""

স্মরণ: ইউপিডিএফ নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২

আজ ২ অক্টোবর ২০২২ ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ রুইখই মারমার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের আজকের এই দিনে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নের বটতলী নামক স্থানে সেনাবাহিনীর সৃষ্ট সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলাযয় রুইখই মারমা শহীদ হন।

শহীদ রুইখই মারমা আগাগোড়া একজন সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের নাম্। ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই নেতা ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি জনসংহতি সমিতিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৩ সালে জেএসএস’র মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। এই গৃহযুদ্ধ অবসানের পর তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করেন। ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠিত হলে তিনি এই দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং এই পার্টির বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি অত্যন্ত একনিষ্টতার সাথে ভাগ্য বিড়ম্বিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত ও অধিকারহারা জনগণের অধিকার ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।

রুইখই মারমাকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তৎসময়ের লক্ষ্মীছড়ি সেনাজোনে দায়িত্বরত লে. কর্ণেল শরীফুল ইসলাম। তিনি চক্রান্ত করে সমাজের কতিপয় অধঃপতিত দুষ্কৃতকারী ভাড়া করে ও তাদেরকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জড়ো করে ‘সিএইচটিএনএফ’ নাম দিয়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করেন। স্থানীয় লোকজন এই সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে ‘বোরখা পার্টি’ নাম দেয়। কারণ তারা বোরখা সদৃশ কাপড়ে মুখ ঢেকে অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্ম সংঘটিত করতো। লক্ষ্মীছড়ি জোন কমাণ্ডার শরীফুল ইসলাম এই সন্ত্রাসী গ্রুপটিকে অস্ত্র সরবরাহ, নিরাপত্তা দেয়া থেকে শুরু করে সকল দেখাশুনা করতেন। এই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেই রুইখই মারমাকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে সন্তু লারমার জেএসএস এই খুনি-দুর্বৃত্তদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে এবং সেনাবাহিনী ও জেএসএস মিলে লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। কিন্তু জনগণের প্রবল প্রতিরোধের ফলে তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

রুইখই মারমাকে হত্যার অন্যতম কারণ ছিল সে সময় লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি ও রামগড়ে সেনা উস্কানিতে ভূমি বেদখলের মহোসব শুরু হলে তার বিরুদ্ধে তিনি জনগণকে সংগঠিত করে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সেনাবাহিনী ও তাদের চর-এজেন্টর একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এক কথায় রুইখই মারমা অপরিসীম দায়িত্বশীলতার সাথে এলাকার জনগণের স্বার্থের পাহারা দিয়েছিলেন। যার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়।

রুইখই মারমাকে শারিরীকভাবে হত্যা করা গেলেও নিপীড়িত জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখে গেছেন সেই স্বপ্নের কোন মৃত্যু নেই। যে আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, সে আকাঙ্ক্ষা চিরঞ্জীব-- শত সহস্র মানুষের মিলিত সংগ্রামী চেতনার প্রতিধ্বনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে শহীদ রুইখই মারমা অমর হয়ে থাকবেন। 

 





0/Post a Comment/Comments