""

বিপুল চাকমাদের মৃত্যু চিম্বুক পাহাড়ের চেয়েও ভারী

* লেখাটি Arka Bhaduri ফেসবুক থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশকে সঠিকভাবে চিনতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে চিনতে হবে। যেমন ভারতকে চিনতে হলে চিনতে হয় কাশ্মীরকে। কলকাতার চশমায় যারা বাংলাদেশকে দেখি, তাদের অধিকাংশই হয়তো বিপুল চাকমার খুনের কথা জানি না। সোমবার রাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে ইউনাইটেড পিপল'স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা বিপুল চাকমা এবং তাঁর তিন সহযোদ্ধা সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা, রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে। অপহৃত হয়েছেন আরও তিনজন। শহীদ কমরেডদের সহযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন, যে ভাড়াটে খুনি বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট।

পরশু রাত থেকে ভাবছিলাম কিছু লিখব কি না। সাধারণত বাংলাদেশ নিয়ে কিছু লিখি না। বহু জটিলতা। ভালো লাগে না। আমার কাজের পরিসরও বদলে গিয়েছে। লিখলেও ক'জনই বা পড়বেন! তা সত্ত্বেও বার বার মনে পড়ছিল বিপুল চাকমার মুখ।

বিহারের মাটিতে শহীদ জেএনইউ-এর ছাত্রনেতা চন্দ্রশেখরের মতোই পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা বিপুল চাকমা ও তাঁর কমরেডরা প্রাণ উসর্গ করলেন জনগণের স্বার্থে।

'..চাকমা ছেলেটা বলেছিল, মাও
পড়েছেন মার্কস বহু ব্যাখ্যার
তাঁর কাছে মার্কস মানে একটাই
বিদ্রোহে আছে ধ্রুব অধিকার....'

বাংলাদেশ নিয়ে আমার জানাবোঝা খুব বেশিদিন আগে শুরু হয়নি। ২০১৫ সালের আগে আমি বাংলাদেশকে চিনতাম না৷ দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, কাচ্চি বিরিয়ানি আর ইলিশমাছের সাজানো ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে প্রথম যখন জানতে শুরু করি বাংলাদেশকে, তখনই জেনেছিলাম বিপুল চাকমার নাম।

২০১৬ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন বিপুল। মা রক্তবমি করছিলেন৷ পাশে প্লাস্টিক হাতে বসে ছিলেন বাবা৷ এই অবস্থায় গাড়ি থামায় পুলিশ। মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের চোখের সামনে অকথ্য গালিগালাজ করতে করতে কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে গ্রেফতার করে বিপুলকে। অসহায় মা কথা বলতে চান৷ পারেন না। বিপুলের সঙ্গে মায়ের সেই ছিল শেষ দেখা। জেলখানায় মায়ের মৃত্যুর খবর পান বিপুল। পরদিন হাতে পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে মায়ের লাশের সামনে বিপুলকে নিয়ে আসে বাংলাদেশ রাষ্ট্র।

৮ বছর পর বিপুল নিজেও শহীদ হলেন৷ এই ৮ বছরের কত কী ঘটে গিয়েছে বাংলাদেশে! রাত্রিবেলা ভোট ডাকাতি করা একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় বসে রয়েছে বৃহ বৈদেশিক শক্তির নির্লজ্জ তাঁবেদারি করে। যে কোনও বিরোধী স্বরকে গলা টিপে খুন করা হচ্ছে। গণতন্ত্র নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই, আছে কেবল দানবিক স্বৈরাচারের দুঃসহ অত্যাচার৷ ফাঁকতালে দাবার চাল দিতে চাইছে আরও বড় বৈদেশিক শক্তি। দূর থেকে দেখি, দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে লড়ছেন আমার বন্ধুরা। নব্য রাজাকারদের কবল থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রিয় মাতৃভূমিকে।

এই নিঃসীম অন্ধকারে একটি উজ্জ্বল আলোর ফুলকির নাম ছিল বিপুল চাকমা।

বাংলাদেশ একদিন স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তি পাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বপ্ন একদিন সার্থক হবে৷ সেই অনাগত সূর্যধোয়া দিনের শিশুরা শহীদ বিপুল, সুনীল, লিটন, রুহিনদের নাম পাঠ করবে গভীর মমতায়।

বিপুল চাকমাদের মৃত্যু চিম্বুক পাহাড়ের চেয়েও ভারী।

দক্ষিণ এশিয়ার মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে শহীদ বিপুল চাকমা ও তাঁর কমরেডরা রয়ে যাবেন চিরকাল।




সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments