""

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি



ঢাকা, সিএইচটি নিউজ ।। গতকাল ২০ মে ২০১৯ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।

সকাল ১১টায় পল্টনস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ (বাশিকপ) হল রুমে দলীয় সংগীত বাজিয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. আকমল হোসেন এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপল চাকমা।


উদ্বোধনের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য রুপসী চাকমা। শোক প্রস্তাব শেষে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর জেলে অন্তরীণ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, সহ সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, অর্থ সম্পাদক কুনেন্টু চাকমা’র জেল থেকে পাঠানো লিখিত চিঠি পাঠ করার মধ্য দিয়ে আলোচনার পর্ব শুরু হয়। চিঠিতে তারা বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে মনোবল না হারানোর আহ্বান জানান।

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক সুনয়ন চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. আকমল হোসেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আতিক অনিক, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ইকবার কবির ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এমএম পারভেজ লেলিন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি অনিল চাকমা।


আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক আকমল হোসেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি আগেও খাগড়াছড়িতে পিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সে সময়ের বাস্তবতা আর এখনকার বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন মন্তব্য করে বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের দমন পীড়নের চরম মাত্রায় পৌঁছেছে।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেছিলো সেই আন্দোলনকে অনেক বাঙ্গালি (যারা বাঙ্গালি জাতীয়বাদকে সমর্থন করে না) সমর্থন করেছিলেন এবং বর্তমানেও করেন। কারন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ন্যায়সঙ্গতভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন একটা বড় সুযোগ ছিল বাম ছাত্র সংগঠন এবং ছাত্র অধিকার সংগ্রাম পরিষদসহ একটা প্যানেলে নির্বাচন করা। যদি সাধারন ছাত্ররা এবং বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা সক্রিয় থাকতে পারতো তাহলে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনটা করতে পারতো না।


আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করার সময় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারনে ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে, রাস্তায় ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ করছে। তিনি কৃষকদের পাশে থেকে আন্দোলন করার পরামর্শ দেন।

ফয়জুল হাকিম বলেন, ফ্যাসিবাদের চাপে পাহাড় থেকে এসে ঢাকায় পিসিপির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন যা আগামীর লড়াইয়ের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে। পিসিপির আন্দোলনের বিষয়ে কোন বিতর্কের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সারা দেশে আজকের যে পরিস্থিতি তা অন্য যে কোন সময়ের থেকে আলাদা। তিনি বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের উখাত ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। যতদিন এই সরকারকে উখাত করতে পারবো না ততদিন পূর্ণস্বায়ত্তশাসন পাওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হাসিবুর রহমান বলেন, সারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংগঠনের মধ্যে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অন্যতম। প্রত্যেক সংগঠনের উত্থান পতন থাকে। পিসিপির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।


তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উপর যে হারে নিপীড়ন-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, অপহরণ, গুম, হত্যা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে, বাংলাদেশে অন্য কোন সংগঠনের উপর এযাবতকালে করা হয়নি।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি নতুন কিছু নয়। এই দাবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত রয়েছে এবং বহু দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন সর্ব প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভিন্ন ছোট ছোট এলাকায় এ ধরনের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

তিনি আওমীলীগ ফ্যাসিবাদী সরকারের উখাতের জন্য ছাত্র সমাজকে প্রধান ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে বিপুল চাকমা বলেন, এই ৩০ বছরে পিসিপিকে অনেক বাধা বিপত্তি,ঝড়-ঝঞ্ছা মোকাবেলা করে আসতে হয়েছে। সংগঠনের শুরুর থেকে সুবিধাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীলদের একটি অংশ ছিল এবং আজও তারা নানাভাবে আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে।


তিনি বলেন, পিসিপি’র এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতেই সরকার ১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর সমাবেশে যোগদান করতে আসা ৭০ বছরের বৃদ্ধ বড়দাস মনিকে হত্যা করেছিল। সময় যত গড়াতে থাকে শহীদের সংখ্যাও দিনদিন বাড়তে থাকে। তবুও পিসিপি তার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেকে এক চুলও সরে দাঁড়ায়নি।

আলোচনা সভা শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
---------------





1/Post a Comment/Comments

ujjal বলেছেন…
তাহলে মাইকেল চাকমাকে ভূলে গেলেন!!!!!