""

চিম্বুক-নাইতং পাহাড়বাসীদের মৃত্যুর হুমকি দিলো হোটেল স্থাপনকারী লোকজন (ভিডিওসহ)

স্টাফ রিপোর্টার, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২১

পাহাড়ি গ্রামবাসীদের হুমকি দিচ্ছে হোটেল স্থাপনকারী লোকজন

বান্দরবানের চিম্বুক-নাইতং পাহাড়বাসীদের মৃত্যুর হুমকি দিয়েছে পাঁচতারকা হোটেল স্থাপনকারী লোকজন।

আজ বুধবার (৬ জানুয়ারি ২০২১) দলা পাড়ার পাহাড়ি গ্রামবাসীরা নাইতং পাহাড়ে তাদের ভোগদখলীয় জায়গায় ঝাড়ু ফুল কাটতে গেলে সেখানে থাকা পাঁচতারকা হোটেল স্থাপনকারী লোকজন তাদেরকে বাধা প্রদান ও এই মৃত্যুর হুমকি দেয়। একইভাবে গতকালও তারা ঝাড়ু ফুল কাটতে বাধা প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ইয়াংবং হোং নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে।


ভিডিও শেয়ার করার সাথে তিনি লেখেন, ‘গতকাল ০৫/০১/২০২১ তারিখ দলা পাড়ার গ্রামবাসীরা নাইতং পাহাড়ে তাদের ভোগদখলীয় জায়গায় ফুল ঝাড়ু কাটতে গেলে সেখানে থাকা পাঁচ তারকা হোটেল স্থাপনকারীরা তাদেরকে বাধা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। সেজন্য এই ঘটনার প্রতিবাদস্বরূপ আজকে [৬ জানুয়ারি] গ্রামবাসীরা সবাই মিলে ফুল ঝাড়ু কাটতে যায়। যথারীতি আজকেও তাদেরকে বাধা দেওয়া হয় এবং সেখানে অবস্থানরত কোম্পানির লোক ও হোটেল স্থাপনকারীরা লাঠি দিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীকে মারতে উদ্যত হয়। গ্রামবাসীরা এর প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও মৃত্যুর হুমকি দেয় তারা।
এরপর কোম্পানির লোক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে যায় এবং ভবিষ্যতে কোন ধরণের প্রতিবাদ না করার জন্য তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে’।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, হোটেল স্থাপনকারী লোকজন গ্রামবাসীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এতে এক পাহাড়ি গ্রামবাসী প্রতিবাদ করে বলছেন, ‘এই ভূমি আমাদের, এটা আমাদের বাপদাদার সম্পত্তি, দীর্ঘ বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করি, আমরা এখানে মরবো,.. জন্ম মৃত্যু সবকিছু আমাদের এখানে হবে’। এ সময় হোটেল স্থাপনকারী পক্ষের এক লোক [বাঙালি] প্রতিবাদকারী গ্রামবাসীকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোর মৃত্যু আজকে এখানে হবে’। এরপর ঐ গ্রামবাসী বলেন ‘.. মৃত্যু আমি কোন ভয় করি না’। গ্রামবাসীর এ কথার পর কোম্পানির ঐ লোকটি আবার হুমকি দিয়ে বলে ‘ তোরা মরবি তো, যেভাবে আসছ, আজকে মরবি তোরা’। আর এতে উপস্থিত গ্রামবাসীরা সবাই একসাথে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মরলে এক সাথে মরবো, সবাই একসাথে মরবো সমস্যা নাই। আমরা মরলে একসাথে মরবো, বাঁচলে একসাথে বাঁচবো’।

উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট ও সিকদার গ্রুপ পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের কথা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। ম্রোদের বংশপরম্পরায় ভোগদখলকৃত জমি বেদখল করে এই হোটেল নির্মাণ না করার আবেদন জানিয়ে অক্টোবর মাসে ম্রো জনগোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর ৮ নভেম্বর তারা একটি কালচালার শোডাউনের মাধ্যমে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এর পরবর্তীতে চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নাইতং পাহাড়ে হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানায়।

কিন্তু এত প্রতিবাদের পরও হোটেল নির্মাণ কর্তৃপক্ষ এখনো প্রকল্পটি বাতিল না করে উল্টো গ্রামবাসীদের হুমকি প্রদর্শনসহ নানা বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করে চলেছে।

* সংযুক্ত ভিডিওটি ইয়াংবং হোং ফেসবুক আইডি থেকে সংগৃহিত।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।





0/Post a Comment/Comments