""

জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকা হত্যার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট বিক্ষোভ সমাবেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার প্রশাসনিক হত্যার বিচার এবং নিপীড়ক আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

আজ রবিবার (১৭ মার্চ ২০২৪) বিকাল ৪টার সময় চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।

সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সভাপতিত্বে ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগরের প্রচার প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবদুল আল জাওয়াদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চবি শাখার সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিদুল ইসলাম ইবাদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সহ সভাপতি রিপা মজুমদার ও ছাত্র ফেডারেশন চট্টগ্রাম নগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদুল রাফি।

এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রামের আহ্বায়ক আসমা আক্তার ও হিল উইমেনস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা।


সমাবেশে বক্তারা অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনাটি তুলে ধরে বলেন, গত ১৫ মার্চ জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা একটি স্ট্যাটাস লিখে আত্মহনন করেন। স্ট্যাটাসে তিনি তার সাথে ঘটা অন্যায়গুলোকে তুলে ধরেন এবং প্রশাসন ও তার সহপাঠীকে অভিযুক্ত করেন। অনলাইন ও অফলাইনে যৌনহেনস্থার শিকার হয়ে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে, তিনি প্রক্টরের দ্বারা নিগ্রহের শিকার হন। একজন সাহায্যপ্রার্থী শিক্ষার্থীর প্রতি প্রশাসনের এহেন আচরণ ঘৃণার যোগ্য অপরাধ।

তারা আরো বলেন, ফাইরুজ অবন্তিকার এই সিস্টেমেটিক হত্যা আওয়ামী দুঃশাসনের অধীনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অপরাজনীতির চূড়ান্ত রূপ। আজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থলে পরিণত করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে জনগণের টাকায় চলা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখেছি প্রশাসনের সহায়তায় ধর্ষক, নিপীড়ক ও সন্ত্রাসীরা সুবিচারের আওতার বাইরে থেকে গেছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও কর্মসূচীতে ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা করে৷ আর প্রশাসন সেই অন্যায়ের পক্ষেই তার ভূমিকা পালন করে।


বক্তারা বিগত সময়ে নারী হেনস্থা ও ধর্ষণে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাসীনদের সাথে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছে যার ভুক্তভোগী হতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সংকুচিত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরী করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। এভাবেই ধীরে ধীরে উপেক্ষিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা। দিনের পর দিন ক্যাম্পাসগুলোতে নারী হেনস্থা ও ধর্ষণের হার বেড়ে চলেছে৷ শিক্ষক থেকে শুরু করে সহপাঠী, অগ্রজ ও অনুজদের দ্বারা নারী শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য হেনস্থার শিকার হয়েছে৷

তারা বলেন, আমাদের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের প্রক্রিয়াতে অস দলীয় লোকদের নেওয়ার যে রীতি তার ফলাফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। ছাত্রাবস্থায় যেসব ছাত্রলীগ কর্মী নারী হেনস্থার সাথে জড়িত থাকতো, নারীবিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষন করতো ও সেই ধরনের চর্চা করতো তারাই পরবর্তীতে ক্ষমতার জোরে প্রশাসনের পদে আসীন হয় ফলে তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব আচরণ প্রত্যাশা করা বোকামি। বিগত বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের অনেকেই নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য আমাদের সামনে এসেছে।


বক্তারা বলেন, অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর অবন্তিকার মানসিক স্বাভাবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তার জীবনযাত্রার স্বাভাবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে রক্ষা করার কোন ব্যবস্থা পর্যন্ত রাখেনি, সেটাও আমরা আঙুল তুলে দেখিয়ে দিতে চাই। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে, তাদের অবাধ চলাচলের নিরাপত্তাকে অবহেলা করে তারা যে নৈরাজ্য ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করেছে তার থেকে আমরা কেউই নিরাপদ নই এবং প্রতি পদেই আমাদেরকে তার মূল্য চুকাতে হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতার কাছে এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।

অভিযুক্ত প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সমাবেশ সমাপ্ত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিউ মার্কেট চত্ত্বর থেকে বটতলী রেল স্টেশন ঘুরে এসে নিউ মার্কেটে শেষ হয়।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments