""

ছাত্র নেতা রমেল চাকমা’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে পিসিপি’র শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন


নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সেনাবাহিনীর অমানুষিক নির্ষাতনে শহীদ ছাত্রনেতা রমেল চাকমা’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নান্যাচর উপজেলা শাখা।

আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল ২০২৪) বিকাল ৪টায় শহীদ রমেল চাকমা’র নিজ এলাকায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রথমে শহীদ রমেল চাকমার স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে পিসিপি’র পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি তনুময় চাকমা, শহীদ রমেলের মা আলো দেবী চাকমা, এলাকার শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ রমেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।


এরপর এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভার পূর্বে রমেল চাকমাসহ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে সকল শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

স্মরণসভায় পিসিপি’র নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি সুমেত চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য সুপন  চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি তনুময় চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয়তন চাকমা। এছাড়া শহীদ রমেল চাকমার মা আ্লোদেবী চাকমাসহ এলাকার মুরুব্বীগণ উপস্থিত ছিলেন।


সভায় নিকন চাকমা বলেন, ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে ছাত্রনেতা রমেল চাকমা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ বাড়িতে আনার পথে সেনাবাহিনী মরদেহটি ছিনিয়ে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে। আজ ৭ বছরেও রমেল চাকমার ওপর নির্যাতনকারী সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন নান্যাচর সেনা জোনের কমাণ্ডার বাহালুল আলম ও রাঙামাটি ব্রিগেডের জি-টু মেজর তানভীরসহ জড়িতদের বিচার ও শাস্তি দেওয়া হয়নি। তিনি অবিলম্বে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

তনুময় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারের দাবিতে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ও সরকার নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী সৃষ্টি করে একের পর নেতা-কর্মীকে খুন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরে তপন, এল্টনসহ ৭ জনকে হত্যাসহ সর্বশেষ গত বছর ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিপুল চাকমাসহ ৪জনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয় সকল অন্যায়, অত্যাচার, খুন-গুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রিমি চাকমা বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। রমেল চাকমা হত্যার বিচার না হওয়ায় দিন দিন সেনা নির্যাতনের ঘটনা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে বম সম্প্রদায়ের গর্ভবতী নারী, শিক্ষার্থীসহ গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

যুব নেতা প্রিয়তন চাকমা বলেন, পাহাড়ে রমেল চাকমার মতো উদীয়মান নেতাদের হত্যার মাধ্যমে সেনাবাহিনী পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের মনে রাখা দরকার খুন করে, দমন-পীড়ন চালিয়ে কখনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা যায় না। রমেলকে নির্যাতন করে শারীরিকভাবে হত্যা করা গেলেও তার লালিত আদর্শ থেকে ছাত্র সমাজকে বিচ্যুত করা যায়নি। ভবিষ্যতে তরুণ প্রজন্ম একেক জন রমেল হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

সভার সভাপতি সুমেত চাকমা শহীদ রমেল চাকমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজকে লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

স্মরণসভা শেষে শহীদ রমেল চাকমার স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভের সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এতে এলাকার ছাত্র, যুবক, নারী সহ এলাকার জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।






সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments