্টা পর রাঙামাটি ব্রিগেড থেকে তাকে মুরুব্বীদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বাড়ি ঘেরাও করে কাউখালীর হাজাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা পানছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তরুণ কান্তি চাকমা(৫২)-কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের ৯দিন পর তাকে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে থানায় হস্তান্তরের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১৪ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য নিতু চাকমা (৩২) ও পল্লিময় ত্রিপুরা ওরফে সুকেশ(৩৩)-কে গ্রেফতার করে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
৩০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সমুর পাড়ার বাসিন্দা লাকড়ি ব্যবসায়ী পেক্ষ্যা চাকমা(৩৭)-কে গ্রেফতার করে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়।

খ. বিচার বহির্ভুত হত্যা
কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ব্রাশফায়ারে গত বছর কমপক্ষে ৭ জনকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ২৩ আগস্ট রাঙামাটির সাজেকে ইউপিডিএফের সাবেক সদস্য শান্তিপ্রিয় চাকমা ওরফে সুমনকে আটকের পর কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। উক্ত ঘটনার তিন দিনের মাথায় ২৬ আগস্ট খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কৃপাপুর গ্রাম থেকে আটকের পর ইউপিডিএফের তিন সদস্য নবীন জ্যোতি চাকমা(৩২), ভুজেন্দ্র চাকমা (৫০) ও রুশিল চাকমা(২৬)-কে একই কায়দায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর আগে ৬ এপ্রিল রাঙামাটির লংগদুতে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলার লক্ষ্য করে নিরাপত্তা বাহিনী ব্রাশফায়ার করলে ঘটনাস্থলে নিহত হন শুভপ্রিয় চাকমা (২৮) নামের এক ব্যক্তি। পরে লেকের পানি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গত বছর ১৪ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে ৮নং ওয়ার্ডের ফাত্রাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেম্বার প্রার্থী আজমত আলীর পক্ষে জালভোট দিতে বাধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপর মেম্বার প্রার্থী বাবুল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সমর্থক ভোটারদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে বড় ধরনের কোন উত্তেজনা ছাড়াই সেখানে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই মংক্যসা তঞ্চঙ্গ্যা নিহত ও অংছাই মং গুরুতর আহত হন। পরে আহত অবস্থায় অংছাইমংকে কক্সবাজারের উখিয়া হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।

গ. গুম
গত বছর আইনশঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার হন ইউপিডিএফের মুখপাত্র ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা। তিনি ৯ এপ্রিল ২০১৯ নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ থানায় জিডি করা হলেও থানা কর্তৃপক্ষ তাকে খুঁজে বের করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি এবং সহযোগিতা প্রদানেও অপারগতা প্রকাশ করে।

ঘ. রাষ্ট্রীয় বাহিনী-র মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক খুন
গত বছর রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহলের মদদপুষ্ট সংস্কারবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক ৭ জন ইউপিডিএফ কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জানুয়ারি ইউপিডিএফ সদস্য পিপলু ত্রিপুরা ওরফে রনিকে খাগড়াছড়ির গাছবানের নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা, ২৯ জানুয়ারি রাঙামাটির লংগদুতে পবিত্র চাকমা ওরফে তোষণকে গুলি করে হত্যা, ১৯ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙখিয়ায় তুষার চাকমা (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রকে হত্যা, ৭ মার্চ বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্য উদয় বিকাশ চাকমা ওরফে চিক্কেধনকে গুলি করে হত্যা, ১৫ মার্চ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সুখময় চাকমা ওরফে তারাবনকে গুলি করে হত্যা এবং ২৪ জুন পানছড়ি থেকে চিকিসার জন্য চট্টগ্রামে যাবার সময় ইউপিডিএফ সদস্য রিপন চাকমা (৩০) ও যুব ফোরাম সদস্য আদি চাকমা ওরফে বাবু (২৩)-কে মাটিরাঙ্গায় গাড়ি থেকে নামিয়ে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করা হয়।

