""

কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের গোলটেবিল আলোচনা


ঢাকা, সিএইচটি নিউজ ।।“কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় গোলটেবিল আলোচনা করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত “চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের সাজার মাধ্যমে আইন-আদালতের কার্যকারিতা প্রমানের দায়িত্ব সরকারের” শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা। এতে সঞ্চালনা ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা।

গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান, ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক ও অনুবাদক ওমর তারেক চৌধুরী, ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মানস নন্দী, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গনের সদস্য বীথি ঘোষ, শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মিতু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, সিপিবি নারী সেলের সদস্য লুনা নুর, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালি প্রমুখ।

আলোচনায়
বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান বলেন, ১৯৫২ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশের এই ভূখন্ডে গণআন্দোলনের ওপর যেসব আঘাত এসেছে তার কোনটার বিচার হয়নি। কোন ঘটনার তদন্তের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়নি। কল্পনা চাকমার অপহরণের মামলার দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারটিও তার ধারাবাহিকতার অংশ।



 এক সময় কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার সাথে যুক্ত ছিলেন জানিয়ে ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের নিয়ে জুডিশিয়ারি ইনকোয়ারি থেকে শুরু করে গণ-প্রতিনিধিত্বের অংশগ্রহনে অনেক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু তারা তদন্তের কোন ফয়সালা করতে পারেনি বা করেনি। কল্পনা চাকমার অপহরণের মামলা কোন পর্যায়ে আছে প্রশ্নে বলতে হয় এই মামলা আদৌতে কোন পর্যায়ে নেই। ২৩ বছরেও এই মামলার প্রক্রিয়া এখনো শুরু করা যায়নি। কারণ, এখনো তদন্তের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন তারা জমা দিতে পারেনি। 

“বাংলাদেশে গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত কোন মামলার বিচার করা সম্ভব হয়নি, ৩বছরেও গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি তাই বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করা যায়নি। ” তিনি আরও যোগ করেন। 

শ্রমিক নেতা মাইকেল চাকমার গুমের সাথে রাষ্ট্র জড়িত উল্লেখ করে লেখক ওমর তারেক চৌধুরী বলেন, দেশে গণতন্ত্রের সংকট রয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে মাইকেল চাকমা গুম হতেন না। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের পথ হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন। সব মত পথ ভূলে গিয়ে এই সময়ে সবার একমাত্র দাবী হওয়া উচিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।  

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা মানস নন্দী বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘদিন ধরে যে নিপীড়ন চলছে তার বিরুদ্ধে সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ছাত্র, নারী, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহকে সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। এই প্রেক্ষিতে আন্দোলন করতে আমাদের মতভেদ থাকতে পারে কিন্তু নিপীড়নের জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন বলেন, এই ২৩ বছরে কোন সরকার কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার করার জন্য সদিচ্ছা দেখায়নি। এতে প্রমাণিত হয় যে কল্পনা চাকমা অপহরণের সাথে রাষ্ট্র জড়িত।

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমাদত্ত বলেন, কল্পনা চাকমা কেবল একজন নারী বলে তাকে অপহরণ করা হয়েছে তা নয়, তাকে অপহরণ করার প্রধানতম কারণ হল তিনি পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য লড়াই করতেন। 

শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণে বাংলাদেশে একটা আলোচিত ঘটনা। অথচ, ২৩ বছরেও এর বিচার হয়নি। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত অন্যায়ের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যায়। 

ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান বলেন, দেশে আজ নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। আনুপাতিকভাবে ধর্ষণ ও ধর্ষনের পর হত্যার ঘটনা সমতলের তুলনায় পাহাড়ে বেশী এবং এসব ধর্ষনের কোন ঘটনার আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। বরং রাষ্ট্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে সিস্টেমেটিক্যালি বিদ্বেষ ছড়িয়ে সমতলের বাঙালি জনগোষ্ঠীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্র বিচারহীনভাবে ঠান্ডা মাথায় তার নাগরিকদের যেভাবে হত্যা, গুম করছে তার নজির ব্রিটিশ, পাকিস্তান পিরিয়ডেও কিছু ব্যতিক্রম বাদে নেই। স্বজন হারানোর মর্মকথা প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই বলেন এবং আবেগ আপ্লুত হন । শ্রমিক নেতা মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হলেন, আরও কত মানুষ গুম হলেন, প্রধানমন্ত্রী কি সেসব শুনেন না?

পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি দাবী করে বামজোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, যেখানে সংবিধানে বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তাদের স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি। সেখানে চুক্তি করে কিভাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে! সরকার প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের সাথে চুক্তি করে এবং ভঙ্গ করে, ছাত্রদের আশ্বাস দেয় কিন্তু রাখে না। এটা এখানকার শাসকদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে এই শাসকদের কিভাবে বিশ্বাস করব তারা চুক্তি করে পাহাড়িদের অধিকার দিবে! শাসকরা তাদের শ্রেনী চরিত্র নিয়ে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু আমরা কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি ও নিপীড়ত জাতিসত্তার মানুষ বিচ্ছিন্ন। দেশে অনেক শাসক এসেছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তাদের কোন পলিসি পাল্টায়নি। কারণ তাদের চরিত্র একই। 

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, কল্পনা চাকমা, মাইকেল চাকমাদের ফিরে পেতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবর  থাকতে হবে।  

বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্ণিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারে মুখোমূখি করার আহ্বান জানান।






0/Post a Comment/Comments