""

পানছড়িতে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা, ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

পানছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২২ মে ২০২২


খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)। সীমান্তবর্তী নতুন পাড়া (নতুন শনখোলা পাড়া) নামক স্থান হতে এ সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করার পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। উক্ত সড়কটি দক্ষিণে মাটিরাঙ্গার তানাক্কা পাড়া ও উত্তরে দীঘিনালা-সাজেকের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হবে। এর ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে গত ১৯ মে ২০২২ বিজিবি’র পানছড়ি জোনে এক মিটিঙের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও কার্বারীকেও ডাকা হয়। মিটিঙে বিজিবি’র পানছড়ি সদর জোনের কমান্ডার রুবায়েত আলম পিএসসি, সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি’র চট্টগ্রাম ডিভিশনের কমান্ডার লে. কর্ণেল রিয়াজত, পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ ও পানছড়ি ভূমি অফিসের এসিল্যান্ড মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন উপস্থিত ছিলেন। আর জনপ্রতিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্রদেব চাকমা, চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা, লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমা, শনখোলা পাড়ার কার্বারী খুকুমনি চাকমা প্রমুখ।

এতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি কমান্ডারদ্বয় পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও সীমান্ত সড়কটি নির্মিত হলে নানান সুযোগ-সুবিধার কথা শোনান। সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি’র কমান্ডার লে. কর্ণেল রিয়াজত জানান, প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় সেনাবাহিনী ২০১৯ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ করছে। প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে, যার মধ্যে কিছু কাজ শেষ হয়েছে ও কিছু কাজ চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও কার্বারীরাও তাদের স্ব স্ব মতামত তুলে ধরেন। তবে জনপ্রতিনিধিরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তারা প্রথমে কেন তাদেরকে মিটিঙে ডাকা হয়েছে তা বুঝতে পারেননি। পরে যখন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর কমান্ডারদ্বয় সীমান্ত সড়ক বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন তখনই তারা বিষয়টি অবগত হয়েছেন।

উক্ত মিটিঙে সড়কটি নির্মাণের জন্য শনখোলা পাড়ায় বেস ক্যাম্প করা হবে বলে জানানো হয়। তবে শনখোলা পাড়ায় যেখানে বেস ক্যাম্প করার কথা বলা হচ্ছে সেখানে রয়েছে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি, জায়গা ও ফলজ, বনজ বাগান-বাগিচা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সিএইচটি নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে যদি ক্যাম্প করা হয় তাহলে তারা চরম ক্ষতির শিকার হবেন।

অপরদিকে, সড়কটি নির্মাণের ফলে সড়কের আশে-পাশে আরো অনেকের বাগান-বাগিচা, ফসল, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে স্থানীয় জনগণ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন।

যদিও উক্ত মিটিঙে সড়ক নির্মাণকালে ঘরবাড়ি, বাগান-বাগিচা, জায়গা-জমি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাজেক, হরিণা এবং রামগড় হতে মাটিরাঙ্গার তানাক্কা পাড়া পর্যন্ত চলমান সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের ফলে যাদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ হয়েছে, যাদের বাগান-বাগিচা, ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। সাজেকে সড়ক নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে কোন ক্ষতিপূরণও পাননি। তাই পানছড়িতেও সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা বা আদৌ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে কিনা তা নিয়ে এলাকাবাসী সংশয় প্রকাশ করেছেন।

যার কারণে এলাকার জনসাধারণ সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে স্থানীয় অধিবাসীদের মতামত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

---

 





0/Post a Comment/Comments