""

ঢাকায় “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা”র কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে চবিতে মশাল মিছিল


চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

ঢাকায় “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা”র পূর্ব ঘোষিত এনসিটিভি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন স্টুডেন্ট ফর সভেরেন্টি কর্তৃক লাঠি-স্ট্যাম্প দিয়ে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মশাল মিছিল করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

বুধবকার (১৫ জানুয়ারি ২০২৫) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মশাল মিছিলটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মশাল মিছিল পরবর্তী সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমার সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চবি সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর চবি আহ্বায়ক জশদ জাকির, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি) এর কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদল পাইয়ু মারমা, ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয় জ্যোতি চাকমা এবং ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ধন কিশোর ত্রিপুরা।


জশদ জাকির বলেন, ঢাকায় সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে এনসিটিবি উদ্দেশ্য গিয়েছিল কেন রক্তাক্ত জুলাইয়ের 'আদিবাসী' লেখা সম্বলিত গ্রাফিতি পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাতে। সেখানে তথাকথিত মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের সংগঠন "স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি" ছাত্রলীগের কায়দায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর হতাহত হন। হামলাকারীদের দেখলে মনে হয় না তারা সবাই শিক্ষার্থী। তারা সবাই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা সেটেলার বাঙালি গোষ্ঠী। তাদের পেছনে মদদ দিচ্ছে ঢাবি কেন্দ্রিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ।

ছাত্রনেতা পাইউ মারমা বলেন, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আদবাসীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অপপ্রচার করা হয়, অপমানসূচক কথা বলা হয়। আমরা আবারো স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নই। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আমরাও সম্পৃক্ত থাকতে চাই।

প্রিয় জ্যোতি চাকমা বলেন, গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চোখে পড়ার মতো কিছু সুন্দর গ্রাফিতি আমরা দেখেছি। সেখানে আমরা কল্পনাকে খুঁজে পেয়েছি, পেয়েছি আদিবাসীদেরও । যেখানে অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু আজকে মৌলবাদী গোষ্ঠী যারা হামলা করেছে তারা আদিবাসীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার করছে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য। কিন্তু ২৭ বছর পার হলেও এই চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবিলম্বে আজকের হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।


ধন কিশোর ত্রিপুরা বলেন, আমরা ২৪-এ আশাবাদী ছিলাম। আমরা ৭১-এও আশাবাদী ছিলাম। অনেক আদিবাসী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আমাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির জন্য, আমাদের অধিকারের জন্য। আমরা চেয়েছিলাম এ দেশ বহু ভাষা, বহু জাতির, বহু সংস্কৃতির দেশ হবে৷ কিন্তু বারবার আমাদের আশাহত হতে হয়েছে। বিভিন্ন লাইভে ও ছবিতে আমরা দেখেছি, আন্দোলনকারীদের হাতে ব্যানার ফেস্টুন ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। তাদের উপর স্টুডেন্ট অব সভেরেন্টির সন্ত্রাসীরা আওয়ামী কায়দায় লাঠি স্ট্যাম্প দিয়ে অমানবিকভাবে আঘাত করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ অনেকে গুরুত্বরভাবে আহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা এ হামলার বিচার চাই৷

সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, আমার ভাইয়ের রক্তে আজ ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে এবং আমার বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে সেটা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো বিচার হয়নি। সরকারের করা তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। তারই ধারবাহিকতায় আজকের ঘটনা হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে জড়িত পতিত হাসিনার রেখে যাওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা কখনো সমঅধিকার আন্দোলন, কখনো নাগরিক পরিষদ ও স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামক ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করছে। তাঁদের উস্কানিতে গত সেপ্টেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪ জন পাহাড়িকে খুন করা হয়েছে, শত শত বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ে নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশের ভিতরে ফিলিস্তিন-কাশ্মীর বানানো হয়েছে। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এবং এসমস্ত ভুঁইফোড় সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সারা দেশে সংখ্যাংলঘু জাতিসত্তার জনগণকে শান্তিতে থাকতে না দিলে আমরাও আপনাদের শান্তিতে থাকতে দিব না। শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি জনগণ নিজের অধিকারের জন্য কি করতে পারে সেটা তাঁরা জানে। সারা দেশ আশি-নব্বই দশকে দেখেছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে 'স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি' নামক প্রকাশ্য চিহ্নিত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-জনগণ বসে থাকবে না। পুরো পাহাড় অচল করে দেয়া হবে।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments