""

নাইক্ষ্যংছড়িতে কার্বারিসহ ৪ চাক গ্রামবাসীকে আটকের ১৪ দিন পর পুলিশে সোপর্দ, জেলে প্রেরণ


বান্দরবান, সিএইচটি নিউজ 
।। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাকপাড়া থেকে সেনা ও বিজিবির যৌথবাহিনী কর্তৃক আটককৃত গ্রামের কার্বারিসহ ৪ চাক গ্রামবাসীকে ১৪ দিন পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার রাতে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে এবং মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আটক উক্ত চার গ্রামবাসী হলেন- কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারি মংলাফো চাক (৬০), লাগ্যাছু চাক (৫৫), চিংলা অং চাক (৫০) ও তার ছেলে মংলাথোয়াই চাক (২০)।

গত ১ সেপ্টেম্বর যৌথ বাহিনীর সদস্যরা উক্ত ৪ গ্রামবাসীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে বিজিবি গত মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তাদেরকে আটক দেখিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বর সকালে আলিকদম জোনের সেনাবাহিনী ও নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের বিজিবি’র একটি যৌথ দল দোছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ায় অভিযান চালায়। এ সময় সেনা ও বিজিবি সদস্যরা উক্ত গ্রামের কার্বারীসহ ৬ চাক গ্রামবাসীকে অমানুষিক মারধর করার পর আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এছাড়া গ্রামের নারী-শিশুদেরও নানা নিপড়িন ও হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। উক্ত আটক ও নিপীড়ন-হয়রানির ঘটনায় এলাকার চাক সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়। গ্রামবাসীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হন।

তবে, সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে ‌ঐ এলাকায় “সন্ত্রাসীদের সাথে ‘গোলাগুলি’ হয়েছে” এমন তথ্য সংবাদ মাধ্যমে জানানো হলেও গ্রামবাসীদের আটকের বিষয়ে কোন কিছুই জানানো হয়নি।

পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির হাবিলদার মো. তাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মামলা (ধারা: দন্ডবিধি ১৪৪, ৩৫৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭) দায়ের করেন। ‍উক্ত মামলায় সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের গুলি বর্ষণ ও বিজিবি সদস্যদের মারাত্মক রক্তাক্ত জখমের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।

মামলা দায়ের করার পরেই সেদিন আটক ৬ গ্রামবাসীর মধ্যে উথোয়াই হ্লা মার্মা (২৪), পিতা-মংদো মারমা ও সাবেক ইউপি সদস্য ম্যানরুম মুরুং (৬০), পিতা- মৃত ধুই থং মুরুং-কে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে উক্ত মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। তবে অপর ৪ জনকে কোথায় রাখা হয়েছে সে ব্যাপারে কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে পরিবারের সদস্যরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। এ নিয়ে তারা নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ জিডি গ্রহণ করেনি বলে তারা জানায়।

এরপর গত মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিজিবি কার্বারিসহ ৪ জনকেও পুলিশের নিকট সোপর্দ করে উক্ত মিথ্যা মামলায় জড়িত করে।

গতকাল বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে পুলিশ আটক ৪ জনকে বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সিকদার তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিলে পুলিশ তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এতে করে আটক ৬ গ্রামবাসীকেই জেল হাজতে প্রেরণ করা হলো।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আলমগীর হোসেন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, যৌথ বাহিনীর উপর হামলার ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় বিজিবির হাবিলদার মো. তাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় দায়ের করা মামলায় আটক ৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে উথোয়াই হ্লা মারমা ও ম্যানরুম মুরুং নামে আরও দুই আসামীকে আটক করা হয়েছিল। তারাও জেল হাজতে রয়েছে।।





0/Post a Comment/Comments