""

বান্দরবানে বম জাতিসত্তার নিরীহ জনগণের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান

জাতীয় প্রেসক্লাবে বক্তব্য প্রদান করছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম

মহালছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীর যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিসত্তার সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন ও গণগ্রেফার ও হয়রানি বন্ধ করে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

ইউপিডিএফ-এর সংগঠক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল’র সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং টিমের সদস্য ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা গুমের বছর উপলক্ষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল’র আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ দাবি জানান।

আজ মঙ্গলবার ( এপ্রিল ২০২৪) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উক্ত সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল।


জাতীয়
মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক কাইয়ুম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন টাফ ঢাকা অঞ্চলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন,পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা স্বাধীনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ হোসেন। 

সমাবেশে গুমের বিরুদ্ধে গান গেয়ে শোনান মুক্তির মঞ্চের আহবায়ক হেমন্ত দাষ। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন অধিকার পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলান জাতীয় গণফ্রন্টের কামরুজ্জামান ফিরোজ।

সমাবেশে ফয়জুল হাকিম বলেন, ২০১৯ সালের এপ্রিল ঢাকার অদূরে কাঁচপুর থেকে মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন। তাঁর সন্ধান চেয়ে তাঁকে ফিরে পেতে তাঁর পরিবার সংগঠন থেকে পুলিশ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বত্র যোগাযোগ করা হয়। হাইকোর্টে রীট আবেদন করেও মাইকেল চাকমার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

মাইকেল চাকমার অপরাধ কি এই প্রশ্ন তুলে ফয়জুল হাকিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির উপর জাতিসত্তা জনগণের বংশপরম্পরাগত অধিকার প্রতিষ্ঠায়, জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক সংগ্রামে মাইকেল চাকমা ছিলেন একজন অঙ্গীকারবদ্ধ নেতৃত্ব। পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসত্তা জনগণের রাজনৈতিক উত্থানের লক্ষ্যে তাঁর নিবেদিত কার্যক্রমই শাসক শ্রেণীর দৃষ্টিতে বড় অপরাধ।

তিনি বলেন, মাইকেল চাকমার গুমের শিকার হওয়ার ঘটনা তাই সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কয়েক শত নেতা-কর্মীকে গুমের ঘটনা থেকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।


তিনি
আরও বলেন, গুম হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ। একদিন এই অপরাধের বিচার বাংলাদেশে হবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদের সংগ্রাম জোরদার করতে শ্রমিক কৃষক নিপীড়িত জাতি জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারাবাহিকভাবে জাতিসত্তার রাজনৈতিক সংগঠকদের হত্যা করে নেতৃত্ব শুন্য করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এর অংশ হিসেবে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বিপুল চাকমা, লিটন চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। এই হত্যার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসন হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। হত্যা সংঘটিত করে তাই  হত্যাকারীরা জনগণের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাইকেল চাকমাসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুস্থ দেহে তাদের  পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনা সরকার গুম করে, বিচার বহির্ভূত হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের যে পথ বেছে নিয়েছে তা প্রতিরোধ করতে হবে। জেলে আটক হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চাল ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণের জীবন আজ দুর্বিষহ। ঈদের আগে ৭০ ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিকরা গত মাসের মজুরী পায়নি। ৬০ শতাংশ কারখানায় ঈদের  বোনাস হয়নি। শ্রমিকদের ঈদ হাসিনা সরকার-ব্যবসায়ীরা কেড়ে নিয়েছে। এদের উচ্ছেদ করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মাইকেল চাকমা গুমের ৫বছর উপলক্ষে মুক্তি কাউন্সিলের আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন অমল ত্রিপুরা

সমাবেশে অমল
ত্রিপুরা বলেন, সমাবেশে অমল ত্রিপুরা বলেন, বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত দুর্বত্তদের অবশ্যই শাস্তি প্রদান করতে হবে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের না পেয়ে যৌথ অভিযানের নামে গতকাল পর্যন্ত নারীসহ ৫৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে বেআইনীভাবে গ্রেফতার করা হল, তা অন্যায় ও খুবই উদ্বেগের বিষয়। সাধারণ জনগণের এ ধরনের নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। 

তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদ বন, প্রকৃতি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বাধা প্রদানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে অলিখিত সেনাশাসন প্রত্যাহার করতে হবে।

সমাবেশ থেকে তিনি মাইকেল চাকমার সন্ধান, কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেঃ ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার ও বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধের দাবিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা মাধ্যমে পাহাড়ে সমস্যা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ফয়েজ হোসেন বলেনমাইকেল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তা জনগণের মুক্তি আন্দোলনের সংগ্রামের পাশাপাশি দেশের শ্রমিক কৃষক ছাত্র নারী মুক্তির সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমরা মাইকেল চাকমাসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুস্থ দেহে তাদের পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানান। 



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments