রাঙামাটি : নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগিদের দ্রুত
গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়িতে বিক্ষোভ
সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক নারী
সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি।
আজ বুধবার (৭ জুন) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ
সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের
সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক
সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমা, নারী আত্মরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।
সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের
সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা বলেন, সারা বাংলাদেশে সরকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি
লালন করায় কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী এবং তার সহযোগিদের এখনো পর্যন্ত
গ্রেপ্তার না করে বরং অপরাধীদের বাচানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ
২১ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও এই রাষ্ট্র তার বিচার করতে ব্যর্থ।
নারী
আত্মরক্ষা কমিটির আহব্বায়ক এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মা-বোনেরা কোথাও
কেউ নিরাপদ নয়, তাই নারীদের প্রতিটি পাড়ায়, এলাকায় আত্মরক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।
ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক
সভাপতি শান্তিপ্রভা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জারি থাকায়, কোন
ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আশা করা যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু পরিবেশ
সৃষ্টিতে সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তিনি আগামীকাল ৮ জুন কল্পনা চাকমা’র অপহরণ মামলার শুনানিতে
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে চিহ্নিত অপরণকারী লেঃ ফেরদৌসের শাস্তির দাবি
জানান।
হিল
উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমা বলেন, আগামীকাল কল্পনা চাকমা
অপহরণ মামলার অধিকতর শুনানি তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে শুনানীর নামে
অপরাধীদের বাঁচাতে সরকার কালক্ষেপন ও তালবাহানা করছে। ১৯৯৬ সালে ১১ জুন দিবাগত
রাতে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় কল্পনাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেসময়
চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশন অপরাধীদের বাচানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার এবং
নানা নাটক সাজিয়েছিল। ৫ এপ্রিল পিসিপি নেতা রমেল হত্যা করার পর লাশ পরিবার থেকে
ছিনিয়ে নিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়েছিল। রমেল হত্যার দায় এড়ানোর জন্য রমেলকে
সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে নানা নাটক সাজিয়েছিল। তিনি সরকারের ফ্যাসিষ্ট শাসন ও
সেনা-সেটলারের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণকে প্রতিরোধ আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার
চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।
এছাড়া বক্তারা সম্প্রতি লংগদুতে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের
গ্রেপ্তারপর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে মিটিং-মিছিল করার
গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি সাপছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ থেকে শুরু হয়ে ফুরোমোন রাস্তামূখে এসে শেষ হয়।
মিছিল ও সমাবেশে এলাকার ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী প্রায় তিন শতাধিক নারী
অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি
পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান মামলার তদন্তের রির্পোট চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে
পেশ করেন। এই তদন্ত রির্পোট কল্পনা চাকমার বড় ভাই প্রত্যাখান করে আদালতে নারাজী
পিটিশন দায়ের করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বার বার শুনানীর নামে শাসক গোষ্ঠী বিচারিক
আদালতকে প্রভাবিত করে অপরাধীদেরকে আড়াল করার জন্য চেষ্টা করছে।
আগামী
৮ জুন, ২০১৭ইং রাঙামাটি পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনের উপর কালিন্দী কুমার চাকমার
আদালতে যে নারাজী আবেদন করেছেন তার উপর শুনানী হবে। এই শুনানির মাধ্যমে
অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন আজকের মিছিল ও সমাবেশের
আয়োজন করেছে।
——————
——————