অস্তিত্ব রক্ষার্থে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার আহ্বান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২০ মে ২০২২
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ৩৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে
খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২০ মে ২০২২, শুক্রবার সকাল ১১টায় পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখা এই
আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভার ব্যানার শ্লোগান ছিল “জাতীয় ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছাত্র
সমাজ বরদাস্ত করবে না, অস্তিত্ব রক্ষায় পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে যুক্ত হোন”।
সভায় পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকামার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মার্মা, পিসিপি'র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা।
সভা শুরুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ১ম শহীদ ভরদ্ধাজ মুনি চাকমাসহ পার্বত্য
চট্টগ্রামে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন সেসকল
বীর সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা
হয়।
আলোচনা সভায় ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মার্মা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকে
ধ্বংস করার জন্য শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকে নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠন গঠন করে দিয়ে পিসিপির
কর্মসূচি বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। সকল অপশক্তিসহ দালাল সুবিদাবাদীদের প্রতিহত
করে পিসিপি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য তার লক্ষ্যে অবিচল থেকে
সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো তাদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে না পেরে তাদের
জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে
পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের কোন বিকল্প নেই। তাই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ছাত্র
সমাজ, যুব সমাজ, নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে যুক্ত হতে হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের
মাধ্যমেই অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।
পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ একটি সংগ্রামের
নাম। এই সংগ্রামকে ক্ষুন্ন করার করার জন্য এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র ছাত্রসমাজের সুবিদাবাদী
পক্ষকে দিয়ে দল গঠন করে দিয়ে পিসিপির নাম ভাঙিয়ে জাত বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত করাচ্ছে।
সুবিধাবাদী পক্ষও সে সুযোগ লুপে নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে জাতবিরোধী কর্মকান্ডে
জড়িয়ে পড়ছে। পিসিপির নাম ভাঙিয়ে হীনকর্মকান্ড করার মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে বিভক্ত ও দূর্বল
করার ষড়যন্ত্র তারা বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি ছাত্রসমাজকে সে ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের
বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নিপীড়িত জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছাত্র সমাজ কখনো আপোষ করবে না।
যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খেলবে ছাত্র সমাজ তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে।
এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন করা সময়ের
প্রয়োজন ছিল। গঠনের পর থেকে পাহাড় ও সমতলে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবিচলভাবে রাজপথে
লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
যুবনেতা লিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জাতিসত্তার সংগ্রামের
প্রতীক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পিসিপি
অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে যৌক্তিকভাবে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম
চালিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে শান্ত চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠীর এত নিপীড়নের পরও পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদ দৃঢ়তার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। শত অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে
ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিতত্বকারী সংগঠন হিসেবে জাতির গুরু দায়িত্ব কাধে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ৪ মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে ২০ মে বৃহত্তর
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠিত হয় এবং ২১ মে ঢাকার রাজপথে মৌন মিছিলের
মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
----