ঙ. অপহরণ
রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহলের মদদপুষ্ট সংস্কারবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক গত বছর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন গ্রাম থেকে কমপক্ষে ৪২ জন অপহরণের শিকার হন। অপহৃতরা সবাই সাধারণ গ্রামবাসী।
এর মধ্যে ২৫ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির মাটিরাংগা বাজার থেকে অপহৃত হন ৩ জন, ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির মহাজনপাড়া এলাকা থেকে ১ জন (তিনি সাজেকের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী), ১২ মার্চ মহালছড়ি বাজার থেকে ১ জন, ১১ জুন রাঙামাটির নান্যাচর থেকে ৩ জন, ২৩ জুন বাঘাইছড়ির দাঙ্গাছড়া থেকে ২ জন, ২৯ জুন বাঘাইছড়ির করেঙাতলী বাজার থেকে ১৫ জন, ১৩ জুলাই নান্যাচরের টিএন্ডটি বাজার থেকে ৬ জন,  ২৫ জুলাই বাঘাইছড়িতে ১ জন (কলেজ ছাত্র), ২৫ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা মেরুং থেকে ২ জন, ৩০ সেপ্টেম্বর দীঘিনালায় ১ জন (কলেজ ছাত্র), ৩ অক্টোবর বাঘাইছড়ির সদর বাজার এলাকা থেকে ৫ জন, ১৯ নভেম্বর গুইমারা থেকে ১ জন, ৮ ডিসেম্বর মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে ১ জন ও ১০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোন ছড়া থেকে ১ জন গ্রামবাসী অপহরণের শিকার হন।
অপহৃত ব্যক্তিরা প্রায় সকলেই মোটা অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

. নারী নির্যাতন
গত বছর ৭ জন পাহাড়ি নারী নির্যাতনের (ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টা ও অপহরণ) শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জানুয়ারি রাঙামাটির লংগদুতে বিজিবি সদস্য দ্বারা ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন। ১৮ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকায় সেলিম মিয়া নামে এক দুর্বৃত্ত কর্তৃক ২ জন পাহাড়ি নারী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন। ২ মে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে নাগরি চাকমা নামে এক গৃহবধুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ১৪ আগস্ট বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়িতে লোকমান হাকিম নামের দুর্বৃত্ত কর্তৃক এক পাহাড়ি নারী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন।  ২১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নুর হোসেন নিশাদ নামের দুর্বৃত্ত কর্তৃক এক ত্রিপুরা কিশোরী অপহরণের শিকার হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে প্রীতিরাণী ত্রিপুরা (২৮) নামে এক গৃহবধুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আসাদুল ইসলাম রাসেল (২২), আল আমীন(১৯), কামাল হোসেন(২৩)-কে অটক করে।

ছ. কথিত এএলপি বা মগপার্টি কর্তৃক সংঘটিত কিছু ঘটনা:
গত বছর বিশেষ মহল মদদপুষ্ট এএলপি বা মগপার্টি কর্তৃক বান্দরবান ও রাজস্থলিতে পাহাড়ি গ্রামে হামলাসহ কয়েকটি খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে-
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রাত ৯ টার দিকে এএলপি বা তথাকথিত মগ পার্টির একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত মিনঝিরি তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া ও মিনঝিরি মারমা পাড়ায় হানা দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার চালায়। এতে ডিওয়াইএফ-এর সাবেক সদস্য শুদ্ধমনি তঞ্চঙ্গ্যাসহ ১৪ জন আহত হয়। সন্ত্রাসীরা উক্ত গ্রামের কার্বারীরা তাদের সাথে দেখা না করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
২২ অক্টোবর ২০১৯ রাঙামাটির রাজস্থলীতে অপহরণের পর হেডম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যান দীপময় তঞ্চঙ্গ্যাকে (৪৫) হত্যা করা হয়। এএলপি’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে উপজেলার ঝুলন্ত ব্রিজের পাশে বগাপাড়া থেকে জোরপুর্বক অপহরণ করে হত্যা করে। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায়।
১৮ নভেম্বর ২০১৯ রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের বালুমুড়া পাহাড়ি গ্রামে তিন জনকে হত্যা করা হয়। ঘটনার একদিন আগে তাদেরকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরা হলেন বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর নোয়াপাড়া গ্রামের কার্বারি (গ্রাম প্রধান) মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা (৪৬) তার ছেলে আদর তঞ্চঙ্গ্যা প্রকাশ সুখমনি (২২) এবং একই গ্রামের বাসিন্দা উসিমং মারমা (২৫)। হাত পেছনে বেঁধে ঠা-া মাথায় কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় বলে লাশ ময়না তদন্ত শেষে জানিয়েছে পুলিশ।
২১ নভেম্বর ২০১৯ রাত ৯টার দিকে তথাকথিত এএলপির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের কাট্টলী চাকমা পাড়ায় হামলা চালায় ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ রাত ৮টার সময় বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় তারাছা ইউনিয়নের ঘেরাওমুখ মারমা পাড়ায় কথিত এএলপি তথা মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।






0/Post a Comment/Comments